হাওরবাসীর বাস্তব প্রতিকৃতি জীবন কৃষ্ণের “হাওরবিলাপ”

Home Page » ফিচার » হাওরবাসীর বাস্তব প্রতিকৃতি জীবন কৃষ্ণের “হাওরবিলাপ”
বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭



 হাওরবিলাপ

আল-আমিন আহমেদ বঙ্গ-নিউজঃ হাওরবাসীর বাস্তব প্রতিকৃতি “হাওরবিলাপ” কাব্যগ্রন্থ এই কথাটিই এখন হাওরবাসীর মুখে মুখে।বলছিলাম সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর থানাধীন বংশীকুন্ডা (দঃ) ইউনিয়নের তরুণ কবি জীবন কৃষ্ণ সরকারের ২য় কাব্যগ্রন্থটির কথা।মোট ৩৬ টি কবিতা সম্বলিত কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে ২০১৭ সালে অকাল বন্যায় দুর্গত হাওরবাসীকে।গ্রন্থটির পূর্ণাঙ্গ আলোচনা আজ হয়তো করতে পারবোনা।তবে বইয়ের চুম্বক অংশটুকু আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস করছি।বইটিতে হাওরবাসীকে নিয়ে প্রথম কবিতাটি হচ্ছে “আমরা হাওরবাসী”।কবিতাটির প্রথমেই লেখা আছে - ” হাওর পারে বাড়ী মোদের হাওর পারে বাসা হাওর পারে জন্ম মোদের মনে কতো আশা! বাড়ি করবো, গাড়ী করবো হবো কতো ধনী ধনী হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই সোনার ফসল বুনি। সত্যিই তো।হাওরবুকে জন্ম হলেও আমাদের স্বপ্ন,আশা আকাংখার কমতি নেই।বাড়ি,গাড়ী করার তুমুল স্বপ্নটির কথাটিরই বাস্তব রুপ দিলেন বাস্তবতার কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার। পরের দুটি প্যারায় তিনি লিখেছেন- ফসল কাটতে কাঁচি নিয়ে ক্ষেতে যখন যাই, চারিদিকে জাঙ্গাল ভাঙ্গার ধ্বনি শুনতে পাই। এক সময় সব তলিয়ে যায় জাঙ্গাল ভাঙ্গার জলে এভাবেতেই সুখে দুখে মোদের জীবন চলে। এখানে কবি হাওরপারের সত্যি কথাটি তুলে ধরতে পেছপা হননি।বছর বছর জাঙ্গাল ভাঙ্গার কষ্ট বুকে চাপা দিয়েই হাজার বছরের হাওরবাসী চলে।আবার হাওরবাসীর সরল মনটিও তুলে ধরেছেন তিনি পরের চারটি লাইনে- দুমুটো ধান কাটতে পারলেই আমরা কতো খুশি! আমরা হাওরবাসীরে ভাই আমরা হাওরবাসী। প্রতি বছরেই বর্ষা কালে বন্যায় হানা দেয় এবং অনেক বাড়ীঘর তলিয়ে নেয়।সে বিষয়টি এভাবে লিখেছেন তিনি- বর্ষাকালে,বন্যার জল আমাদের হানা দেয়,বাড়ি-ঘর তলিয়ে নেয়।সেটি তুলেছেন তিনি এভাবে- বর্ষাকালে বন্যার জলে বাড়িতে দেয় হানা, কতো বাড়িঘর তলিয়ে যায় যায়না তাহা গোনা। (আমরা হাওরবাসী) বছরের পর বছর হাওরের মানুষ সরল মনে ভোট দিয়ে প্রতারিত হয়।এ বিষয়টিকে তিনি এভাবে তুলে ধরেছেন- বছর বছর ভোট দিয়ে যায় এই হাওরের মানুষ, নির্বাচনের নাম শুনিলেই হয়ে যায় তারা বেহুঁশ! কি পেল আর কি দিল ভাই তার নেই কোন হিসাব সেই সুযোগেই কত কোকিলেরা হয়েছে বাবু,সাব! বন্যার পরে বাবু,সাবেরা ঘুরে দেখলেই খুশি! আমরা হাওরবাসীরে ভাই আমরা হাওরবাসী। (আমরা হাওরবাসী) এতদিন দুঃখ,কষ্টের কথাগুলো কেবল মুখে মুখে স্থান নিত,আজ এগুলো কবিতায় সার্থক রুপ দিলেন হাওরবাসীর প্রিয় কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার।