বঙ্গ-নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঘন ঘন বন্যার কবলে পড়লেও এ বছর ঘাটতি মোকাবিলা করতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ করা হচ্ছে। খাদ্য ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত। সতর্কতামূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (এনসিসি) প্রথম সভায় সভাপতির বক্তৃতায় আরো বলেন, ‘বন্যার কারণে ইতোমধ্যেই বিস্তীর্ণ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। আগামীতে বন্যা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে তাই দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকার পরও যে কোন বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে সরকার খাদ্যশস্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এখন পুষ্টি নিশ্চিত করাই প্রধান লক্ষ্য। ‘পুষ্টির সাথে অনেক কিছু সম্পৃক্ত’-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুষ্টির বিষয়ে শহরাঞ্চলে সচেতনতা সৃষ্টি হলেও গ্রামাঞ্চলে জনগণের মধ্যে আরো সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে, যাতে মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণ করে। মাছের উত্পাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যাভ্যাস উন্নত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপতি হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৩ এপ্রিল ‘বাংলাদেশে জাতীয় পুষ্টি পরিষদ’ গঠনের আদেশ স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে প্রথম জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় এবং তাঁর সভাপতিত্বে ১৯৯৮ সালের ১১ আগস্ট বাংলাদেশে জাতীয় পুষ্টি পরিষদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালে সরকার জাতীয় পুষ্টি নীতি অনুমোদন করে। এই নীতি প্রণয়নের সাথে সাথে তা বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে ২০১৬ সালের শুরুতেই দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। শুধু নীতিমালায় আটকে না থেকে পুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পর, এবার সরকারের টার্গেট সবার জন্য সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা।
বৈঠকের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা যে শুধু স্বাধীনতাই দিয়ে গেছেন, তা নয়। তিনি সব কিছু দিয়ে গেছেন। নয় মাসে সংবিধান দিয়ে গেছেন।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেন, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করে, তখন দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ৪০ লাখ টন।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকীসহ সংশ্লিষ্ট সচিববৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর খুনি নুর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর আহবান পুনর্ব্যক্ত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে কানাডার প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কানাডার বিদায়ী হাই কমিশনার বোনইু-পিয়েরে লারামি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলে তিনি এই আহ্বান জানান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিচারের মুখোমুুখি হওয়ার ভয়ে নুর চৌধুরী দেশ থেকে পালিয়ে যায় এবং বর্তমানে কানাডার ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্ট ল’এর সুযোগ নিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। কানাডার হাই কমিশনার বলেন, তিনি বাংলাদেশের কথা কানাডার যথাযথ কতৃর্পক্ষকে অবহিত করবেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
আগামী নির্বাচনের বিষয়টিও তাঁদের আলোচনায় স্থান পায় উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, তাঁরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বচ্ছ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়েও মত বিনিময় করেন।
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৪:২৮ ৫৬০ বার পঠিত