বঙ্গ-নিউজঃ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা একটা বড় হুমকি বলে মন্তব্য করছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই বিষয়টকে অত্যন্ত শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীর সফরে গিয়ে রাজনাথ এসব কথা বলেন।
জম্মুসহ ভারতের অন্য অংশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টিতে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠিন। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছি এবং তা মোকাবিলা করতে কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।
চারদিনের সফরের শেষ দিনে মঙ্গলবার জম্মুতে সাংবাদিক সম্মেলনে করে একথা বলেন রাজনাথ। দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত এই রাজ্যে প্রায় ৬ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাস করছে বলে খবর। গত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই রাজ্যটিকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা হুমকির কারণ কি সে প্রশ্নে রাজনাথ বলেন, ‘আমরা দেশের জাতীয় নিরপত্তার হুমকির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারি না’।
এর আগে গত আগস্টেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা দিয়েছিল যে রোহিঙ্গারা দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি। কারণ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি তাদেরকে ব্যবহার করতে পারে। তাই রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির রাজ্য সরকারগুলিকেও নির্দেশ দেয় কেন্দ্র।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অভিমত মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের এই অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে ভারতের নাগরিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এছাড়াও দেশের সীমিত সম্পদের ওপরও তা বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এরপর গত ৫ সেপ্টেম্বরই ভারতের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজুজ ফের একবার স্পষ্ট করে দিয়ে বলেন, জম্মু-কাশ্মীর, হায়দরাবাদ, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং রাজস্থানসহ ভারতের কয়েকটি জায়গায় প্রায় ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী অবৈধভাবে বসবাস করছেন। রোহিঙ্গারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তাই ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিমদের চিহ্নিতকরণ করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। আর ভারতকে এব্যাপারে কারও উপদেশেরও দরকার নেই, কারণ ভারতেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় উদ্বাস্তুরা রয়েছেন।
দিল্লির অভিমত ভারতে বসবাসরত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমের মধ্যে ১৪ হাজার রোহিঙ্গা জাতিসংঘের উদ্বাস্তু হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) দ্বারা নিবন্ধিত। তাই বাকিদের চিহ্নিত করেই ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার।
এদিকে সহিংসতার শিকার হওয়ার হতভাগ্য রোহিঙ্গাদের প্রতি কেন্দ্র ও বিজেপি’র মনোভাবের বিরোধিতা করেছে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দল জাতীয় কংগ্রেস। দলের সিনিয়র মুখপাত্র আনন্দ শর্মা জানান, ‘‘মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার, তাই তাদের সাথে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করা উচিত। কারণ বাংলাদেশ সরকারও এই কথাটি বলেছে। এই মুহূর্তে আমাদের সামনে যে সঙ্কট ও সংবেদনশীলতা তৈরি হয়েছে সেই বিষয়টিতে ভারতের অত্যন্ত যত্নবান হওয়া উচিত’।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের ব্যাপারে বিজেপি ও আরএসএস’এর নেতারা যেভাবে প্রকাশ্যে মন্তব্য করছেন বা পিটিশন দায়ের করেছেন তারও সমালোচনা করেছেন আনন্দ শর্মা। তিনি বলেন, ‘সহিংসতার শিকার হওয়া রোহিঙ্গাদের চিহ্নিতকরণ করাটা কখনোই উচিত নয়। তাদের সঙ্গে খুব ভাল আচরণ করা উচিত’।
তাঁর মতে, যেকোন জাতি, সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী থেকেই সন্ত্রাসবাদীরা দেশে ঢুকতে পারে। এর জন্য পুরো জাতি বা গোষ্ঠীকে দোষারোপ করা যায় না এবং বিজেপি সরকারের এই বিষয়টিতে আরও যত্নবান হওয়া উচিত।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টিকে মানবিক সঙ্কট ও অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যু হিসাবে বর্ণনা করে এই কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘যারা সহিংসতার শিকার হয়েছে অথবা যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যাদের ঘর ছাড়া করা হয়েছে এবং শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে-ইতিহাসগত ভাবেই ভারত বরাবরই তাদের প্রতি খুবই সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে এসেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার কিছুই করছে না উল্টে তার মন্ত্রীদেরকে এই বিষয়টিতে মুখ খোলার অনুমতি দিয়ে রেখেছে। এর ফলে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩৩:২২ ৬৮০ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News