পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে ‘আত্মঘাতী হামলায়’ নিহত ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তিনটি বোমা ছিল। এরমধ্যে প্রথমটা দরজা ভাঙার সময় বিস্ফোরিত হয়, দ্বিতীয়টি সে নিজে ফাটায় ও তৃতীয়টি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নিষ্ক্রিয় করে।অভিযান শেষে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘তাকে (জঙ্গি) আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। ওই জঙ্গি আমাদের অনুরোধে সাড়া না দিলে আমরা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিই। এ সময় সোয়াটের অভিযানকালে সোয়াট গুলি ছুঁড়লে ভিতর থেকে জঙ্গি গ্যাস ছাড়ে। এর কিছুক্ষণ পর রুমের ভিতরে বিস্ফোরণ হয়। এরপর ওই রুমের দরজা ভেঙ্গে পড়ে। ভিতর থেকে জঙ্গি বের হয়ে আসে এবং পরে আরও একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই বিস্ফোরণ এবং সোয়াটের গুলিতেই মূলত জঙ্গি নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে তার ব্যাগের ভিতর থেকে আরও একটি তাজা বোমা উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। ট্রাভেল ব্যাগে করেই এই বোমা বহন করে নিয়ে আসে জঙ্গি। মোট তিনটি বোমা তার কাছে ছিল।’
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোটেলটি ঘিরে ফেলে। এর পরপরই রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ-গ্রিন রোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আশপাশের প্রতিটি গলিতে সতর্কভাবে অবস্থান নেন পুলিশ ও সোয়াট সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও এনে রাখা হয়। ওই এলাকায় কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে হোটেলটিতে বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে। চারতলা ভবনটির সামনে রাস্তায় দেয়াল ভেঙ্গে পড়া ইটের টুকরো দেখা যায়। নিচ থেকে চতুর্থ তলার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ‘জঙ্গি’ সাইফুলের পা দেখা যায়।
হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। আজ ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। পুলিশের ধারণা, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরিকল্পনা ছিল সাইফুলের।
পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক দুপুরে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ওই যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। এক সময় শিবির করত। আত্মসমর্পণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে সে ‘সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী’ হয়েছে। নিহত ‘জঙ্গি’ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলার পরিকল্পনা করেছিল।
জানা গেছে, জঙ্গি’ সাইফুলের গ্রামের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠিতে গ্রামে। খুলনা বিএল কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন সাইফুল। তিনি খুলনা নগরীর খালিশপুরে নেভি কলোনিতে থেকে লেখাপড়া করতেন। সেখান থেকে গত ৭ আগস্ট চাকরির খোঁজে ঢাকায় আসেন।
তার বাবা আবুল খয়ের নোয়াকাঠি মাঠেরহাট জামে মসজিদের ইমাম এবং ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ বলে জানান ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন। দুইবোন এক ভাইয়ের মধ্যে সাইফুল সবার বড় বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলামের বাবা আবুল খয়ের মোল্লাকে আটক করেছে পুলিশ। ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিল হোসেন বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২১:৫৫ ৮০৬ বার পঠিত