ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার ইউএনও:জেলহাজতে প্রেরণ ও পরে জামিন

Home Page » জাতীয় » ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার ইউএনও:জেলহাজতে প্রেরণ ও পরে জামিন
শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭



---
বঙ্গ-নিউজ: গাজী তারিক সালমান এখন সারা দেশে এক আলোচিত নাম। তিনি বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত ও অবমাননা করেছেন। বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গাজী তারিক সালমান ওই অবমাননা করেন বলে অভিযোগ আনা হয়। ওই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় হাজিরা দিতে গেলে গত বুধবার বরিশালের এক আদালত প্রথমে তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে জেলহাজতে পাঠান। পরে ওই দিনই তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়।

জানা গেছে, গাজী তারিক সালমান আগৈলঝাড়ায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও উন্মুক্ত রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় আগৈলঝাড়ার এসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারের জন্য দুই শিশুর হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোর্তজা খান। পুরস্কার পাওয়া দুটি ছবির মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয় আমন্ত্রণপত্রে। সেটি নিয়েই বরিশাল আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে মামলা করেন

দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ নাগরিকরা বলছে, মানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত করতে হলে শিশুদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ তুলে ধরতে হবে। এ জন্য চিত্রাঙ্কন, লেখালেখি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠসহ সাংস্কৃতিক আয়োজন দরকার। ইউএনও গাজী তারিক সালমান যা করেছেন তা খুবই ইতিবাচক। শিশুদের মধ্যে এ ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরো বেশি হওয়া উচিত বলেও তারা মত দেয়।

জানা গেছে, ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মামলার নেপথ্যে রয়েছে সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর ব্যক্তিগত রোষ। তারিক সালমান আগৈলঝাড়ায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এতে বহু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়েন। নকল প্রতিরোধেও তিনি ছিলেন সোচ্চার। টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে বেশ কিছু অনিয়মের বিষয়ে ছিলেন কঠোর। এসব নিয়ে সেখানকার বহু লোকের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন তারিক সালমান। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেলিফোনে গাজী তারিক সালমান গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এর আগে আমি যেখানে কর্মরত ছিলাম সেখানে চেষ্টা করেছি আমার ওপর অর্পিত সরকারি দায়িত্ব পালন করতে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেশ কিছু অভিযান চালিয়েছি। টিআর, কাবিখা প্রকল্পের কাজ কঠোরভাবে তদারকি করায় আমাকে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির রোষানলে পড়তে হয়। তারা আমার কোনো দুর্নীতি খুঁজে না পাওয়ায় এখন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ‘

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক শিক্ষার্থী গাজী তারিক সালমান কবিতা লেখেন। লেখালেখির অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই। ২০১৬ সালে একুশের বইমেলায় ‘সহজ প্রেমের কবিতা’ নামে তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থও বেরিয়েছে।

তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘আমি ছবিটি দেখেছি। বাচ্চাদের একটি প্রতিযোগিতা ছিল, সেই প্রতিযোগিতায় যে ছবি দুটি প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে তা আমন্ত্রণপত্রে ছাপানো হয়েছে। এ ছবি দুটি অত্যন্ত সুন্দর। যে গর্দভ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সে অত্যন্ত খারাপ করেছে। আমি মনে করি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খুবই ভালো কাজ করেছেন, বাচ্চাদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি আঁকিয়ে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আমন্ত্রণপত্র করায়। ‘

এক প্রশ্নের জবাবে নিসার হোসেন বলেন, ‘যে ছবিটি প্রথম হয়েছে সেটি মুক্তিযুদ্ধের একটি গেরিলা অ্যাকশনের ছবি। মামলাকারী ব্যক্তি প্রশ্ন তুলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি প্রথম পুরস্কার না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ছবি কেন প্রথম পুরস্কার দেওয়া হলো? এই বক্তব্য ঠিক না। প্রথম পুরস্কার দেওয়া ছবিটি যথাযথ ছিল। কারণ মুক্তিযুদ্ধ না হলে বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু হতেন না। সবার আগে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ‘ শিল্পমানের বিচারেও ছবি দুটি অনেক ভালো হয়েছে বলে এই অধ্যাপক মন্তব্য করেন।

ফেসবুকে নিন্দার ঝড় : ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর মামলায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তি। নাদিয়া ইসলাম তাঁর ফেসবুক ওয়ালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে বলেন, ‘বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহর বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখলের বহু রেকর্ড আছে, যা গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশের মানুষ জানে। তিনি ৫টি, মতান্তরে ৭টি বিয়ে করার পরও কিভাবে ধর্ম সম্পাদক পদ পান?’

গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার লিখেছেন, ‘লুটেরা, সন্ত্রাসী আর চাটার দলদের কবল থেকে জনতার মুজিবকে মুক্ত করাই আগামীর চ্যালেঞ্জ। শেখ মুজিব সমভাবে সকলের। বঙ্গবন্ধু বাঙালি হূদয়ের নিকটতম আপনজন। আমাদের রংতুলিতে আমরা প্রিয় পিতাকে আঁকবোই। ভয় হয়ে নয়, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন ভালোবাসা হয়ে। ‘

নিশাদ হক ফেসুবকে লিখেছেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দিবসে প্রতিবন্ধী শিশুদের অঙ্কন করা ছবি ব্যবহার করেন। এখানে কি ছবিগুলোর শিল্পগুণ যাচাই করা হয় না! শিশুদের মানসিক বিকাশের দিকে লক্ষ রেখে এসবে উৎসাহ দেওয়া হয়। এখানে মামলাবাজির কী আছে? মামলাবাজ উকিল রাজনৈতিক সুনজরে অথবা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়ে সুযোগ নিয়েছেন। ইউএনও মহোদয় সঠিক কাজই করেছেন এবং এ ধরনের ভালো উদ্যোগ চালিয়ে যাবেন আশা রাখি। ‘

বাংলাদেশ সময়: ৮:৫৭:৩০   ৬১৪ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