না, ক্ষমতা নয়, মমতাই তোমার সম্পদ
তোমার ভালোবাসা সূর্যের মতো
পৃথিবীর সর্বপ্রান্তকেই আলোকিত করে
কিন্তু যারা অন্ধকারের কীটানুকীট
তারা তাহলে কেন তোমাকে সহ্য করবে?
আর ওরা তো জানেই না, কোনো কোনো মৃত্যু
নিতান্তই অমরত্বের সনদ।
না, অমরত্বের আকাঙ্ক্ষায় কিছুই করোনি তুমি
মনুষ্যত্বের দায় দাবড়ে বেড়িয়েছে তোমাকে
দেশ আর জনতাকে ভালোবাসার অপরাধে
বছরের পর বছর তোমাকে কাটাতে হয়েছে
জেলখানার অভ্যন্তরে
না, সেখানে আষাঢ়ের বৃষ্টি নেই, জোৎস্নার মায়া নেই
কৃষ্ণচূড়া আর জারুলে রাঙিয়ে দেয়া বৈশাখের উজ্জ্বলন্ত কোনো দুপুর নেই,
নেই স্ত্রীর প্রসন্ন মুখ, সন্তানদের কোমল হাতের সৌরভময় ছোঁয়া
তবু তোমার চৈতন্যের স্পর্ধা তছনছ করে দিয়েছে কারাগারের
দেয়াল ও ছাদ
মানুষের ভালোবাসার জোয়ার তুমি অনুভব করেছো তোমার শিরা-উপশিরায়
কেননা ভয়াল এ উপত্যকায় তুমি তাদের দিতে চেয়েছো স্বাধীনতার স্বাদ।
স্বাধীনতা– এই শব্দটিকে ধ্বনি আর বর্ণের কারাগার থেকে তুমি মুক্তি দিলে
আর এ দেশের বঞ্চনা-পীড়িত মানুষদের। তুমি জানতে,
বুকের রক্তে রাজপথ, খেয়াঘাট, মাঠ ও তেপান্তর না রাঙালে
স্বাধীনতা কোনোদিন আলিঙ্গন করে না।
তাই তুমি জানিয়ে দিয়েছিলে, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
আর তোমার স্বপ্ন আমাদের সকলের বুকে মানবমুক্তির বীজ
বুনে দিয়েছিলো। আমরা জেনেছি, টিকে থাকাই বেঁচে থাকা নয়,
পরাধীনতার গ্লানিময় জীবন কী বীভৎস!
আমাদের বিস্ময়ের ঘোর কাটে না, নাবাল ভূমির কাদামাখা
একটি বালক কীভাবে আকাশটাকে মুঠোবন্দি করে
তুলে দিলো জনতার হাতে
না, এ কোনো ইন্দ্রজাল নয়, নিতান্তই মানব-মহিমা
এ কেবল ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির যথোচিত বিস্ফোরণ
বুঝতে পারলাম, আমরা ছিলাম তোমারই অপেক্ষায়
যুগ থেকে যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী
এই প্রথম চিহ্নিত হলো অন্যায়-অত্যাচার আর শোষণের
সীমা ও সীমান্ত। প্রতিবাদে প্রতিরোধে সংগ্রামে অভ্যুত্থানে
আর মুক্তিযুদ্ধে নির্মিত হলো নতুন অধ্যায়।
সদ্যোজাত শিশু থেকে কবরে পা বাড়িয়ে দেয়া বয়োবৃদ্ধ
শরীরের কোষে কোষে অনুভব করলো অনন্য এক স্পন্দন,
আর মনে অবমাননামুক্ত জীবনের অপার আনন্দ।
তোমার মুখের একটি ধ্বনিতে, তোমার তর্জনির একটি ইশারায়
আমরা চিনে নিলাম আমাদের গতি ও গন্তব্য, বুঝে নিলাম
আমাদের অন্তরায় ও কর্তব্য। তোমার চৈতন্যের মহাবৈশ্বিক রশ্মি
আমাদের চেতনায় বইয়ে দিলো ঝড়ো-তাণ্ডব-
জীবনের জন্য আমরা মৃত্যুকে তাচ্ছিল্য করতে শিখলাম
আমরা লড়াই করলাম পৈশাচিক অপশক্তির বিরুদ্ধে
লুণ্ঠিত হলো লজ্জা আমাদের মা-বোনের
আর শত্রুর বুলেট ও বেয়নেটে আমরা ভাসলাম আমাদেরই রক্তের বন্যায়
যুদ্ধ তার চিহ্ন রেখে গেলো আমাদের ছিন্নভিন্ন শরীরে,
কলে-কারখানায়, নদীতে-সেতুতে, গণকবরে, সন্তানহারা মায়ের
গোপন সংবেদনায়
কিন্তু কোনোকিছুই আমাদের হতোদ্যম করতে পারেনি,
কারণ, তুমি আমাদের সকল অনুপ্রেরণার উৎস, পিতা!
