কৃষিগবেষণায় আশার আলো

Home Page » শিক্ষাঙ্গন » কৃষিগবেষণায় আশার আলো
রবিবার, ২০ আগস্ট ২০১৭



এক পশলা বৃষ্টির পর বদলে গেল ক্যাম্পাসের চেহারা। বঙ্গ-নিউজঃ দুই ফটকের মাঝের রাস্তায় দুই ধারে সারি সারি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো। মূল ফটকের নিরাপত্তাকর্মীদের অতিক্রম করে প্রথমেই চোখে পড়ে জয় বাংলা চত্বর। চত্বরের পাশে বসে আড্ডা জমিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একটু এগোলে একাডেমিক ভবন, তার সামনে মুজিব চত্বর। ছবির মতো গোছানো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরাই ‘ছবি’টাকে করেছেন আরও রঙিন!

১৬ আগস্ট, সকালে আকাশে রোদের ঝলক থাকলেও দুপুরে হুট করেই নামল বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারাটাই পাল্টে গেল। প্রায় ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি শেষে আবার রোদের খেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে সারিবদ্ধভাবে লাগানো ছোট ছোট কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো তখন আরও ঝলমল করছিল। ক্যাম্পাসের জয় বাংলা চত্বরের উত্তর পাশে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, রয়েছে ব্যাংক, পোস্ট অফিস, ক্যানটিন ও সেবাকেন্দ্র। পাশের ভবনে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের পৃথক ক্লাব। আছে প্রায় এক হাজার আসনের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তন।

মিলনায়তনের সামনে কথা হলো কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের নাজিয়া নুসরাত ও তানজিনা তাজমিমের সঙ্গে। জানালেন, ছোটবেলা থেকে তাঁদের স্বপ্ন ছিল কৃষি নিয়ে লেখাপড়া করার। নাজিয়া-তানজিনার মতো যাঁরা কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চান, তাঁদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ই তো স্বপ্নের ঠিকানা। তাই প্রায় দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী এখানে জড়ো হয়েছেন কৃষিবিদ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সব শিক্ষার্থীর জন্য এখানে আছে আবাসনের ব্যবস্থা।

কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী সাদিয়া জেরিন বলেন, ‘বছরের শুরুতেই আমরা একাডেমিক ক্যালেন্ডার হাতে পাই। সেই অনুযায়ী সারা বছর নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা হচ্ছে। রেজাল্টও হাতে পাচ্ছি সময়মতো। রাজনৈতিক প্রভাব তেমন নেই। আমাদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ খুব ভালো।’

জয় বাংলা চত্বরের সামনে কথা হয় কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদ হোসেনের সঙ্গে। তাঁর বক্তব্য, ‘পরিবেশটা সুন্দর বলেই লেখাপড়া করতেও ভালো লাগে। অবসরে আমরা ফুটবল খেলি। হলে টেনিস খেলার ব্যবস্থা রয়েছে, আছে বিনোদনের আরও নানা সুবিধা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বদিকে রয়েছে ক্যাম্পাসের নিজস্ব গবেষণার মাঠ। আছে জিন ব্যাংক, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদ। কৃষি ও অর্থনীতি অনুষদের জন্য নতুন একটি ভবনের কাজ চলছে। তার পাশে রয়েছে ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদ। মূল ক্যাম্পাসের ভেতরেই আছে বিশাল লাইব্রেরি। কথা হলো ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মো. আতিকুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লাইব্রেরিতে এখন প্রায় ২১ হাজার ৮০০ বই আছে। এ ছাড়া ই-জার্নাল আছে ৬৫ হাজার।’

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানালেন, গুটি কয়েক নিবেদিতপ্রাণ কৃষি বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৮০ সালে এই শিক্ষাঙ্গনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ কলেজ অব অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স নামে। ১৯৮৩ সালে কলেজটিকে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট অ্যাগ্রিকালচারে (ইপসা) রূপান্তর করে কৃষিবিজ্ঞানে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়নসহায়তা সংস্থা (জাইকা) বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে। পাঠ্যক্রম উন্নয়নে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি। পরবর্তী কালে সরকারের উদ্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

বর্তমানে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রির পাশাপাশি চার বছরমেয়াদি বিএস (কৃষি ও ফিশারিজ), পাঁচ বছরমেয়াদি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের কার্যক্রম চালু আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজসহ ৫টি অনুষদ রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি অনুষদে ১৬টি, মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদে ৫টি, ভেটেরিনারি মেডিসিন অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদে ১০টি এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদে ৫টি বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৬টি শিক্ষা বিভাগ চালু আছে। জানা গেল, ‘উইন্টার ২০১৬’ টার্ম পর্যন্ত ৩০৩ জন পিএইচডি, ১ হাজার ৫১১ জন এমএস এবং ৮২৯ জন বিএস পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।

কৃষি ও কৃষি-সম্পর্কিত মৌলিক গবেষণায় এ পর্যন্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ২ হাজার ৭৫৬টি প্রবন্ধ, ৮১টি পুস্তক ও ৯০টি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। মৌলিক গবেষণায় অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে বিভিন্ন ফসলের ৩৪টি জাত ও ৬টি প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে। আরও ১০টি ফসলের জাত ও প্রযুক্তি অবমুক্তের অপেক্ষায় আছে। উদ্ভাবিত ফসলের জাত এবং প্রযুক্তিগুলো বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে ভিনদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভবিষ্যতে কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

কৃষিশিক্ষায় ব্যতিক্রমী এই প্রতিষ্ঠানটি উচ্চতর ডিগ্রি প্রদানের জন্য নর্থ আমেরিকার ‘কোর্স বেজড কারিকুলামে’ চলছে। শিক্ষকেরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাঠক্রম অনুসরণ করছেন। পরিবর্তনশীল পরিবেশের উপযোগী ফসলের জাত উন্নয়নেও আমরা কাজ করছি। কৃষি বিষয়টা খুবই চ্যালেঞ্জিং ও প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা কৃষি গবেষণায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভূমিকা রাখছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০:৫৮:২৮   ৪৪৭ বার পঠিত   #  #  #  #  #  #




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

শিক্ষাঙ্গন’র আরও খবর


মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
জানুয়ারি থেকে স্কুলে কোডিং, ডিজাইন ও অ্যানিমেশন শেখানো হবে :শিক্ষামন্ত্রী
এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
৫০ বছরের গৌরব নিয়ে জাবির বাংলা বিভাগ বিশাল ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উৎসব আয়োজন করেছে
আজ আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস, —”পুরুষ ও ছেলেদের সাহায্য করো”
এ মাসেই হতে পারে এসএসসি’র ফল প্রকাশ
এইচএসসি বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা: ৫ শিক্ষক চিহ্নিত
প্রায় ৪ বছর ভারপ্রাপ্ত থেকে পূর্নাঙ্গ প্রক্টর হলেন জাবির আ.স.ম ফিরোজ-উল-হাসান
কারিগরি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা স্থগিত !
সারাদেশে ১২ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসছে রোববার

আর্কাইভ