বঙ্গ-নিউজ: ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও রায়ের পর্যবেক্ষণ দেয়ার পর বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার পদ্ধতি, ক্ষমতায় থাকার বৈধতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর এই সুযোগে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি নড়েচড়ে-ঘাটবেঁধে আবারো আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।এ রায়ের পর থেকেই ক্ষমতাসীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে ‘সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক বৈধতা নেই’ দাবি করে আঙ্গুল তুলতে থাকে বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার যে বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে তা সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়েই প্রমাণ হয়েছে। তাদের (সরকারের) যদি নূন্যতম বিবেকবোধ, সম্মান থাকলে তারা দায় শিকার করে পদত্যাগ করা উচিত। অপর দিকে প্রধান বিচারপতির দেয়া এই রায়কে মেনে নিতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা রায়কে পুনরায় বিবেচনা নেয়ার জন্য তোড়জোড়ও কম করছে না।
এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী, এ্যাটর্নি জেনারেল কে নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার রিভিউ করবেন বলেও জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।
বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকাকে অবৈধ-বেআইনি উল্লেখ করে পদত্যাগ দাবি করলেও এ সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে কোন মামলা করবে না বিএনপি। রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করে সরকারকে বাধ্য করবে পদত্যাগ করতে। তবে তার পরেও যদি মামলা করতে হয় সেটাও সময় সাপেক্ষে করবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপি একাধিক নেতারা। মামলা দিয়ে নয়, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতির মাঠেই সমাধান করতে চায় দলটি।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব) মহবুবুর রহমান বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর এই রায়কে নিয়ে বিএনপি যথেষ্ট সচেতন। সরকারের পদত্যাগ নিয়ে বিএনপি প্রতিবাদ করছে। সরকারের কর্মকাণ্ড গুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে জনগণকে সঙ্গে নিচ্ছে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ এবং সবার উপরে রাখতে চায়। এ রায়ের পর্যবেক্ষণেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরছে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি রায় নিয়ে রাজনীতির অবকাশ কম। এখানে যেটা দরকার, ভুল বুঝাবুঝির নিরসন করে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রেখে সকলের এগিয়ে আশা উচিত। কারণ বিচার বিভাগের উপর আমাদের আর কিছু নেই। সরকার যে ধরনের চেষ্টা করছে সেখান থেকে তাদের সরে আশা উচিত। বিচার বিভাগ যে সবার উর্ধ্বে এটা সরকারকেও মেনে নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ রায়ের পর সরকার পতনে বিএনপি আইনি কোন পদক্ষেপ নিবে নাকি এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বিএনপিও হয়তো আইনি পদক্ষেপের কথা চিন্তা করছে। তবে এটা সময়ের ব্যাপার।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিচার বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে বর্তমান যে সংসদ আছে তা অকার্যকর। এখানে জনগণের কোন প্রতিনিধি নেই। তাহলে অনৈতিকভাবে এ সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে।
তিনি বলেন, এ রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়েছে, সারাদেশ দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। আমরা বলছি যেখানে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, দেশের সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সুশাসন নেই এবং সরকারের কোন জবাবদিহিতা নেই। সেহেতু সংসদ সদস্যদের নিজেদের দায় শিকার করে নিয়ে পদত্যাগ করা উচিত। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছি। যদি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা থাকে তবে আবার তারা নির্বাচিত হবে।
সরকারের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা দখলের দায়ে মামলা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো মনে হয় এ বিষয়ে মামলা করার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা করতে পারি কিন্তু যেহেতু বিচার বিভাগ রায় দিয়েছে সরকারের বিরুদ্ধে। আমরা রাজপথে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করবো। সরকারের পদত্যাগ দাবি করবো। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে এখন সরকারের উচিত হবে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয়া বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক আ্যাডভোটেক সানাউল্লাহ মিয়া জানান, এটা পরিস্কার বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করবে। কিন্তু এদেশের এমপিরা তো আছে প্রধানমন্ত্রীও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তিনি নিজেও ভোট দেননি। কাজেই এই সরকার বেআইনি, অবৈধ। এ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কোন মামলা করবো না। জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই সরকারকে বিতারিত করবো। মামলা করে কি হবে? এগুলো রাজনৈতিক বিষয় রাজনৈতিক মাঠে ফয়সালা হবে। মামলা দিয়ে এগুলো ফয়সালা হয় না কখনো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:৩১:৪৯ ৪১৪ বার পঠিত