এরকম উল্লেখ যোগ্য কিছু কবিতা হলো- বাতাসে লাশের গন্ধ,হাওরপারে জন্ম মোদের,বাঁধ ভাঙ্গার পানি,হাওরের কান্না,হাওরবাসীর দুঃখ,হাওর পারের মানুষ,লাল গরুটা,মাছেদের কান্না,করুণা নয় অধিকার চাই,হাওরবিলাপ,ওরা বলে নিষ্পাপ,জাঙ্গাল ভাঙ্গার পানি,ওদের শাস্তি চাই,আমি একজন কৃষক,দুঃখের মাঝেই হাসি,হাওর পারের কুমীর ইত্যাদি। আমি আগেই বলেছি বইটির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়।তবে ক্ষিয়দংশ তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র।বন্যায় ফসল তলিয়ে গেলে কৃষকরা হতাশায় ভোগে এবং কৃষি কাজ ছেড়ে দেবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।কিন্তু বছর শেষে আবার সময় হলে ঠিকই তারা চাষ করে এ বিষয়টিকে কবির কাব্যে এভাবে লিখেছেন- হাওর পারে তখন চলে কান্না কাটির রোল মনের দুখে সবাই বলে চাষ করাটাই ভুল। বর্ষা শেষে আবার যখন পৌষ, মাঘ মাস আসে চাষ তখন ঠিকই করে চির অভ্যাসের বশে। এভাবেতেই হাওরবাসীর চলছে জীবন গাড়ী অতীত স্মৃতি ভুলেই মোরা (আবার) বাঁচার জন্য লড়ি। —————–(আমরা হাওরবাসী) হাওরের কান্না শহুরের অট্টা লিখা পর্যন্ত পৌছায় না।তাই অভিমান করে দিদিমা’র ভণিতায় তিনি লিখলেন- ” হাওরের কান্না হাওরেই শেষ হয়ে যায় দিদিবোন! সেই কান্না শহুরের অট্টালিকা পর্যন্ত পৌছোয় না, পৌছুলে কি আর তারা চুপ করে বসে থাকতো! -(হাওরের কান্না) হাওরবাসীর দুঃখ যেনো নিত্য সংঙ্গী।এখানে ঝর,ঝঞ্চা,বন্যা,বৃষ্টি লেগেই থাকে।এগুলো নিয়েই হাওরবাসী চলে।বিষয়টি কবি গভীরভাবে উপলদ্ধি করেছেন।আর তাই তো তিনি লিখেছেন- দুঃখ মোদের হাওরবাসীর নিত্য চলার সাথী কিছু সময় সুখে থাকলেও বাকি সময় লাথি। ঝড়ের লাথি,মেঘের লাথি বন্যার লাথি খেয়ে সুখে, দুখে চলছি মোরা সময়ের ডাল বেয়ে। (হাওরবাসীর দুঃখ) এতকিছুর পরেও হাওরের মানুষ হতাশা নিয়ে বসে থাকেনা।তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েনা।যুগ যুগ ধরে লড়াই করে টিকে থাকে।এ বিষয়টিও কবির কবিতায় স্থান পেয়েছে এভাবে- ” আমরা হাওরপারের মানুষ আমাদের মন হাওরের মতই বিশাল, আমরা অল্পতে ভেঙ্গে পড়িনা কভু বছর বছর ফসল হানিতে ও টিকে থাকি আমরা তবু।”(হাওরপাড়ের মানুষ) বইটির প্রধান আকর্ষণ ” হাওরবিলাপ” কবিতায় হাওরবাসীর জীবন যাত্রার একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তুলে ধরেছেন।তবে মূখ্য হিসেবে তিনি ত্রাণসচিব কামাল আহমেদের বক্তব্যটির তীব্র প্রতিবাদ করেছেন কবিতার ভাষায়।