বঙ্গ-নিউজঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে তাগিদ দিয়েছেন সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও সচিবরা। ইসি’র সংলাপে অংশ নিয়ে তারা বলেছেন, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই সব দলকে নির্বাচনে আনতে হবে। এজন্য যদি ইসিকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে হয় তা করতে হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল না আসায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য রিটার্নিং অফিসার হিসেবে ইসি’র নিজস্ব কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইসিকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সিইসি কেএম নূরুল ?হুদার সভাপতিত্বে সাবেক কর্মকর্তা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইসির এ সংলাপ হয়। এতে সাবেক ?দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে ৭ জন নির্বাচন কমিশনারসহ ১৬ জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিবেশ মেনে নিয়েই সবাইকে নির্বাচনে আসতে হবে বলে মনে করেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, এবার যদি কেউ নির্বাচনে না আসে তাহলে মুশকিল আছে। এবার সব পার্টিকেই নির্বাচনে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। নির্বাচন কমিশনের এখন থেকে এক বছরের মধ্যে এমন কিছু করা যাবে না যাতে আস্থা নষ্ট হয়। কমিশনের প্রতি আস্থা তো হয়েই গেছে, এটাকে ধারণ করতে হবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনকে কার্যকরী করতে দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করতে হবে। এজন্য কমিশনের নিজেকেই অনেক শক্তিশালী করতে হবে। আমরা বলেছি, ভবিষ্যতে আপনাদের নির্বাচন করতে হলে নিজস্ব কর্মকর্তাদের থেকে বাছাই করে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে। আইন ও বিধিবিধানের পরিবর্তন ও সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন যেগুলো আছে এগুলোকে অভিজ্ঞতার আলোকে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত এবং তাদের এখতিয়ারের বাইরেরগুলো বাছাই করে করণীয় ঠিক করতে হবে। সীমানা পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সব দলের সঙ্গে কথা বলে সংবিধান পরিবর্তন করে সমাধান করতে হবে। এক্ষেত্রে সিট আরো বাড়ানোর বিষয় আসতে পারে। আসতে পারে শহরের সিটগুলো নির্ধারণ করে দেয়ার। সংসদ নির্বাচনের আগে যে সংলাপ হয় তাতে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের একার নয়। এখানে অনেক প্লেয়ার আছে। এখানে রাজনৈতিক দলেরও বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। কিছু দল গত নির্বাচন বয়কটের কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য এবার রাজনৈতিক দলের সজাগ থাকতে হবে। সবাই যেন নির্বাচন করে- সেই মনোবৃত্তি থাকতে হবে। বর্তমান সময়ের মধ্যে বিদ্যমান সংবিধানের বাইরে গিয়ে ভোট সম্ভব নয় মন্তব্য করে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার তো সংবিধান সংশোধনের বিষয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে হবে না এটার একটা সংশোধনী ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। এর পিঠাপিঠি এই টাইম ফ্রেমের মধ্যে যদি অন্য কিছু করতে হয়, তা পারা যাবে না। আর নির্বাচন কমিশন এটা করতে পারবে না। এটা রাজনৈতিক বিষয়। তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়টি আলাপই হয়নি। কারণ এখানে যারা এসেছেন তারা বুঝতে পেরেছেন এটা নিয়ে এখানে আলোচনা করে লাভ নেই। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েনে রাজনৈতিক দলের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থার মধ্যে এটা করতে হবে। বিচারবিভাগ এখন সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট এখন কেবল জুডিশিয়াল সার্ভিসের লোকজন হন। এখানে আর্মিকে ওই ক্ষমতা দেবেন কী করে। বিদ্যমান আইনে যেভাবে আছে তার বাইরে গিয়ে সেনা মোতায়েন করা যাবে না। আস্থার বিষয়টি কমিশনকে অর্জন করতে হবে। সব রাজনৈতিক দল যদি মনে করে মোটামুটি একটি ভালো নির্বাচন হবে তখন তারা নির্বাচনে আসবে। নিরাপত্তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে যেতে পারেন এবং ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন সেটা বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের মাধ্যমে করা সম্ভব। সাবেক কমিশনার ছহুল হোসাইন মনে করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি সংলাপ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ ইসি নিতে পারেন। তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে যে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে তা মিটিয়ে সবাইকে নির্বাচনে আনতে একটি উদ্যোগ কমিশন নিতে পারে। কারণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা তাদের দায়িত্ব। এই নির্বাচন করতে সবাইকে নিয়ে কথা বলতে পারে। তবে এই উদ্যোগ যে সফল হবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। এটা ফেল করলে কমিশনকে দায় দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, আমরা পরামর্শ দিয়েছি কমিশন যেন শক্তভাবে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তারা নিরপেক্ষ না থাকলে যতই উদ্যোগ নেয়া হোক তা কাজে লাগবে না। এজন্য যাদের নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োগ দেয়া হবে তাদের আগে থেকে সিলেক্ট করে মোটিভেট করতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সাবেক সিইসি আবদুর রউফ তার প্রস্তাবে স্থায়ী ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রতি ৫শ’ ভোটের জন্য একটি করে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলেন। এসব ভোটকেন্দ্র তিনি ভোটারদের মাধ্যমে পরিচালনার কথা বলেন, কথা হচ্ছে ভোটাররা ভোট দেবেন, ক্ষমতায় যারা নির্বাচিত হবেন তারা যাবেন। জনগণ হচ্ছে ভোটের মালিক, তারাই ভোট চালাবে। ভোটের দিন এসপিও থাকবে না, ডিসিও থাকবে না। তৃণমূল পর্যায় যদি ভোটাররা ভোট পরিচালনা করেন, তারাই যদি আইন-শৃঙ্খলার ভার নেন তাহলে কোনো সমস্যা থাকবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে আর নির্বাচন করা সম্ভব নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, আমাদের সময়ে (রকিব কমিশন) যে ভোট হয়েছে সেটা আমরা আর চাই না। কারণ আমাদের সময় আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। দেশের অনেক বড় দল নির্বাচনে অংশ নেইনি। শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা অনেক কঠিন সময়ে নির্বাচন করেছি, ওই সময়ের সঙ্গে এখনকার সময় মিলানো যাবে না। এখন সময় অনেক ভালো। আমি মনে করি সবার অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন ও সংবিধান যেটা আছে সেটাই যথেষ্ট। এর বড় কোনো পরিবর্তন দরকার আছে বলে মনে হয় না। কমিশনের মূল লক্ষ্য থাকবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা। যেহেতু সংলাপে সব দল অংশ নিয়েছে। আমি মনে করি, তারা নির্বাচনেও অংশ নেবে। এজন্য নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু করার বিষয়ে কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, একটি বড় দল নির্বাচনে না আসায় কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। এবার মনে হচ্ছে সবাই আসবে। কাজেই সেই ধরনের পরিস্থিতি এবার হবে বলে মনে হয় না। সূচনা বক্তব্যে নূরুল হুদা বলেন, গত প্রায় তিন মাস ধরে অনেক মূল্যবান কথা শুনেছি, অনেক ভারি ভারি কথা শুনেছি। আজ আপনাদের পেয়ে অনেকটা হালকা অনুভব করছি। কবিতা আওড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা ও উচ্ছ্বসিত সিইসি কবি গুরুর সোনারতরী কাব্যগ্রন্থের মানসুন্দরী কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি তুলে ধরেন। সাবেক সিইসি, নির্বাচন কমিশনারদের পেয়ে তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা জানান নূরুল হুদা। তিনি বলেন, আজ বিচিত্র অভিজ্ঞতার গল্প শুনতে চাই। গল্প পরামর্শ আকারে গ্রহণ করবো। যত্ন সহকারে তা সংরক্ষণ করবো, তা প্রয়োগ করবো। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, সাবেক সচিব আবদুল করিম, মনজুর হোসেন, হুমায়ুন কবীরসহ সাবেক স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ ও মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা সংলাপে অংশ নেন। একাদশ জাতীয় সংসদের রোডম্যাপের অংশ হিসেবে ইসির এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নারী সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ৭:৫৪:৫৬ ৭১৮ বার পঠিত #Bangla News 24 and rest of all continuously updated Ban #Bangla Newspaper | List of all Online Bangladeshi Newsp #Barisal #BD News 24 #Chittagong #Comilla. CHITTAGONG DHAKA SYLHET BARISAL KHULNA RAJSHA #Khulna #Rajshahi #Rangpur #Sylhet