বঙ্গ-নিউজঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) জোরদার এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম জাতি গঠনে ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করেছেন।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ আজ বলেন, ঘূণিঝড়, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও সম্পদহানি কমিয়ে আনার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলায় দেশকে সক্ষম করে তুলতে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধু বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৩-’৭৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৯৯৫ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে এর মধ্যে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় ১৯৭৪ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পুনর্বাসনের জন্য।
রিয়াজ বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু যেভাবে অগ্রাধিকার দিয়েছেন, সেটি ছিল ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ। সরকারি নথিপত্রে দেখা যায়, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সিপিপি গঠন ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি সাহসী পদক্ষেপ। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাত্র দেড় বছর সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর একক চেষ্টায় অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ও সিপিপির কার্যক্রম অক্ষুণ্ন রেখে অর্থনৈতিক বাধা কাটিয়ে উঠতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোশকতা অব্যাহত রেখেছেন।
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়ঙ্কর ঘূণিঝড়ে সাড়ে তিন লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে এবং বিপুল সম্পদ বিনষ্ট হয়। ঘূণিঝড় এক ঘন্টারও কম সময় স্থায়ী হয়েছিল তবে এতে লাখ লাখ লোক গৃহহীন হয়ে পড়ে। বাঙালি জাতির জন্য এটি ছিল এক মর্মান্তিক ইতিহাস। এই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে জীবন ও সম্পদহানিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই বেদনাহত হয়েছিলেন।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শাসকদের ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সিডিউল বদলাতে চাপ প্রয়োগে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। পরে এই নির্বাচন ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
রিয়াজ আহমেদ আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা চালান। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি বিশেষ করে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ ঘরবাড়ি ও সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। আগে ও পরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন মাত্রার আড়াই শতাধিক ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি ঘূর্ণিঝড় ছিল ভয়ঙ্কর শক্তিশালী, যাতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি, লাখ লাখ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত এবং লাখ লাখ একর জমির শস্য বিনষ্ট হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৬২, ১৯৬৩ এবং ১৯৬৫ সালে তিনটি ঘূণিঝড়ে এক লাখের বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে।
এই তিনটি ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করে ১৯৬৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক সিদ্ধান্তে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দিতে লীগ অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে (এলওআরসিএস) নির্দেশ দেয়া হয়।
১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এবং ধ্বংসযজ্ঞ দেখে বঙ্গবন্ধুর হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল এবং তিনি উপকূলীয় এলাকার এই ভয়াবহতার কথা কখনো ভুলে যাননি। তাই লীগ অব রেডক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বাংলাদেশ রেড ক্রসের সহায়তায় বঙ্গবন্ধু ঘূণিঝড় প্রস্তুত কর্মসূচি (সিপিপি) গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সিপিপি শুরু করার সাথে সাথে একটি কার্যকর ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির উপায় বের করতে একটি সমীক্ষা চালান। এই সমীক্ষায় একটি কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। এই কার্যক্রমে তরুণ-যুব শক্তি হবে চালিকা শক্তি। সিপিপি’র জন্য বঙ্গবন্ধুর আর্থিক সহযোগিতার অঙ্গীকার ২০,৪৩০ জন স্বেচ্ছাসেবককে মানবিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করে।
জাতিসংঘের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু মাটির দুর্গ তৈরি করেন যা স্থানীয়ভাবে ‘মুজিব কেল্লা’ হিসেবে পরিচিত। এই দুর্যোগকালে লোকজনের আশ্রয় নেয়ার পাশাপাশি তাদের গবাদিপশু নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার লক্ষ্যে এই কেল্লা তৈরি করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর এই পথিকৃতের ভূমিকা পালনের কারণে বাংলাদেশ আজ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮:০৯:২০ ৪৪৭ বার পঠিত