ত্রান সচিবের বক্তব্যটিকে তিনি লিখেছেন এভাবে- ” অর্ধেক মরার পরও চলে যদি হানি দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনার আইনে তাহা দুর্গত হয় জানি।” সচিবের বক্তব্যের উত্তরটিও তিনি দিয়েছেন এই কবিতাতেই এভাবে- ” পেটের ক্ষুধা আইন বুঝেনা, পেটের ক্ষুধা বুঝে কেবল অন্ন আর অন্ন সম অন্য কিছু।” তাই বলা যায় হাজারো হাওরবাসীর না বলা কথাগুলোই বলিষ্ঠ কন্ঠে তুলে ধরেছেন তিনি এই কবিতায়।জানা যায় কবির প্রকাশিত ২য় কাব্যগ্রন্থ “হাওরবিলাপ”প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই পাঠক সমাজের মাঝে ব্যাপক সারা পড়েছে। কেউ কেউ কবিকে “হাওরকবি” বলে সম্বোধন করছেন, এমনকি সবাইকে সম্বোধন করার কথাও বলছেন কেউ কেউ।অনুসন্ধানে জানা যায়,২৬ আগস্ট হাওরবিলাপ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কিত কবির এক স্ট্যাটাসে প্রথম ” হাওরকবি” সম্বোধন করে শুভ কামনা করেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকাস্থ টিটু।তারপর থেকে অনেকেই কবিকে ফোনে,ফেইসবুকে,স্ট্যাটাসে ” হাওরকবি ” বলে সম্বোধন করে অভিনন্দন অব্যাহত রেখেছেন।তাঁর আরেক ভক্ত সাগর বিশ্বাস পদ্ম পহেলা সেপ্টেম্বর তার ফেইসবুক একাউন্টের মাধ্যমে তার বন্ধুবান্ধব সবাইকে কবি জীবন কৃষ্ণকে “হাওরকবি ” হিসেবে মেনে নেয়ার অনুরোধ জানান।তার স্ট্যাটাসটির চুম্বক অংশ নিম্নরুপঃ “পল্লীকবি,লোক কবি,নাগরিক কবি আর রুপসী কবির ন্যায় আমাদের আরো একজন কবি যিনি “হাওরকবি” নামে পরিচিত হতে যাচ্ছেন।তিনি কবি জীবন কৃষ্ণ সরকার। হাওর সম্পর্কিত লেখালেখির দরুন তাকে হাওর কবি হিসেবে ঘোষণা করছি। প্রিয় শোভা কাঙ্খী ভাই বন্ধুরা,আপনারা সকলে তাঁকে “হাওরকবি” হিসেবে মেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ রইল।” এভাবে কবিকে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে কেউ না কেউ “হাওরকবি বলে সম্বোধন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ” পাঠক আমাকে,কি নামে সম্বোধন করবে সেটা একান্তই তার ব্যাপার।আমার কাজ লিখে যাওয়া,আমি হাওর বিষয়ে আরো লিখে যাওয়ার চেষ্টা করছি।মানুষ নামে নয় কাজে বড় হয়।তাই পাঠকের কাছে আমার আবেদন আপনারা আমার জন্য দোয়া /আশীর্বাদ করবেন যেনো আমি আরো প্রাণবন্ত লিখা লিখে পাঠকের মন জয় করতে পারি।” আজ ২৭ সেপ্টেম্বর।কবির ১ম বিবাহ বার্ষিকী।এমন দিনে আমাদের দেবার মত কিছুই নেই।তবু কবির স্ত্রী বিনতা কৃষ্ণ সরকার ও সন্তান বিজয় কৃষ্ণ সরকার সহ কবির প্রতি হৃদয়ের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি সেই সাথে অসহায় হাওরবাসীর পক্ষ থেকে তাঁর চির সুস্থতা কামনা করছি এবং হাওরের উপর আরো প্রাণবন্ত লেখা আশা করছি।

জীবন কৃষ্ণ সরকার

বাংলাদেশ সময়: ৯:৫৬:২০   ১০৬০ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