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলে আমাদের নতুন জন্ম হলো।
পায়ের নিচে রক্তভেজা উর্বর জমি, মাথার ওপরে মানবিক নীল আকাশ
তার নিচে জলভরা মেঘের ওড়াউড়ি।
হ্যাঁ। আমরা শত্রুকে পরাস্ত করেই আস্বাদন করেছি স্বাধীনতার ঐশ্বর্য।
কিন্তু তুমি কোথায় আঘাত করেছিলে, পিতা?
আমরা কার মসনদ গুঁড়িয়ে দিয়েছিলাম?
ওইসব শোষক আর ধর্মব্যবসায়ী
তাদের কিছু কালো ছায়া রেখে গিয়েছিলো
চোখের জলে সোঁদা হয়ে ওঠা এ দেশেরই মাটিতে
আর আমাদের অলক্ষে তারা বেড়ে উঠলো বিষাক্ত পরগাছার মতো
এবং তারা মধ্য-আগস্টের রাতে কালকেউটে হয়ে ছোবল মারলো
তোমার ও তোমার স্বজনদের বুকে।
এ মহাবিশ্ব এত ঘন ও আঠালো অন্ধকার আর কখনো প্রত্যক্ষ করেনি–
নির্মমতার এমন বিভীষিকা
অপরাধ তো কিছু তোমার ছিলোই পিতা, দেশের মানুষকে
ভালোবাসবার অপরাধ! শোষণমুক্ত এক সমাজের স্বপ্ন দেখবার অপরাধ
গণতন্ত্রের বিস্তার দেখবার সাধের মতো অপরাধ,
ধর্মনিরপেক্ষ এক বাস্তবতা নির্মাণের অপরাধ!
ওরা চেয়েছিলো তোমার রক্তের, তোমার আকাঙ্ক্ষার সব চিহ্ন মুছে দিতে–
তুমি, অন্তর্দীপ্ত আমাদের পিতা, ছড়িয়ে পড়লে আমাদের অনাদি ও অনন্ত চেতনায়
এখানে এখন বজ্রপাতে মানুষ শুনতে পায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে তোমারই আত্মার হুঙ্কার
ঘাসের ডগায় টলমল শিশির মনে পড়িয়ে দেয় স্বদেশ-প্রত্যাবর্তনে
তোমার চোখ বেয়ে নেমে আসা নোনা জল
দিঘির জলে শাদা শাপলা– তোমার ভুবন-ভুলানো মোহন হাসি
পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে বিপ্লবী চেতনায় শাণিত মানুষের সমাবেশ– তোমার বুক
আর তাদের বিজয়– রেসকোর্সের ময়দানে তোমার উত্তোলিত ডান হাত
তুমি বাংলাদেশের মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড, তুমিই বাংলাদেশের হৃদয়
দৃশ্যত তোমাকে ঝাঁজরা করা গেলেও কখনো তুমি নিঃশেষ নও।
না, ক্ষমতা নয়, মমতাই তোমার সম্পদ
তোমার ভালোবাসা সূর্যের মতো পৃথিবীর সর্বপ্রান্তকেই আলোকিত করে
-
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৯:৩১ ৮৯৮ বার পঠিত #bangla news #bangladeshi News #bd news #bongo-news(বঙ্গ-নিউজ) #জাতীয় #শিরোনাম #সাহিত্য