সহায়ক সরকারসহ ইসিতে বিএনপির ২০ প্রস্তাব

Home Page » আজকের সকল পত্রিকা » সহায়ক সরকারসহ ইসিতে বিএনপির ২০ প্রস্তাব
সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৭



ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজঃ তফসিল ঘোষণার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময় বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনা মোতায়েন, ২০০৮ সালের আগের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বহাল, ইভিএম-ডিভিএম পদ্ধতি চালু না করা, ওয়ান ইলেভেন থেকে শুরু করে বর্তমান সরকার কর্তৃক দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহারসহ ২০ দফা সুপারিশ করেছে দলটি। রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, তরিকুল ইসলাম, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব এএসএম আবদুল হালিম, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আবদুর রশীদ সরকার ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। আড়াই ঘণ্টার সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করতে চায়, নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ বা রোডম্যাপ বা পথনকশা নিছক কালক্ষেপণ বা লোক দেখানো কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে না। এ সংলাপ যেন প্রহসনে পরিণত না হয় তা কমিশনকেই নিশ্চিত করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা, দক্ষতা ও নির্ভীক পদক্ষেপ পুরো জাতি প্রত্যাশা করে। জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিএনপি ইসিকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে চায়। এজন্য ইসিকে সময় সময় গঠনমূলক সুপারিশ ও পরামর্শ দেয়ার কথাও জানান তিনি। সংলাপে বিএনপি সন্তুষ্ট কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির মহাসচিব বলেন, বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের যে একটা প্রচণ্ড রকমের অগণতান্ত্রিক আচরণ, সেখানে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে আমরা মনে করি না। আশার যাত্রাটা শুরু হলো কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে মির্জা আলমগীর বলেন, কিছুটা তো বটেই। আমরা কিছুটা আশাবাদী তো বটেই। সংলাপে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি ও নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ধারণা নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার আদর্শে বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান অকার্যকর ও অপরিপক্ক সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এখন থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল রাজনৈতিক দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। সভা-সমাবেশ করার জন্য সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। বিএনপির দেয়া প্রস্তাব সম্পর্কে মির্জা আলমগীর বলেন, আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। তারা (ইসি) অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে শুনেছেন। তারা বলেছেন, চেষ্টা করবেন। ভবিষ্যতে যাতে একটা সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারেন তার জন্য তাদের ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন। ইসি এটাও বলেছে যে, আপনাদের (বিএনপি) প্রস্তাবগুলো আমাদের কাছে অত্যন্ত উপযোগী ও সুচিন্তিত মনে হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইসি মনে করে যে, প্রস্তাবগুলো তাদের ভবিষ্যতের কাজের জন্য সুবিধা হবে। আড়াই ঘণ্টা সংলাপের উপলব্ধি কী?- জানতে চাইলে মির্জা আলমগীর বলেন, তারা (ইসি) বলেছেন- তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এ কথা তারা স্বীকার করেছেন যে, দেশে বর্তমানে সেই অবস্থা নেই; যে তারা তাদের দায়িত্ব পুরো পালন করতে পারেন। তারা এটাও বলেছেন যে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়- গণতন্ত্রের যে আসল রূপ সেই রূপ বাংলাদেশে নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য কী ছিল?- এমন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা আলমগীর বলেন, তারা (ইসি) বলেছেন- তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে তারা চেষ্টা করবেন। নিজেরা বসবেন। বসে দেখবেন- কী করতে পারেন। রাজনৈতিক দলের সংলাপে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ইসি যাবে না বলে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিল সে ব্যাপারে তাদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে কিছু বলেছেন কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব সংক্ষিপ্ত উত্তরে বলেন, ‘না’। আজকে তারা এ নিয়ে কথা বলেননি। তারা বলেছেন, নিজেরা বসবেন এবং আলাপ করে দেখবেন তাদের কী কী সুযোগ আছে। সেই সুযোগগুলো তারা ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।

