বঙ্গ-নিউজ: চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর আজ রবিবার রায় ঘোষণা করবে হাইকোর্ট। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের আজকের দৈনন্দিন কার্যতালিকার এক নম্বর ক্রমিকে মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আপিল রায় ঘোষণার জন্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিম্ন আদালতের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, সাত খুনের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িত। এদের দায়িত্ব ছিলো নাগরিকের জীবন রক্ষার। কিন্তু সেটি না করে তারা সাতজন নিরীহ নাগরিককে নির্মমভাবে প্রথমে ইনজেকশন পুশের মাধ্যমে অচেতন করে মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। এই পূর্ব পরিকল্পিত খুন ক্ষমার অযোগ্য। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা যে বাহিনীর সদস্যই হোক না কেন কেউ যে আইনের ঊর্ধ্বে নয় এটা প্রমাণে ২৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা প্রয়োজন। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা মনে করছেন, এই মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোনো সাক্ষী নেই। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর নির্ভর করে আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। ফলে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চ আদালতে টিকবে না।২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডের ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে ৬ জনের ও পরদিন আরেকজনের লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহত নজরুলের স্ত্রী বিউটি ও চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুইটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় গত ১৬ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর বরখাস্তকৃত লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। বাকি নয় জনকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডিতদের ২৫ জনই সেনা ও নৌ বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে প্রেষণে র্যাব-১১তে কর্মরত ছিলেন। সাত খুনের মামলার পর তাদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়, এই মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সশস্ত্র ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য। বাকিরা সাধারণ মানুষ। এই অপরাধ সাধারণ ও শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মিলে করেছে। এটা একটি জাতির জন্য খুবই কলঙ্কজনক যে, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই জঘন্য অপহরণ, হত্যা এবং প্রমাণ গায়েব করার কাজ করেছে। তারা উভয় গ্রুপ লাভবান হওয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। রায়ে বলা হয়, র্যাব একটি প্রশংসিত এলিট ফোর্স। র্যাব-১১তে প্রেষণে আসা কিছু উচ্ছৃঙ্খল এবং বিবেকবর্জিত অপরাধীর কারণে র্যাবের সম্মান নষ্ট হতে পারে না। আমাদের কাছে র্যাব ‘দায়িত্বশীলতার’ প্রতীক। একই সঙ্গে র্যাব সক্ষমতা ও মঙ্গল সাধনের প্রতীক। যাত্রার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের অনেক জাতীয় সংকটে র্যাব অনেক সফলতা অর্জন করেছে। র্যাবের কর্মকর্তা ও সদস্যরা যারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত এটা তাদের ব্যক্তিগত দায়। কোনো ব্যক্তি বিশেষের অপরাধের জন্য পুরো এলিট ফোর্স কোনো ভাবে সমালোচনার শিকার হতে পারে না। তাই প্রেষণে কোনো কর্মকর্তা ও সদস্যকে নিয়োগ দেওয়ার আগে কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি সজাগ থাকা উচিত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে যারা কারাবন্দি তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডের রায় অনুমোদনের জন্য নথি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে। এরপরই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এই মামলা দ্রুত শুনানির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেয়। পরে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা থেকে পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য মামলার সকল নথি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। ২৬০০ পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করে বিজি প্রেস কর্তৃপক্ষ তা হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেয়। এরপরই ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য বেঞ্চ পুনর্গঠন করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গত ২২ মে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ ৩৩ কার্যদিবসব্যাপী শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই হাইকোর্ট রায় ঘোষণার জন্য ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৭:২১ ৪১৯ বার পঠিত