বঙ্গ-নিউজঃ দুই হাতে ছুরি নিয়ে ক্রমাগত নিজেকে আঘাত করে চলেছেন। গলার এক পাশ থেকে ঝরছে রক্ত। কেউ বুঝিয়ে ছোট্ট সেই খুপরি থেকে তাঁকে বার করতে গেলেই হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা ছুড়ে মারছেন। না হলে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করছেন।
শ্যামপুকুর থানা এলাকার ১০৮ শ্যামবাজার স্ট্রিটের একটি ঘর থেকে এ হেন মানসিক অবস্থায় সোমনাথ দে ওরফে চিঙ্কা (৩০) নামে এক যুবককে উদ্ধার করতে কলকাতা পুলিশের সময় লাগল প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা! সেই উদ্ধার কাজেও ব্যবহার করতে হল কাঁদানে শেল! কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এক জন মানসিক রোগীকে বুঝিয়ে নামিয়ে আনার জন্য এত ক্ষণ ধরে চেষ্টা করে কাঁদানে শেল না ফাটিয়ে কোনও মনোবিদের সাহায্য নেওয়া হল না কেন? এ বিষয়ে ডিভিশনাল অফিসার শুভঙ্কর সিংহ সরকার কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ওই যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’
কী হয়েছিল এ দিন?
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ শ্যামপুকুর থানায় খবর আসে এক যুবক পড়শি এক যুবকের সঙ্গে কথা বলতে বলতে রেগে গিয়ে তাঁর বুকের এক পাশে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। সাধন চুনানি (৩৮) ওরফে সাধু নামের সেই যুবককে উদ্ধার করতে এলে স্থানীয়দের
দিকে প্রথমে ছুরি নিয়ে এগিয়ে যান চিঙ্কা। পরে নিজের বাড়ির দোতলার ঘুপচি ঘরে উঠে নিজেকে আঘাত করতে শুরু করেন তিনি। ছুরি দিয়ে নিজের গলা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করতে দেখে স্থানীয় লোকজন তাঁকে সেখান থেকে নামিয়ে আনতে যান। বিজয় সাউ নামে আর এক পড়শিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন তিনি। তাঁর পায়ে ছুরি ঢুকে রক্ত ঝরতে শুরু করে।
পড়শিরা জানিয়েছেন, সোমনাথের দাদা ও ভাই বিবাহিত হলেও সোমনাথের বিয়ে হয়নি। আগে তিনি মাছের ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন কিছুই করেন না। মানসিক অসুস্থতার কারণেই তিনি আর কোনও কাজ করতে পারেন না বলে পড়শিরা জানিয়েছেন। বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গেই থাকেন তিনি। কিন্তু গত মঙ্গলবার দাদা ও ভাই তাঁদের পরিবার ও মাকে নিয়ে সিমলা বেড়াতে গিয়েছেন।
এ দিনের ঘটনার পরে স্থানীয়েরা প্রথমে সোমনাথের বাবাকে ডাকেন। কিন্তু তাঁর কথাও শুনতে রাজি হননি যুবক। উল্টে নিজেকে ও অন্যদের আঘাত করতে এগিয়ে যান। বেগতিক দেখে আর দেরি না করে খবর যায় থানায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন শ্যামপুকুর থানার ওসি। আসে দমকল। পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। আরও পরে খোদ ডিভিশনাল অফিসার শুভঙ্কর সিংহ সরকারও যান সেখানে।
প্রথমে ওই যুবকের কাছের বন্ধুরা বোঝানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ, দমকলও বারবার কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনও কথাই শুনতে রাজি হননি ওই যুবক। উল্টে পুলিশকে লক্ষ্য করেও টালির ভাঙা টুকরো, বাল্ব ছুড়তে থাকেন তিনি। তাতে যাতে আহত হন প্রশান্ত দে নামে শ্যামপুকুর থানার এক এস আই। তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে।
শেষে পুলিশ ও বন্ধুরা মিলে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভিডিও কল করিয়ে কথা বলানোরও চেষ্টা করেন বন্ধু ও পড়শিরা। কিন্তু লাভ হয় না।
এর পর বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ দমকলের ছোট গাড়ি এনে প্রথমে জল দিয়ে ওই যুবককে নিরস্ত্র করে নামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু লাভ হয় না। সব চেষ্টা ব্যর্থ দেখে বিকেল ৫টা ১০ নাগাদ ছোট্ট ঘরটি লক্ষ্য করে কাঁদানে শেল ফাটায় পুলিশ। সেই শেলের গ্যাসেই অবশেষে কাজ হয়। চোখ-মুখ জ্বালা করতে থাকায় নিজেই মই দিয়ে নেমে আসেন সোমনাথ। নেমেই ফের ছুটে ঢুকে পড়েন অন্য একটি ঘরে। কিন্তু গ্যাসের গন্ধে কাবু হয়ে গিয়ে আর নিজেকে ঘর-বন্ধ করতে পারেননি তিনি। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন এ ধরনের অস্বাভাবিক ব্যবহার করলেও এর আগে কোনও দিনই সোমনাথের মধ্যে এতটা অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি কারও। তবে পড়শিরা জানিয়েছেন, খুব বেশি কথা বলত না। তিনি চুপচাপ থাকতেন বলেই পুলিশকে পড়শিরা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:১৮:১০ ৫৬৫ বার পঠিত #24/7 latest headlines 24/7 Tech News Bangla Newspa #Bangla News 24 and rest of all continuously updated Ban #Barisal #BD News 24 #Chittagong #Comilla." Chittagong Dhaka Sylhet Bari #Khulna #Rajshahi #Rangpur #Sylhet