
মু.তরিকুল ইসলামঃবঙ্গ-নিউজ: অধীর উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ২৮ জুলাই, ২০১৭ শুক্রবার মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজি (এম,আই,এস,টি) ক্যাম্পাসে এম,আই,এস,টি লিটারেচার এন্ড কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হয়ে গেল আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক উৎসব “অঙ্কুর -২০১৭”। বাঙ্গালী সংস্কৃতি সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বেশ প্রশংসনীয়। এ সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষায় তরুণ সমাজকেই পদক্ষেপ নিতে হবে - এ ভাবনাকে মাথায় নিয়েই এম, আই, এস, টিলিটারেচার এন্ড কালচারাল ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিলো “অঙ্কুর-২০১৭” ।
উৎসবে মোট ৯টি ইভেন্টে প্রায় ১০০০জন প্রতিযোগি ৩০ টির ও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহন করে।সকাল ১০টায় মাল্টিপারপাস হলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব।দেশ বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আলোকিত করেন পুরো উৎসবটিকে।সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এমপি উৎসবের প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এম আই এস টির শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় একটি ছোট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিবেশনা ছিল - যন্ত্রসঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা, বাকের ভাইকে নিয়ে একটি খন্ডনাটক, হুমায়ূন আহমেদের স্মরণে গান ইত্যাদি।এরপর বিশেষ অতিথি এবং অন্যান্য অতিথিগণ মন্ত্রী মহোদয় এর হাতে ক্রেস্ট ও স্মারক তুলে দেন এবং ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর তিনি উদ্বোধনী বক্তব্য দেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে মন্ত্রীওইউৎসবেআগতবিভিন্নবিশ্ববিদ্যালয়েরছাত্রছাত্রীদেরসুস্থসংস্কৃতিরউন্নয়নেরমাধ্যমেদেশেরঅগ্রযাত্রাঅব্যাহতরাখারআহ্বানজানান।সংস্কৃতিনাগরিকজীবনেরপ্রতিচ্ছবি।মন্ত্রী বলেন “সুস্থসাংস্কৃতিককর্মকাণ্ডেরমাধ্যমেসামাজিকআন্দোলনগড়েতোলাযায়।”এছাড়াও তিনি বক্তব্যে ছাত্রদের মাঝে জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়া এবং হোলি আর্টিজানের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন এবং অভিভাবকদের সন্তানের শিল্প-সাহিত্য চর্চায় বাধাদানকেও সামলোচনা করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন “আইনস্টাইনএরমতমানুষযদিবেহালাবাজানোরসময়পান, আপনিআপনারছেলেবামেয়েকেকীএমনমহাপণ্ডিতবানাচ্ছেনযেপড়াশুনারবাইরেআরকিছুইকরারসময়পায়না”
(বিপুল করতালির মাধ্যমে উপস্থিত শিক্ষার্থীগণ উনার বক্তব্য কে স্বাগত জানান, এতে বোঝা যায় বাকের ভাই এখনো তরুণ সমাজে কতটা জনপ্রিয়)
এ ক্লাবের দল আনন্দলোকের প্রথম প্রকাশনা হিসেবে বের হয়েছে ম্যাগাজিন ‘ওঙ্কার’। মাননীয় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ওঙ্কারের মোড়ক উন্মোচন করেন। ম্যাগাজিন ওঙ্কার এর সম্পাদক এর দায়িত্ব পালন করেন মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল ইসলাম রাফি। ওঙ্কার প্রকাশের আগে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিস্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখা পাঠানোর আহ্বান করা হয়েছিলো এবং সেসব লেখা নিয়েই সাজানো হয়েছে ম্যাগাজিনটি। উৎসবটি সম্পর্কে ক্লাবের সহসভাপতি মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীসত্যব্রত দাস জানান উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে সব প্রতিযোগিতায় সর্বমোট প্রাইজমানি, যা ছিল প্রায় দুই লক্ষ টাকা।ক্লাবের অপর সহসভাপতি মনিষা পারমিতা জানান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্র প্রতিযোগিতায় বিজয়ীকে প্রজন্ম টকিজে ইন্সটার্নশিপ দেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীকক্ষগুলোতে এবং হলওয়েতে বিভিন্ন সেগমেন্ট অনুষ্ঠিত হয় । উৎসবে ছিল মোট নয়টি সেগমেন্ট- কথোপকথন, বাংলা সাহিত্য অলিম্পিয়া্ড, গল্পপূরণ, কুইজ, ফটোটেল, ক্যানভাসে আঁকি, কালচারাল কেস কম্পিটিশন, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচিত্র প্রতিযোগিতা এবং উৎসবের প্রধান আকর্ষণ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগতা রংমেশালি । এতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন - বাংলা ব্যান্ড চিরকুট, প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্য পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম এবং শিহাব শাহীন, শ্রদ্ধেয় অভিনেতা হাসান ইমাম এবং লায়লা হাসান প্রমুখ। উদ্বোধনীঅনুষ্ঠানেআরোউপস্থিতছিলেনবিশিষ্টনাট্যব্যক্তিত্বশহিদুলআলমসাচ্চু। এছাড়াও ভিডিও মেসেজের মাধ্যমে অঙ্কুর কে শুভেচ্ছা জানান অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেত্রী মম, জলের ব্যান্ডের রাহুল আনন্দ, নির্মাতা গিয়াসুদ্দিন সেলিম প্রমুখ।
সকাল আটটা থেকে রাত অবধি চলে এ উৎসব। উৎসব নিয়ে ক্লাবের সভাপতি সিভিল ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আহমেদ সাদমান রাফিদ জানান, “আমাদের ক্লাবের মূল কথা হচ্ছে-শেকড়ের তরে, আমরা যারা আমাদের শেকড় অর্থাৎ বাঙালি সত্তা কে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, তাদের জন্যই এই ক্লাব, তাদের জন্যই এই উৎসব “
ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সহসভাপতিগণ ও উপস্থিত ছিলেন এবং বিগত সভাপতি রিজাল কবীর এবং সামিন রহমানকে তাদের অবদানের জন্য ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি এবসানা সারিয়া অঙ্কুর ২০১৭ নিয়ে বলেন, ” অঙ্কুর এম আই এস টি লিটারেচাল এন্ড কালচারাল ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের স্বপ্ন ছিল এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে হাজার যান্ত্রিক মনের মাঝেও যে কিছু শুদ্ধ সাংস্কৃতিক মনএখনো টিকে আছে, তাদের জন্য অঙ্কুর একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। ভবিষ্যতে এ অঙ্কুর আরো বিস্তৃত হবে এ স্বপ্ন ই আমাদের সবার।
বাংলাদেশ সময়: ০:০৭:৪০ ১৫৪০ বার পঠিত