বঙ্গ-নিউজঃ বীরত্বগাথায় লিখল টাইগার বাহিনী। টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন দল অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো হারানোর স্বাদ নিলে মুশফিক-সাকিবরা। জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতল বাংলাদেশ। এমন জয়ে বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।
মাত্র ১০ মাসের ব্যবধানে ইংল্যান্ড, শ্রীলংকার পর পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকেও হারানোর স্বপ্ন পূরণ করেছে টাইগাররা। সাড়ে তিন দিনেই সাকিব আল হাসানের জাদুকরী পারফরম্যান্সে গতকাল অস্ট্রেলিয়াকে ২০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঈদের আগে দেশকে সবচেয়ে বড় উপহার দিলেন ক্রিকেটাররা। এ জয় টেস্টেও বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার বার্তা জানিয়ে দিল বিশ্বকে। আগে জিম্বাবুয়েকে ৫টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২, ইংল্যান্ড ও শ্রীলংকাকে একটি করে টেস্ট ম্যাচে হারিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এই ঐতিহাসিক জয়ের আনন্দ মিরপুর স্টেডিয়ামে বসেই উপভোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ম্যাচশেষে সাকিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন সমর্থন খুবই দরকার। এভাবে সবার উৎসাহ পেলে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাকাব্যিক জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। সিরিজ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেনÑ অস্ট্রেলিয়াকে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করতে চান। অতি আত্মবিশ্বাসী সাকিবও দুহাতে পারফরম করেছেন। ব্যাট হাতে ৮৪ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলার পর দুই ইনিংসেই ৫টি করে উইকেট নেন। নিজের ৫০তম ম্যাচ অবিস্মরণীয় করে রাখলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করে ৯ টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারের বৃত্ত পূরণ করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেলেন বাংলাদেশের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ৫০তম ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার ও পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন রেকর্ডপুত্র। টেস্ট ইতিহাসে আগে কেউই এমন পারফরম করতে পারেননি। তবে নিজেদের ৫০তম টেস্টে ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন ইংল্যান্ডের ট্রেভর বেইলি, নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি, শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও ভারতের হরভজন সিং। কিন্তু একই ম্যাচে তাদের কেউ-ই হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলতে পারেননি। আরেকটি গর্বের কীর্তি গড়েছেন সাকিব। ইতিহাসে একই টেস্টে হাফসেঞ্চুরি ও ১০ উইকেট শিকারের এ কৃতিত্ব দেখালেন দুবার। নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলি একই টেস্টে তিনবার এ রেকর্ড গড়েন। অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ষষ্ঠবারের মতো ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন সাকিব। এমন মাইলফলক স্পর্শ করার ম্যাচ অবিস্মরণীয় হয়েই থাকবে সাকিবের কাছে।
নিজের ৫০তম ম্যাচ খেলেছেন তামিমও। মিরপুরের দুর্বোধ্য উইকেটে দুই ইনিংসেই (৭১ ও ৭৮) দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন। দেশসেরা ওপেনার তামিমের কাছেও ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মিরপুরে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় দিন বিকাল ও চতুর্থ দিনের সকাল ছিল বিষণœতায় ছোঁয়া। অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের জন্য ২৬৫ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন বিকালে ‘নতুন জীবন’ পেয়ে ইচ্ছামতো ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও স্টিভেন স্মিথ। ২ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া। গতকাল সকালেও দারুণ শুরু করেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান। ধীরে ধীরে এগোতে থাকেন তাদের লক্ষ্যে। হতাশা ভর করে বাংলাদেশ শিবিরে। হতাশাচ্ছন্ন ক্রিকেটপ্রেমীদের মুখে হাসি ফোটান সাকিবই। ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে ভেঙে দেন ওয়ার্নার-স্মিথের গড়া বড় দেয়াল। সাকিবের চমৎকার এক ডেলিভারিতে ওয়ার্নার এলবিডব্লিউ হন। আম্পায়ার আলিম দারের দেওয়া আউটের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে সাজঘরমুখী হন ওয়ার্নার। এর আগে উপমহাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন এই ওয়ার্নার। ১৩৫ বলে খেলেন ১১২ রানের অনবদ্য ইনিংস। অধিনায়ক স্মিথের সঙ্গে ১৩০ রানের জুটি গড়েন। স্মিথের ব্যাটে আশায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু সাকিবের ঘূর্ণিতে তাল হারিয়ে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন স্মিথও (৩৭)। অস্ট্রেলিয়ার এই বড় দুই উইকেট সাকিব তুলে নেওয়ার পরই প্রাণ ফেরে মুশফিক শিবিরে। লাঞ্চের আগে সাকিব ও তাইজুলের ঘূর্ণিতে আরও তিন উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। জয়ের সুবাস তখন বাংলাদেশ শিবিরে। তাইজুলের বলে উঠিয়ে দেওয়া ক্যাচ সুনিপুণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন সৌম্য সরকার। ১৪তম টেস্ট ক্যারিয়ারে তাইজুলের ৫০তম উইকেট ছিল এটি। পরে নিজের বলে নিজেই আগারের ক্যাচ নেন তাইজুল। সাকিবের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ম্যাথু ওয়েড। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ৫ উইকেট পতনের পরই বদলে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে। স্বস্তি নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
লাঞ্চের পর সাকিবের প্রথম বলেই অস্ট্রেলিয়ার শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বোল্ড হন। এর পর লায়নকে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন প্যাট কামিন্স। মিরাজের বলে লায়ন সৌম্যের হাতে ক্যাচ দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া হার তখন সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে শেষ প্রচেষ্টাও চালিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পিঠের ব্যথায় অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরার কথা ছিল হ্যাজলউডের। ইনজুরিতে পড়লেও ব্যাট হাতে মাঠে নামেন দলের বিপর্যয়ে। হ্যাজলউডকে সঙ্গে নিয়ে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে এগিয়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত তাইজুলের ঘূর্ণিতে শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর হ্যাজলউড রিভিউ চান। কিন্তু রিভিউ অবশিষ্ট না থাকায় আম্পায়ার সাড়া দেননি। হ্যাজলউডের উইকেট তুলে নিয়েই বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন তাইজুল, সাকিবরা। অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর আনন্দে মেতে ওঠে পুরো বাংলাদেশ।
বিশ্বাস ও আস্থা থাকলে সফল হওয়া যায়। ম্যাচশেষে বিশ্বাস ও আস্থা থাকার কারণেই ঐতিহাসিক জয় এসেছে বলে জানালেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এ জয় বিরাট সাফল্য। ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতি থেকেই প্রেরণা পেয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে জয় তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন এখন টাইগারদের সামনে। স্বপ্ন পূরণ হোক এ প্রত্যাশা ক্রিকেটপ্রেমীদেরও।
বাংলাদেশ সময়: ১:৩১:১১ ৮৮১ বার পঠিত #bangla news #bangla newspaper #bangladesh news #bd news #daily newspaper #World News