বঙ্গ-নিউজ: দুপুর সাড়ে ১২টা। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ফিশারি ঘাট। সমুদ্রফেরত জেলেদের হাঁক-ডাক। মুখে হাসি। চারপাশে রূপালি ইলিশের ছড়াছড়ি। কথা হয় জলিলগঞ্জের জেলে মনিরের সঙ্গে। বললেন, ‘এবার মনে হয় আল্লাহ মুখ ফিরে তাকাইছে।’
জানা গেছে, জেলেরা সাগরে জাল ফেলতেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এগুলো আকারেও বড়। এমন রূপালি ইলিশে হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। চট্টগ্রামে মাছের সবচেয়ে বড় মোকাম ফিশারি ঘাটসহ আরও বেশ কয়েকটি স্থানে মিলছে এমন রূপালি ইলিশ। ফিশারি ঘাট থেকে এসব মাছ আবার চলে যাচ্ছে জেলার ১৪টি উপজেলাসহ আরও কয়েকটি স্থানে। বর্তমানে এ পাইকারি মোকামে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩৫ মণ পর্যন্ত ইলিশ মাছ বেচাকেনা হচ্ছে। এদিকে ইলিশের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও পড়তির দিকে। কয়েকদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে আকারভেদে ইলিশের দাম মণপ্রতি কমেছে তিন থেকে ছয় হাজার টাকা। নির্দিষ্ট সময় ইলিশ ধরা নিয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের কড়াকড়ি আরোপের কারণেই ইলিশের উৎপাদন আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ফিশারি ঘাটের সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কয়েক বছরের তুলনায় এবার প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ইলিশ আকারে অনেক বড়। দামও কমতির দিকে।’ ফিশারি ঘাটের আড়তদাররা জানান, জেলার ১৪টি উপজেলাসহ চট্টগ্রাম নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, ষোলশহর কাঁচাবাজার ফিরিঙ্গী বাজার, কর্ণফুলী মার্কেট, হালিশহর ফইল্যাতলী বাজার, কাজির দেউড়ি বাজার, চকবাজার, বশিরহাটসহ ছোট-বড় প্রায় অর্ধশতাধিক বাজারে যাচ্ছে এখানকার ইলিশ। জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, জাটকা ধরা নিয়ে কড়াকড়ির কারণেই বর্তমানে বড় আকৃতির ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে ফিশারি ঘাটের প্রতিটি আড়তে ইলিশের পসরা সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। এ সময় যার যার চাহিদামতো ইলিশ কিনে পিকআপ কিংবা ঠেলাগাড়িতে সাজাতে ব্যস্ত থাকতেও দেখা গেছে। ঠেলাগাড়িতে ‘ইলিশের ফুল’ সাজিয়ে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিশেষ এ কায়দায় ইলিশ মাছের মাথা বৃত্তাকারে থাকে গাড়ির বাইরের অংশে। আর লেজ থাকে গাড়ির ভেতরের দিকে, যা দূর থেকে দেখতে অনেকটা ফুলের মতো দেখায়।
ফিশারি ঘাটের আড়তদার টিটু দাশ বলেন, ‘মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ইলিশের সরবরাহ দ্বিগুণ বেড়েছে। আগের চেয়ে অনেকটা বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বড় আকারের ইলিশ প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ২২ হাজার টাকায়, যা দু-তিন দিন আগেও ২৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি আকৃতির ইলিশে মণপ্রতি পাঁচ হাজার এবং ছোট আকৃতির ইলিশে তিন হাজার টাকা করে দাম কমেছে। এ দুই আকৃতির ইলিশ বর্তমানে প্রতিমণে বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ১৭ হাজার ও ১২ হাজার টাকা দরে।’
সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে যে হারে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলেও দাম আরও কমে যাবে। আনোয়ারার কৈনপুরা থেকে ইলিশ কিনতে আসা মো. তুরাজ বলেন, ‘রূপালি ইলিশের ধুম পড়ায় এখানে এসেছি। কম টাকায় ১০ কেজি ইলিশ কিনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’ সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগেও দেশের মাত্র ২১টি উপজেলার নদীতে ইলিশ পাওয়া যেত। বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে ১২৫টি উপজেলার নদীতে। জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির শুরুতে চট্টগ্রামে একটি জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। এখন চাল দেওয়া হচ্ছে ৪০ কেজি করে। জাটকাবিরোধী অভিযান আগে বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হলেও এখন সমন্বিতভাবে বিভিন্ন সংস্থা দায়িত্ব পালন করছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে ইলিশের ব্যাপারে জনসচেতনতাও বেড়েছে, যার সুফল পাওয়া যাচ্ছে উৎপাদনে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৩:১০ ৫৩০ বার পঠিত