বিএনপির প্রস্তাব: ২০ দফা প্রস্তাবে বিএনপি বলেছে- নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান অকার্যকর ও অপরিপক্ষ সংসদে ভেঙে দিতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের সরকার কর্তৃক দলের চেয়ারপারসনসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, বর্তমান সরকারের আমলে দায়েরকৃত সকল ফরমায়েশী মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ গুম-খুন-হয়রানি ও ভীতি সঞ্চার বন্ধ করতে হবে। এখন থেকে সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ সকল স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কার্যকর সংলাপ অনুষ্ঠানে ইসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনের ৭ দিন আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রসহ নির্বাচনী আসনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন করতে হবে। আরপিও’তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আরপিও’র নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন-বিধি-বিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। লিখিত প্রস্তাবে বিএনপি আরও বলেছে- ২০০৮ সালের আগের নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্বহাল করতে হবে। প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। নির্বাচনের ৬ মাস আগে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নির্বাচনের পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ফলাফল গেজেটে প্রকাশের তারিখ পর্যন্ত সময়কালকে ‘নির্বাচনপূর্ব সময়’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে সংশ্লিষ্ট বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা এককভাবে কোনো কমিশনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন না। নির্বাচনের আগে সকল মেট্রোপলিটন কমিশনার, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি পরিবর্তন বা প্রত্যাহার করতে হবে। রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রবাসী বাংলাদেশি ও কারাবন্দিদের ভোটার তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং মৃতব্যক্তিদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগে স্বচ্ছ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে বর্তমান বিধানের সঙ্গে ‘নির্বাচন কমিশন’ এবং ‘অনলাইনে’ দাখিলের বিধান প্রবর্তন, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জামানত হিসেবে ‘নগদ বা ক্যাশ’ অর্থ জমাদানের বিধান বাতিল করতে হবে। ভোটগ্রহণ শেষে সকল পোলিং এজেন্টের উপস্থিতিতে ভোট গণনা করতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক ভোট গণনার স্বাক্ষরিত বিবরণী উপস্থিত প্রত্যেক এজেন্টকে প্রদান না করে ভোট কেন্দ্র ত্যাগ করতে পারবে না। রির্টানিং অফিসার ভোটগ্রহণের দিনই কেন্দ্রভিত্তিক প্রাপ্ত ফলাফল একত্রীকরণ করে প্রার্থীদের কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করবেন। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে বিজয়ী প্রার্থীদের গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পর সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সভা-সমাবেশ-পথসভার অনুমতি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে ন্যস্ত করতে হবে। রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচনের মেয়াদপূর্তিও পূর্ববর্তী ১২ মাসের মধ্যে কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রদান বা দরখাস্ত আহ্বান করতে পারবে না। আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনী ও অনৈর্ব্যক্তিকভাবে মোতায়েনের জন্য রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে মহানগর ও জেলায় একটি করে কমিটি গঠন করতে হবে। ছবিসহ অভিন্ন ভোটার তালিকা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্টদের সরবারহ করতে হবে। দল বা প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণের সহায়তা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। বিএনপি তাদের প্রস্তাবে আরও বলেছে- দেশীয় পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষণ সংস্থার নিবন্ধন ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অধিকসংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে উৎসাহিত করতে হবে। বন্ধ ঘোষিত গণমাধ্যম চালু, গণমাধ্যমে সব দল ও প্রার্থীর প্রচারণায় সমতাভিত্তিক সুযোগ দিতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, আইসিটি অ্যাক্টের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে। নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক চালু রাখার পাশাপাশি মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টারসেপ্ট করতে পারে এমন সংস্থাগুলো হতে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণ করে সেখানে নিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশি শক্তির ব্যবহার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে রোববার সকালে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৩৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে ইসি। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর এই প্রথম নির্বাচন কমিশনে সংলাপের অংশ নিতে আসে বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ওই সময়ে দলের তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের (প্রয়াত) নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শেরেবাংলানগরে নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে পরামর্শ পেতে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে শুরু হয় নির্বাচন কমিশন। এর ১৬ ও ১৭ই আগস্ট গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪শে আগস্ট থেকে শুরু হয় নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ। এই পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সংলাপ করেছে। আগামী ১৮ই অক্টোবর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করবে নির্বাচন কমিশন।
সিইসির মুখে বিএনপির প্রশংসা
সংলাপের সূচনা বক্তব্যে বিএনপির অকৃপণ প্রশংসা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার ব্যাপারে তার এ প্রশংসা ছিল অনেকটাই খোলামেলা। বিএনপির সঙ্গে সংলাপেই ‘সবচেয়ে বেশি লাভবান’ হওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। অন্যদিকে সিইসির মুখে এসব প্রশংসাকে ইতিহাসের সত্য উচ্চারণ হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি। দলটির প্রতিনিধি হিসেবে সংলাপে অংশ নেয়া নেতারা বলছেন, সিইসি সত্য কথাগুলো অকৃপণভাবেই বলেছেন, বাড়িয়ে কিছু বলেননি। আমরা ঠিক প্রশংসা নয়, তার কথাগুলোকে সত্য উচ্চারণ হিসেবেই নিয়েছি। নির্বাচন কমিশনের আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে সিইসির বক্তব্যে বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যাবে। সিইসির বক্তব্যে তারা একটি পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষণ হিসেবে দেখলেও এখনই কোনো সমাপ্তি রেখা টানতে রাজি নন।
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের ধারাবাহিকতায় কাল অংশ নেয় বিএনপি। সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সিইসি কে এম নূরুল হুদা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রশংসা করে বলেন, ব্যক্তি হিসেবে এবং দলনেতা হিসেবে জিয়াউর রহমান ছয় বছর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত দিয়েই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিএনপির ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ৩০ই মে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি প্রায় নয় বছর আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়েছে। পরে ১৯৯১ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। বিগত দিনে বিএনপি সরকারের নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে সিইসি বলেন, বিএনপি সরকার দেশে বহুবিধ উন্নয়ন করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে- প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলককরণ, পৃথক প্রাথমিক গণশিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষা, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গঠন, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠা, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, আইন কমিশন গঠন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছরে উন্নীতকরণসহ অনেক উন্নয়ন ও সংস্কারমূলক কার্যক্রম বিএনপি সরকার করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে বিএনপি সরকার দেশে ‘প্রকৃত নতুন ধারার’ প্রবর্তন করেছে। সংলাপে অংশ নেয়া বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আজকের সংলাপে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের অনেকেই সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মহান জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে সংসদ পরিচালনা করেছেন। মন্ত্রী থাকাকালে আপনাদের অনেকের অধীনে আমি চাকরি করার সুযোগ পেয়েছি। অনেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার ভূমিকা রেখেছেন। সফল রাষ্ট্রপরিচালনার সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের আজকের সংলাপের দিকে জাতি তাকিয়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন অধীর আগ্রহ ও অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে, অতি ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করছে। কমিশন বিএনপির সঙ্গে সফল সংলাপ প্রত্যাশা করে এবং বিএনপির সঙ্গে সংলাপেই ‘সবচেয়ে বেশি লাভবান’ হওয়া যাবে বলে মনে করে। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে যুগ্ম সচিব থাকাকালে বর্তমান সিইসি কে এম নূরুল হুদা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। পরে আদালতের রায়ে সচিব হিসেবে অবসরে যান তিনি। কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি হিসেবে নিয়োগ নিয়ে এতদিন সমালোচনা করে এসেছে বিএনপি। এদিকে সংলাপে সিইসির মুখে বিএনপির প্রশংসা নিয়ে নেতারা এখনই কনক্লুশন টানতে চাইছেন না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সংলাপের শুরুতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। তিনি সত্য কথাগুলো বলেছেন, বাড়িয়ে কিছু বলেননি। তবে এটুকুই বলবো, তিনি সত্য কথাগুলো অকৃপণভাবেই বলেছেন। নিরপেক্ষভাবে বলেছেন। আমরা ঠিক প্রশংসা নয়, তার কথাগুলোকে সত্য উচ্চারণ হিসেবেই নিয়েছি। তিনি বলেন, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, আমরা সার্বজনীন অবস্থান থেকেই প্রস্তাবগুলো দিয়েছি। আমাদের প্রস্তাবগুলো অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। সিইসি নিজেও আমাদের প্রস্তাবগুলোকে সুচিন্তিত বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু এসব প্রস্তাব গ্রহণের জন্য যে পরিবেশের দরকার আগে সেটার প্রয়োজন। নইলে নির্বাচন কমিশন তো কিছুই করতে পারবে না। বিএনপির নীতি নির্ধারক ফোরামের জ্যেষ্ঠ এ সদস্য বলেন, আমাদের প্রস্তাবের মধ্যে যেগুলো ইসির এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে সেগুলোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকার করেছে। আমাদের আশ্বস্ত করেছে ইসি। এখন সিইসির এসব বক্তব্যের আন্তরিকতা প্রমাণ হবে তার আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকার পরিচালনা নিয়ে সেসব কথা বলেছেন সবই ইতিহাসের অংশ। তারা ইতিহাসের সত্য কথাই বলেছেন, বাড়িয়ে বলেননি; বরং অনেক কিছু বলেননি। এটা একটা পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষণ বলা যেতে পারে। আমাদের মনে হয়েছে, তাদের (নির্বাচন কমিশন) সাধ আছে সাধ্য নেই। তাদের যে ইচ্ছা আছে সেটা নিয়ে আমাদের সন্দেহ নেই। কিন্তু এখানে আমাদের কনক্লুশন (সমাপ্তি) টানা ঠিক হবে না। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ক্ষমতাসীন দল সরকারি টাকা খরচ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে কিন্তু আমাদের ঘরোয়া মিটিংও করতে দিচ্ছে না। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের একটা ভূমিকা থাকতে হবে। আমরা আশা করবো তারা সে উদ্যোগ নেবে। সংবিধানে এ ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। আমরা বলেছি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার হলে আমরা কমিশনকে সহযোগিতা করবো। কিন্তু এতকিছুর পরও যদি দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয় তাহলে তো নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকাই থাকবে না। আমরা আশাবাদী এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এখন সবকিছুই নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের উপর। বিএনপি হতাশাবাদী দল নয় উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশন অনেক সুন্দর কথা বলেছেন। তার কথার মধ্যে কেবল- ‘আমার তো লিমিটেশন আছে’ বাক্যটি ছাড়া সব কথাই ভালো। এখন তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়েই প্রমাণ হবে সবকিছু। তবে বিএনপি হতাশাবাদী দল নয়। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বেশি প্রশংসা ভালো নয়। আপাতত এর চেয়ে কিছু বলতে পারবো না। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সংলাপে নির্বাচন কমিশনাররা আমাদের বক্তব্যগুলো ধৈর্য্য সহকারে শুনেছেন। প্রস্তাবগুলো নিয়ে তারা আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রস্তাবের মধ্যে তাদের যেসব বিষয়ে করণীয় আছে সেগুলো দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তারা যে আন্তরিক সেটা বারবার পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে এতদিন পর্যন্ত আমরা ইতিবাচক কোনো কিছুই পাইনি। এখন ইসির আগামীদিনের কর্মকাণ্ডেই সিইসির এসব ইতিবাচক বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ৭:১৫:২৪   ৩৯৫ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আজকের সকল পত্রিকা’র আরও খবর


নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন হাজী মোহাম্মদ হারিজ খান
সেরে উঠলেন ক্যানসার রোগীরা
আশুলিয়ায় খুশবু রেস্তোরাঁ উদ্বোধন
ধর্মপাশায় ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শিক্ষকদের কর্মসূচী
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে কৃষি পণ্য সরবরাহ
বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের প্রতি দায়িত্ব পালনে কূটনীতিকদের আন্তরিক হতে হবে: শেখ হাসিনা
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন
শেখ রাসেলের ৫৮ তম জন্ম বার্ষিকী ও জাতীয় ইদুর নিধন

আর্কাইভ