ক্যানসারকে জয় দূর কল্পনা নয়

Home Page » অর্থ ও বানিজ্য » ক্যানসারকে জয় দূর কল্পনা নয়
বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭



ফাইল ছবি
বঙ্গ-নিউজঃ  গত শতকের সত্তরের দশকে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হওয়ার পর দশ বছরও বাঁচত না তিন-চতুর্থাংশ আক্রান্ত ব্যক্তি। বর্তমানে প্রতি পাঁচজনে চারজনই এ আয়ুষ্কাল পান। একই সময়ের ব্যবধানে বর্তমানে আয়ুষ্কাল বেড়েছে লিউকোমিয়া রোগীদেরও। একইভাবে অগ্রগতি হয়েছে ফুসফুস, স্তন, মস্তিষ্কসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায়। আমেরিকায় বর্তমানে দেড় কোটির বেশি মানুষ রয়েছেন, যাঁরা চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসারকে এক অর্থে জয় করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত অধিকাংশ ক্যানসারেরই এখন চিকিৎসা রয়েছে।
ক্যানসার আক্ষরিক অর্থেই মরণব্যাধি। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শুধু ২০১৫ সালেই মারা গেছে ৮৮ লাখ মানুষ। একমাত্র হৃদ্‌রোগই শুধু এ ক্ষেত্রে ক্যানসারের চেয়ে এগিয়ে। প্রায় ৪০ শতাংশ মার্কিনেরই জীবনকালের কোনো না কোনো পর্যায়ে ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার দুঃসংবাদ শুনতে হতে পারে। এমনকি আফ্রিকায় মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ম্যালেরিয়াকে ছাড়িয়ে গেছে ক্যানসার। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান দিয়ে মানুষের অবচেতনে বিদ্যমান ক্যানসার আতঙ্ককে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। সম্প্রতি আলঝেইমার বা স্মৃতিভ্রংশ অনেকটা কাছাকাছি ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও তা মরণব্যাধি নয়।
স্বাভাবিকভাবেই এ ভয়াবহ রোগ থেকে মুক্তি পেতে মানুষ বিজ্ঞানের দিকেই তাকিয়ে আছে। আর বিজ্ঞানও তাকে হতাশ করছে না। গত কয়েক দশকে এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন মতে, ২০০৬ সালে আমেরিকায় লিউকোমিয়া শনাক্ত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের মাত্র ৩৪ শতাংশ পাঁচ বছর বেঁচে থাকতেন। ২০১২ সালে এ হার বেড়ে ৬৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আগামী এক দশকের মধ্যে আমেরিকার ক্যানসার বিজয়ী মানুষের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুধু আমেরিকা নয়, ক্যানসার চিকিৎসায় উন্নয়নশীল দেশগুলোও যথেষ্ট এগিয়েছে। মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোয় প্রোস্টেট ও স্তন ক্যানসার জয়ী মানুষের সংখ্যা এক দশকের মধ্যে পাঁচ গুণ বেড়েছে। বিজ্ঞান একদিন সব ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসা মানুষের সামনে হাজির করবে; এটি এখন যৌক্তিক আশাবাদ। কোনো চিকিৎসা আয়ুষ্কাল বাড়াবে, আবার কোনোটি হয়তো করবে পূর্ণাঙ্গ নিরাময়।
মানুষ ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইটা শুধু পরীক্ষাগারে করছে না। এ লড়াই চলছে অস্ত্রোপচার কক্ষে, স্কুলে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগে। সবচেয়ে বড় অগ্রগতিটি হয়েছে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্তের ক্ষেত্রে, যা এর সফল চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টিউমার-সংশ্লিষ্ট ডিএনএর উপস্থিতি শনাক্ত করা যাচ্ছে। এমনকি মানুষের শ্বাস থেকেও নেওয়া হচ্ছে ক্যানসারের উপস্থিতি-সংক্রান্ত তথ্য। আর চিকিৎসার পদ্ধতি ও সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশি কার্যকর ওষুধ খুঁজে পেতে ব্যবহার করা হচ্ছে জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির জিনে থাকা ডিএনএ নিউক্লিওটাইডস ও ক্ষারের সজ্জা সম্পর্কে জানা যায়। আর এ সজ্জা বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ কিংবা চিকিৎসাপদ্ধতিটি খুঁজে পাওয়া সম্ভব। এর সঙ্গে রয়েছে বিশ শতকের সবচেয়ে কার্যকর তিন পদ্ধতি-অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি।
রেডিওথেরাপি ছিল একসময় একমাত্র টার্গেট থেরাপি, যেখানে সুস্থ কোষকে কোনো ধরনের আক্রমণ না করেই তেজস্ক্রিয় গামা রশ্মি পাঠিয়ে শরীরের মধ্যে থাকা টিউমার মেরে ফেলা হয়। কিন্তু এর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে আরও নতুন কিছু অস্ত্র। এখন নতুন কিছু ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে, যা টিউমার কোষে পুষ্টি সরবরাহের ক্ষেত্রে রক্তকোষকে বাধা দেয়। একই সঙ্গে কিছু ওষুধ আবার ক্যানসার কোষের নিজের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বাধা দিতে সক্ষম। বিজ্ঞান ক্যানসারের মতোই নির্মম।
সর্বশেষ অগ্রগতিটি হয়েছে ইমিউনোথেরাপির ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে শরীরের প্রতিরোধব্যবস্থায় বিদ্যমান রোধকগুলোকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়। ফলে ক্যানসার কোষ প্রতিরোধব্যূহের রোধক কোষগুলোকে কার্যকর করে শ্বেতকণিকার উৎপাদন হ্রাসের যে ষড়যন্ত্র করে, তা নস্যাৎ হয়ে যায়। ফলে শরীরের ভেতরে উৎপন্ন হয় বাড়তি শ্বেত রক্ত কণিকা। আর এ শ্বেত রক্ত কণিকাই টিউমার কোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পড়ে। তবে এখনো এটি পুরোদমে চালু হয়নি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত এক হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এমনকি শরীরের প্রতিরক্ষাব্যূহ ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে জিনোম থেরাপিও বাস্তব হয়ে উঠেছে। গত মাসেই আমেরিকায় প্রথমবারের মতো এ থেরাপির অনুমোদন দেওয়া হয়।
আগামী দিনে ক্যানসার চিকিৎসায় এসব পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর হবে সন্দেহ নেই। কিন্তু বর্তমান অর্জনও কম নয়। বর্তমানে আমেরিকা ও কানাডায় ক্যানসার জয়ের হার ৭০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জার্মানিতে এ হার ৬৪ এবং ব্রিটেনে ৫২ শতাংশ। সব দেশের অর্জন সমান না হলেও ক্যানসার চিকিৎসায় অগ্রগতি বিশ্বজুড়েই হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০:৫৪:৪১   ৮২৬ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

অর্থ ও বানিজ্য’র আরও খবর


অর্থনীতি নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ
ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
চেক ডিজঅনার মামলার রায় দুই মাসের জন্য স্থগিত
মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসের আড়ালে হুন্ডি, গ্রেপ্তার ৬
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
বৈশ্বিক নানা সংকট সত্ত্বেও বাড়লো মাথাপিছু আয়
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
আইএমএফ এর সাথে সমঝোতা : সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে
আইএমএফ এর ঋণ গ্রহণ করা হবে নিরাপদ রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য: বাণিজ্যমন্ত্রী
টবগী-১ কূপে পাওয়া যাবে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস

আর্কাইভ