বঙ্গ-নিউজঃ আজ মধ্য দুপুরে সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসবে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির সংযুক্ত সীমানার ৪৮টি রাজ্যে দিনের আলো গ্রাস করে নেবে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ। আশপাশের অঞ্চল থেকেও দেখা যাবে আংশিক গ্রহণ। তবে বাংলাদেশে এ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে না, গ্রহণের সময় যে বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায়।
পৃথিবী আর সূর্যের মাঝখানে চাঁদ এসে পড়লে সূর্যগ্রহণ ঘটে। পূর্ণ সূর্যগ্রহণে চাঁদের ব্যাস সূর্যের ব্যাসের তুলনায় বড় দেখায়। এতে একটি পৃথিবীর বড় অংশজুড়ে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না।
আজকের সূর্যগ্রহণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ শোরগোল চলছে কিছুদিন ধরে। এ অঞ্চলে যে সর্বশেষ পূর্ণ সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ১৯১৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে ১৯৭৯ সালের পর আর কোনো সূর্যগ্রহণ দেখা যায়নি।
বিস্ময়কর হলেও সত্য, বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ ঘটলেও সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে কুসংস্কার রয়েছে। প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকার বিশাল পাঠকগোষ্ঠীর জন্য এমনই কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে জানানোর জন্য এই বিশেষ আয়োজন—সূর্য গিলে খাচ্ছে ড্রাগন
চৈনিক সভ্যতাসহ বেশ কিছু আমেরিকান ও ইউরোপীয় সভ্যতায় সূর্যগ্রহণের কারণ হিসেবে ড্রাগনের উল্লেখ আছে। ‘গেম অব থ্রোনসে’র কল্যাণে পুরাকথার এই কল্পিত ড্রাগন স্থান করে নিয়েছে মানুষের কল্পনাতেও। প্রাচীন মায়া সভ্যতা ছাড়াও ‘নেটিভ’ আমেরিকানদের ‘চাকো’ জনগোষ্ঠীতে এখনো ড্রাগনের গল্প প্রচলিত।
প্রসূতি মায়েদের ভয়
সূর্যগ্রহণের সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ব্যাপারে দুই ধরনের গপ্প শুনতে পাওয়া যায়। এক, শিশুটি অসুস্থ হবে এবং দুই, শিশুটি চালাক হবে। তবে এ দুটি ধারণার কোনোটার ক্ষেত্রেই বিশ্বাস করার মতো যুক্তি বা তথ্য পাওয়া যায় না।
প্রাচীন অ্যাজটেক সভ্যতায় বিশ্বাস করা হতো, চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের এক টুকরো খেয়ে ফেলা হয়। ম্যাক্সিকান সংস্কৃতিতে এটা বিশ্বাসে পরিণত হয়, প্রসূতি মা সূর্যগ্রহণ দেখলে তার অনাগত সন্তানের এক টুকরো খেয়ে নেবে দেবতারা! হিন্দু উপকথায় গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করে রাহু নামে এক অসুরের কর্তিত মুণ্ডু, যিনি সূর্য আর চাঁদ গিলে খেয়েছিলেন।
কাত হয়ে শুতে বারণ
সূর্যগ্রহণে গর্ভবতী মায়েদের শান্তি নেই। সেন্ট লুইসে অবস্থিত মার্সি হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট শাফিয়া ভুট্টোর মতে, সূর্যগ্রহণের সময় পাকিস্তানে মায়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিত করে শোয়ানো হতো। নইলে নাকি গর্ভের শিশু বিকলাঙ্গ হয়! বাংলাদেশেও এ ধারণার অস্তিত্ব রয়েছে। তবে গর্ভে শিশুকে রেখে চিত হয়ে শোয়াটা মায়েদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
ধাতব অলংকার পরা, খাবার ও টয়লেটে বারণ
ধাতব অলংকার পরতে বারণ করা আছে ‘অ্যাস্ট্রোসেইজ’ নামে এক জ্যোতির্বিদ্যা সাইটে। অন্যদিকে ম্যাক্সিকান কুসংস্কারে, গ্রহণ চলাকালীন ধাতব অলংকার পরাকে উৎসাহিত করেছে। মেক্সিকোর প্রসূতি মায়েরা পেটের কাছে ধারালো ছুরি রাখতেন যেন গ্রহণের সময় সন্তানকে ঠোঁট কাটা রোগ থেকে বাঁচানো যায়।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী দৃকপঞ্চং ওয়েবসাইটে সূর্যগ্রহণের ১২ ঘণ্টা আগে থেকে এবং চন্দ্রগ্রহণের ৯ ঘণ্টা আগে থেকে খাবার গ্রহণ করতে বারণ করা হয়েছে। এ সময় যৌন সংসর্গ বারণ, নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মলমূত্র ত্যাগেও। তবে এসব ধারণার সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ নেই এবং নিশ্চিত ভাবেই কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই।
যে সংস্কারটি মানবেন
সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো বারণ। এই সংস্কার অবশ্যই মানবেন। সত্যি বলতে, যেকোনো সময়েই সূর্যের দিকে সরাসরি তাকাতে নেই। সে হোক গ্রহণের সময়, কিংবা স্বাভাবিক সময়ে। সূর্যগ্রহণ দেখতে কাঁসার পাত্রে পানি থেকে শুরু করে ব্যবহার হয়েছে কাজে লাগে না এমন এক্স-রে প্লেটও। এখন অবশ্য বিশেষ রোদচশমা দিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। আজকের গ্রহণ সামনে রেখে ভালোই বিকোচ্ছে এসব। দেখে শুনে ভালো মানের এমন চশমা কিনতে পারেন।
সূর্যগ্রহণ নিয়ে কোনো কুসংস্কারে পাত্তা দেওয়ার কোনো মানে নেই। আপনি যদি প্রসূতি মা হয়ে থাকেন, নিজের শরীরের যত্ন নিন। অনাগত সন্তানের জন্য শরীরে যথেষ্ট পুষ্টির ব্যবস্থা করুন। হাজার আলোকবর্ষ দূরের চাঁদ-সূর্য আপনার কোনো ক্ষতি করবে না। সূত্র: ইউএসএ টুডে, কেএসএল ডট কম।
বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৪:২০ ৫৬৫ বার পঠিত