বঙ্গ-নিউজ: এত দিন কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছিলেন না বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন। মেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর চোখে এখন আশার আলো। মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস পাচ্ছেন তিনি। বললেন, মেয়ে আগের চেয়ে ভালো। সে যদি পুরোপুরি সুস্থ হয়, তাহলে তাকে চিকিৎসক বানাতে চান তিনি।১২ বছর বয়সী মুক্তামণি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকেরা এখনো তার রোগ শনাক্ত করতে পারেননি। তাই প্রতিদিনই চলছে মুক্তামণির নানান শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
সাতক্ষীরার কামারবাইশালের মুদি দোকানি ইব্রাহিম হোসেনের দুই মেয়ে হীরামণি ও মুক্তামণি। তারা যমজ দুই বোন। হীরামণি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও মুক্তামণি বিরল রোগে আক্রান্ত।
পরিবার জানায়, জন্মের দেড় বছর পর থেকে মুক্তামণির ডান হাতের সমস্যার শুরু। প্রথমে হাতে টিউমারের মতো হয়। ছয় বছর বয়স পর্যন্ত টিউমারটি তেমন বড় হয়নি। কিন্তু পরে মুক্তামণির ডান হাতটি ফুলে অনেকটা কোলবালিশের মতো হয়ে যায়। মুক্তামণি বিছানাবন্দী হয়ে পড়ে। হাতে পুঁজ জমে থাকায় তা থেকে সব সময় দুর্গন্ধ বের হতো। সাতক্ষীরা, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানান চিকিৎসা চলে তার। তবে ভালো হয়নি বা ভালো হবে, সে কথা কেউ কখনো বলেননি।
মুক্তামণির রোগ নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। ব্যাপক আলোচনা চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ১১ জুলাই মুক্তামণিকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তামণির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন মুক্তামণি l গতকাল রোববার মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘আমার মেয়েটার চোখেও বহুত স্বপ্ন। মেয়ে বলে ভালো হলে সবাই একসঙ্গে বেড়াতে যাবে। ওর যমজ বোনরে ডাকে আপা। এই আপার সঙ্গে স্কুলে যাবে। এক বছরের বেশি বয়সী ভাইটারে এখন পর্যন্ত কোলে নিতে পারেনি, একমাত্র ভাইটারে কোলে নিবে। ওর মনে অনেক আশা।’
মেয়েকে নিয়ে নিজের দেখা স্বপ্ন নিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘ডাক্তারদের কাছ থেকে মেয়েটা অনেক অবহেলা পাইছে। বিভিন্ন জায়গায় গেলেও ডাক্তারদের ভুল ট্রিটমেন্টে মেয়ের আজ এই দশা। মেয়েও বলে, ও ভালো হলে ডাক্তার হবে। তকদিরে থাকলে মেয়ে ভালো হলে আমিও চাই মেয়ে ডাক্তার হবে।’
বার্ন ইউনিটে ভর্তির আগে মুক্তামণির হাত থেকে সব সময় দুর্গন্ধ বের হতো। তবে এখন হাতটি ব্যান্ডেজ করে রাখার কারণে তেমন কোনো গন্ধ বের হচ্ছে না বলে জানালেন ইব্রাহিম। তিনি আদর করে তাঁর দুই মেয়েকে ডাকেন ‘আম্মুজান’।
হীরামণি এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। মুক্তামণি স্কুল থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনেছিল, কিন্তু তার আর স্কুলে যাওয়া হয়নি।
বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেনও বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকদের অবহেলায় মুক্তামণির এই অবস্থা হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, মুক্তামণির হাতের এই অবস্থা এক দিনে হয়নি। এখন হাতের ভারে তার শরীরটাই বাঁকা হয়ে গেছে। এত দিন সঠিকভাবে কোনো চিকিৎসাই হয়নি তার।’
সামন্ত লাল সেন আশাবাদী, মুক্তামণি সুস্থ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০২:১৮ ৪৮৯ বার পঠিত