বঙ্গ-নিউজঃ গত চার বছরে ধাপে ধাপে বেড়েই চলেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের মূল্য। দ্রব্যমূল্যের দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ মূল্য বৃদ্ধি করলেও তা কোনো কাজে আসছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে।
উপরন্ত প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষাকে পুঁজি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফরমের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর ভিসি প্রফেসর ড. রাশিদ আসাকারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি কমিটির মিটিংয়ে আবারও বাড়ানো হয়েছে ফরমের মূল্য। ৪৫০ টাকা মূল্যের ফরমের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫০০ টাকা। এর বাইরে সার্ভিস চার্জ হিসেবে আরও ১৭ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভর্তি পরীক্ষাকে পুঁজি করে ক্রমবর্ধমান এ মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক গরিব মেধাবী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হিমশিম খেতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক মহল।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. আবদুল মুহিত বলেন, ভর্তি ফরমের মূল্য দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই বৃদ্ধিটা কাঙ্ক্ষিত নয়। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। সুতরাং তাদের কথা বিবেচনা করে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। দুঃখজনক হলেও সত্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আর্থিক নীতিমালা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস ও হিসাব শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে মোট ৭২ হাজার ৯১০ টি ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরম উত্তোলন করে ভর্তিচ্ছুরা। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪৫০ (চার্জসহ) টাকা। মোট ৩ কোটি টাকার ফরম বিক্রি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মোতাবেক ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যাওয়ার কথা থাকলেও গেছে মাত্র ২৫ শতাংশ। মোট ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল বাজেটে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও যোগ হয় মাত্র ৭৫ লাখ টাকা।
২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে মোট ৬৪ হাজার ৮৪০টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪৫০ (চার্জসহ) টাকা। এই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফরমের মূল্য ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। সে সময় ৪০ শতাংশের জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যোগ হয় মাত্র ২১ শতাংশ।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে মোট ৮৭ হাজার ৩১৬টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪০০ (চার্জসহ) টাকা। সেবার প্রায় ৩ কোটি টাকার ফরম বিক্রি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা মোতাবেক প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা মূল বাজেটে যোগ হওয়ার কথা থাকলেও যোগ হয় মাত্র ৬০ লাখ টাকা।
২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৭৪ হাজার ৫২৯টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৪০০ (চার্জসহ) টাকা। এই শিক্ষাবর্ষেও ভর্তি ফরমের মূল্য ৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। সেসময়ও ৪০ শতাংশের জায়গায় মাত্র ২১ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে যোগ হয়।
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মোট ৮৮ হাজার ৩২০টি ভর্তি আবেদন ফরম উত্তোলন হয়। প্রতিটি ফরমের মূল্য ছিল ৩৫০ (চার্জসহ) টাকা। এসময় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফরম বিক্রি হয়। সেবার মাত্র ২০ শতাংশ টাকা মূল বাজেটে যোগ হয়।
এছাড়া ৪ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। একই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের মূল্য ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে এর বাইরে ১৭ টাকা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। যেটি বহন করা গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্ট সাধ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আকাম উদ্দিন জানান, ইউজিসির নির্দেশনায় ৪০ শতাংশ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গত বছর এসেছে ২৫ শতাংশ। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটে ভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে জমা হতো মাত্র ২০ থেকে ২১ শতাংশ টাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় কমছে পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। তবে বর্তমান প্রশাসন ৪০ শতাংশ নিবেন বলে জানিয়েছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ভর্তি ফরম থেকে আয়ের মোট ৭৬ থেকে ৮০ শতাংশ টাকা ইউনিট সমন্নয়কারীরা ভর্তি পরীক্ষায় সংক্রান্ত কাজে খরচ করেন। ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিটা ইউনিটে একটা মোটা অংকের টাকা উদ্ধৃত্ত থাকে। তবে এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাজে ব্যয় না করে ইউনিটের শিক্ষকরা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটয়োরা করে নেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিগত বছরগুলোর পরিসংখ্যনে দেখা গেছে, প্রতি দুই বছর পর পর ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক ও বিজ্ঞান অনুষদের জন্য একটি বা দুটি ইউনিট থাকলেও এখানে তিনটি করে ইউনিট। সে হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমের মূল্য অনেক বেশি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ফরমের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে নয় বরং শিক্ষকদের পকেট ভারি করতে। ভর্তি পরীক্ষা থেকে মাত্র ২০-২৫ শতাংশ টাকা ফান্ডে জমা হয় আর মোটা অংকের টাকা শিক্ষকদের পকেটে চলে যায়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, আমি গত বছর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছি। এবার ৪০ শতাংশ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল বাজেটে যোগ করা হবে। খুব শীঘ্রই আমাদের ফিন্যান্স কমিটি (এফসি) সভায় এটা পাশ করা হবে।
ভর্তি ফরমের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে আমাদের ভর্তি ফরমের মূল্য তুলনামূলক কম। বিভাগ বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বেড়ে গেছে। প্রাসঙ্গিক কারণেই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪৩:৪৪ ৪৮৩ বার পঠিত