বঙ্গ-নিউজঃ রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই সরব ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী এমপি। ১৪ অক্টোবর বৃটেনের লেবার লিস্ট নামের ওয়েব সাইটে ‘ব্রিটিশ এমপি’স মাস্ট পাইল মোর প্রেশার অন বার্মা টু ইন্ড দ্য শেমফুল ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট রোহিঙ্গা’ শিরোনামে দীর্ঘ একটি নিবন্ধ লিখেছেন।
এতে রুশনারা আলী বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিস মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের দুর্ভোগ নিয়ে সর্বশেষ রিপোর্ট পড়তে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হয়। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা ছিল সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত ও সিস্টেমেটিক। এসব সহিংসতা ঘটিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তাদের উদ্দেশ্য শুধু মিয়ানমারের জনগণকে তাড়িয়ে দেয়া নয়, একই সঙ্গে তাদের বাড়িঘরে ফেরা প্রতিরোধ করা।
২৫ আগস্ট সরকারি বাহিনীর ওপর হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। তারপর থেকে কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়েছে। সেনাবাহিনী আরসার হামলার জবাবে যে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ চালিয়েছে তা তো অনেক আগে থেকেই চালিয়ে আসছিল সেনাবাহিনী।
২০১৩ সালে আমি ওই দেশটি সফরে যাই সেখানে আমি দেখেছি ভয়াবহতা, যার জন্য এ সম্প্রদায়কে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। নারীদের ধর্ষণের, পরিবারের শিশু ও পুরুষ সদস্যদের হত্যার গা শিউরে ওঠার মতো কাহিনী শুনেছি।
২০১২ সালে ওই সহিংসতা সৃষ্টির পর রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবস্থা নাটকীয়ভাবে আরো খারাপ থেকে খারাপ হতে থাকে। গত বছর অক্টোবরে ৯ জন সীমান্তরক্ষীকে হত্যা করার পর ওই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় আবারো ভয়াবহ নৃশংস হামলার শিকারে পরিণত হয়েছে।
এ বছর আবার যখন আমি রাখাইন সফরে গেলাম, এবারও সেই একই দুর্বিষহ পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করলাম। প্রত্যক্ষ করলাম তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার কারণ কী।
কয়েক মাস আগে রাখাইনে আরেক দফা হামলা হয় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। তখন বৃটিশ এমপিরা ও হাউজ অব লর্ডসের সদস্যরা আগস্টে আরো সহিংসতার বিষয়ে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর রিপোর্টের বিষয়ে দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দেয়। ৬ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনকে কমপক্ষে ১৭০ জন সাংসদের স্বাক্ষর করা একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ সহিংসতার নিন্দা জানানো হয় এবং বৃটিশ সরকারের জরুরি ভিত্তিতে দুটি করণীয় জোর দিয়ে তুলে ধরা হয়।
এর প্রথমটি ছিল, রোহিঙ্গা সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক সামরিক হামলা বন্ধে যতটা সম্ভব তা করবেন বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এটা করতে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছিলাম মিয়ানমারের সেনা নেতাদের বিরুদ্ধে আরো চাপ সৃষ্টি করতে। অং সান সুচি রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি দাঁড়িয়েছেন সেনাবাহিনীর পক্ষে। এটা গভীর হতাশাজনক।
মিয়ানমারে ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর নেতাদের ওপর তাই অধিকার চাপ সৃষ্টি করতে হবে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন্স’ বন্ধ করতে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ঘোষণা দিয়েছেন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বৃটিশ সেনাবাহিনী যে প্রশিক্ষণ দেয় তা অবিলম্বে স্থগিত হবে। তিনি যথার্থই এ ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়।
রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ, নিষ্পেষণ বন্ধে মিয়ানমারের বেসামরিক ও সামরিক সরকারের ওপর তাই সমন্বিতভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতেই হবে। চাপ সৃষ্টি করতে হবে যেন মিয়ানমারের ভেতরে থাকা রোহিঙ্গাদের ও পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে। যেসব রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছেন তাদের জরুরি মানবিক চাহিদার দিকে জরুরি ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তা করতে মিয়ানমার সরকারকে অব্যাহতভাবে চাপে রাখতে হবে বৃটিশ পার্লামেন্ট থেকে। কয়েক সপ্তাহ আগে জাতিসংঘ বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী জাতি নিধন অভিযান চালাচ্ছে। এই হতাশাজনক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবিক সংকট সমাধানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও অং সান সুচির ওপর অব্যাহতভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৫:৩৮ ৪৬১ বার পঠিত