বঙ্গ-নিউজঃ আর নামমাত্র ভাতা নয়, এবার থেকে বেতন পাবেন দেশের ১৮ হাজার নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা। এই প্রথম তাদের সরকারি বেতন কাঠামোর আওতায় আনার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। বর্তমানে সরকারি কোনো বেতন পান না তারা। তবে ভাতা হিসেবে পান মাসে দুই হাজার ৩০০ টাকা। তাও আবার তিন মাস পরপর তারা এই ভাতা পেয়ে থাকেন।
২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও যুগোপযোগী ও কর্মমুখী করে গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উদ্যোগ বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে প্রয়োজনে আরও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা স্থাপন ও মঞ্জুরি, শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (মাদ্রাসা) আহ্বায়ক করে গত ৪ অক্টোবর ১১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রাথমিক পর্যায়ে বেতন-ভাতা নির্ধারণের বিষয়ে সুপারিশ করবে। নীতিমালা
চূড়ান্ত হলে এই শিক্ষকরা দাখিল মাদ্রাসায় সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সমান বেতন পাবেন। পর্যায়ক্রমে এগুলো জাতীয়করণ বিবেচনার জন্যও সুপারিশ থাকবে চূড়ান্ত নীতিমালায়। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) রওনক মাহমুদ বলেন, ‘২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে একটি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে সরকার শক্তিশালী কমিটি গঠন করেছে। সরকার নিশ্চয়ই শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে। তবে চূড়ান্ত নীতিমালায় কী কী থাকবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না।’
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের একই পরিপত্র অনুযায়ী নিবন্ধিত হয় বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমমানের নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা। শুরু থেকেই মাত্র ৫০০ টাকা করে ভাতা পাওয়া এসব প্রতিষ্ঠানের
শিক্ষকরা খুবই কষ্টে ছিলেন। অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল চালু হলে ২০১৬ সালে এই শিক্ষকদের ভাতা ২৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি হলেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা এই অন্তর্ভুক্তির বাইরেই রয়েছেন। শুধু তাই নয়, একই শিক্ষা ব্যবস্থায় দাখিল মাদ্রাসায় সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা ৯ হাজার ৯১৮ টাকা বেতন পেলেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাত্র আড়াই হাজার টাকা। সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন মাত্র দুই হাজার ৩০০ টাকা।
এ বৈষম্য দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে হাইকোর্ট নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের সাড়ে আট মাস পর মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ বঞ্চিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন-কাঠামোর আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়।
১৯৮৪ সালে সারাদেশের ১৮ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে নিবন্ধন দেয় সরকার। এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে এক হাজার ৫১৯টি মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। এই মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের প্রথমবারের মতো মাসিক ৫০০ টাকা করে অনুদান বা ভাতা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে তা বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে মহার্ঘ্য ভাতা হিসেবে ২৫০ টাকা বাড়িয়ে মোট এক হাজার ২৫০ টাকা দেওয়া হয়। বর্তমানে তা ২৩০০ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৬ সালে অনুদান বাড়িয়ে এমপিওভুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের দুই হাজার ৩০০ টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, ১৯৯৪ সালের একই পরিপত্র অনুযায়ী নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমমানের নিবন্ধিত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা ৫০০ টাকা করে ভাতা পেতেন। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুল সরকারি হয়। কিন্তু স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাকে সরকারি করা হয়নি। এসব মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য নামমাত্র অনুদান দেওয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি করার পর থেকে জাতীয় স্কেলে বেতন দাবি করছেন ইবতেদায়ি শিক্ষকরা।
মন্ত্রণালয় ও সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক সমমানের প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকরা যেখানে মাত্র এক হাজার ২০০ টাকা অনুদান পান, সেখানে দাখিল মাদ্রাসার সঙ্গে সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরা বেতন পান ৯ হাজার ৯১৮ টাকা। এই বৈষম্য দূর করতে গত বছরের ৭ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার শহীদুল্লাহ বালিকা ইবতেদায়ি মাদ্রাসার চার শিক্ষক। সেখানে প্রতিকার না পেয়ে হাইকোর্টে যান তারা। এ বিষয়ে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিলেও মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ না নেওয়ায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তারা। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানিতে আদালত বৈষম্য দূর করতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেওয়া আবেদন নিষ্পত্তি করতে বলেন আদালত।
শিক্ষক নেতা কাজী রুহুল আমিন চৌধুরী জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনার পরও মন্ত্রণালয় এখনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বঞ্চিত এ শিক্ষকরা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৩৭:৫৭ ৬৬০ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News