বঙ্গ-নিউজঃ নারী-পুরুষ সাম্যের প্রশ্নে বারবার যে বিষয়টি সামনে এসেছে, তা হলো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা। সমাজের এমন কোনো স্তর নেই যেখান থেকে এ ধরনের সংশয় প্রকাশ করা হয়নি। যদিও অগ্রসর মানুষ মাত্রই জানেন এটি পুরুষাধিপত্য বজায় রাখার একটি কৌশল মাত্র। বহু আগে থেকেই তারা বলছেন, সভ্যতার ইতিহাসে নারী-পুরুষ উভয়েরই সমান অবদান। যারা এ সত্যই মানতে রাজি নন, তাদের জন্য দুঃসংবাদ হচ্ছে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মস্তিষ্কের সক্রিয়তার দিক থেকে নারী বরং পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
নারী-পুরুষ সাম্যের প্রশ্নে উন্নত বিশ্বের ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করলেই বিজ্ঞানীদের এ বক্তব্যের গুরুত্বটি অনুধাবন করা সম্ভব। সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী খ্যাত সিলিকন ভ্যালিও উন্মাতাল হয়ে উঠেছে এ সাম্যের প্রশ্নেই। এমনকি প্রযুক্তি বিশ্বের নেতৃত্ব দানকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান গুগলের এক প্রকৌশলীকেও সম্প্রতি ছাঁটাই হতে দেখা গেছে নারী-বিষয়ক পুরোনো ধ্যানধারণা পোষণের কারণে। আর ঠিক এ সময়েই গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণার ফলাফল সামনে নিয়ে এসেছে জার্নাল অব আলঝেইমার’স ডিজিজ। গত ৭ আগস্ট এ-বিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে সায়েন্সডেইলি।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার আমেন ক্লিনিকস ইনকরপোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জি আমেন এ গবেষণা পরিচালনা করেন। এতে নয়টি ক্লিনিকের কাছ থেকে পাওয়া মোট ৪৬ হাজার ৩৪ ব্যক্তির মস্তিষ্কের স্পেক্ট (সিংগেল ফোটন এমিশন কম্পিউটেড টমোগ্রাফি) ইমেজ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
স্পেক্ট ইমেজিং হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে তেজস্ক্রিয় রাসায়নিকের সাহায্যে শরীরের কোনো একটি অঙ্গে বা টিস্যুতে রক্ত সঞ্চালন হার ও পর্যবেক্ষণ করা হয়। শরীরের কোনো একটি অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন হারই ওই অঙ্গের সক্রিয়তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। কারণ কোষের ক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পরিবহন করে রক্ত।
গবেষণাটিতে প্রতিটি মস্তিষ্কের মোট ১২৮টি অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পুরুষের তুলনায় নারীদের মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি। এ বিষয়ে প্রধান গবেষক ড্যানিয়েল জি আমেন বলেন, ‘নারী ও পুরুষের মস্তিষ্কের পার্থক্য অনুধাবনে এ গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আমাদের সামনে হাজির করেছে। একই সঙ্গে এটি লৈঙ্গিক ভিন্নতার কারণে কার কতটা মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাও উন্মোচন করে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর মস্তিষ্কের বেশ কিছু অংশ পুরুষের অনুরূপ অংশের চেয়ে বেশি সক্রিয়। বিশেষত নারীর প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স বা অগ্রমস্তিষ্ক পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি সক্রিয়। মস্তিষ্কের এ অংশটি মনোযোগ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ছাড়া মস্তিষ্কের অনুভূতি সংশ্লিষ্ট অংশ লিমবিকের সক্রিয়তাও নারীদেরই বেশি। এ কারণে পুরুষের তুলনায় নারীদের আবেগ ও উদ্বেগের মাত্রা দুইই বেশি হতে দেখা যায়। তবে মস্তিষ্কের দর্শনেন্দ্রীয় সংশ্লিষ্ট অংশের দিক থেকে পুরুষ এগিয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জার্নাল অব আলঝেইমার’স ডিজিজের প্রধান সম্পাদক ও টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব সায়েন্সেসের ডিন ড. জর্জ পেরি সায়েন্সডেইলিকে বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ গবেষণা ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের নিজেদের সঙ্গীকে অনুধাবনের ক্ষেত্রেও সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:২৩:৪১ ৫৭৩ বার পঠিত