বঙ্গ-নিউজঃ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় যখন বৃষ্টি নামে তখন রাজধানীবাসীদের অনেকে মনে করেছিলেন হেমন্তের ঝিরিঝিরি বর্ষণ কিছুক্ষণের। বড় জোর কয়েক ঘণ্টার। কিন্তু প্রকৃতি তা নির্ধারণ করেছে ঠিক উল্টো। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বর্ষণে ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পথঘাট। নদীর পানি ফুলে উঠেছে। লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রেন ও বাস চলাচলের নির্ধারিত সময়সূচি ভেঙে পড়েছে। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অনেক আন্তঃজেলা বাস চলাচল করেনি। বৃষ্টির পানি ও ড্রেনের পানি মিশে একাকার। টানা বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার শুধু ঢাকায় অন্তত ১৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ময়মনসিংহে ১৪৫, রাজশাহীতে ৯২, রংপুরে ৮৫, খুলনায় ১৬৩ এবং বরিশালে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আজ রবিবার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টিপাত কমতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে।
টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকাবাসী। নগরের অনেক এলাকায় জমেছে কয়েট ফুট পানি। রাস্তায় নেমে অনেক প্রাইভেটকার ও গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ঢাকার অনেক সড়কে নেমেছে নৌকা। স্কুল-কলেজে যেতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থী।
‘দুর্বিষহ দিনের’ কথা
বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় গত দুই দিন নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভেস্তে যায়। বিশেষ করে গতকাল শনিবারে সিংহভাগ বেসরকারি অফিস খোলা থাকায় দিনটিকে ‘দুর্বিষহ’ হিসেবেই বর্ণনা করেন নানা শ্রেণি-পেশার লোক। রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা ও কাওরান বাজারে একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, সকালে হাঁটুজল ভেঙে অনেকখানি হেঁটেও বাস পাইনি। দুই দফা রিকশায় চড়ে ভিজে অফিস করেছি। কাকরাইলের বাসিন্দা শফিকুর রহমান তার মতিঝিলের অফিসে যেতে দীর্ঘ অপেক্ষার পর বাস পেয়েছেন ঠিকই তবে গাড়িতে উঠার আগে ও নামার পরে হাঁটু পানি ভেঙে কাপড় নষ্ট করতে হয়েছে। গ্রীনরোডে বাসা থেকে বেরিয়ে কোমরসমান পানি হেঁটে বাজারে গেছেন ব্যাংকার হিমেল ভূঁইয়া। আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা পারভিন আক্তার তার ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে রিকশা উল্টে পড়ে যান।
রাজধানীর খিলগাঁও, মগবাজার, লালমাটিয়া, কাজীপাড়া, গুলিস্তান, মতিঝিল, বংশাল, তেজগাঁওসহ প্রায় সব এলাকাতেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। কোথা হাঁটুজল, আর কোথাও কোমরসমান পানি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও মিরপুর ১০ নম্বরের দিকে রাস্তায় নৌকা চলাচল করতে দেখা যায়। যে এলাকায় মাটি খোঁড়াখুঁড়ি বেশি সেই এলাকায় জলজটও বেশি।
লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত
বৃষ্টি কিংবা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ে থমকে যায় জনজীবন। বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার পুড়ে যায় এবং বিতরণ তার ছিঁড়ে যায়। পল্লবী এবং মিরপুর এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুত্ ছিল না। ঢাকা মহানগরের বাইরে কেরানীগঞ্জে শুক্রবার দুপুর থেকে গতকাল রাতেও বিদ্যুত্ ছিল না। কমলাপুর ও মতিঝিলসহ অনেক এলাকায় দফায় দফায় লোডশেডিং হয়।
নৌ চলাচল বন্ধ
গতকাল সকাল ৯টায় ঢাকা সদরঘাট থেকে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করা হয়। দুপুর আড়াইটা থেকে সব ধরণের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষনা করে অভ্যন্তরীন নৌ-চলাচল কর্তৃপক্ষ। এরফলে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানীর যোগাযোগ। সমুদ্রবন্দরগুলোতেও তিন নম্বর বিপদসংকেত জারি করা হয়েছে।
গণপরিবহন সংকট
বৃষ্টির কারণে গতকাল সকাল থেকেই রাস্তায় বাস চলাচল ছিল কম। তাই জরুরি কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে মানুষজন পড়েন বিপাকে। সিএনজি চলাচলও ছিল কম। ‘উবার’, ‘পাঠাও’, ‘আমার রাইড’সহ ডিজিটাল পরিবহন সুবিধা নিয়ে আসা সেবাগুলো থেকেও সেবা পাননি অধিকাংশ পথিক। কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা চড়ে গন্তব্যে যান যাত্রীরা।
আন্তঃজেলা বাস চলাচল ব্যাহত
এদিকে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার অনেক বাসও নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যেতে পারেনি। আবার অনেক বাস ঢাকার বাইরে থেকে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারেনি। টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের অনেকখানি এলাকায় যানজট তৈরি হয়। গতকাল দুপুর ১টার দিকে গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে রাজশাহীগামী বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা রেজাউল করিম বলেন, দুপুর ১২টায় তার বাস ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি এখনও টার্মিনালে আসেনি।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলও ব্যাহত হয়। কয়েকটি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাতিল করে সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ০:১২:৫৩ ৭৩৮ বার পঠিত #Bangla News 24 and rest of all continuously updated Ban #Bangla Newspaper | List of all Online Bangladeshi Newsp #Barisal #BD News 24 #Chittagong #Comilla. CHITTAGONG DHAKA SYLHET BARISAL KHULNA RAJSHA #Khulna #Rajshahi #Rangpur #Sylhet