বঙ্গ-নিউজঃ উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের অনশন দ্বিতীয় দিনেও অব্যাহত রয়েছে। এদিকে মামলা প্রত্যাহার সম্ভব নয় বলে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে আমরণ অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ রোববার দুপুরে জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা একটায় শুরু হওয়া এই সভা শেষ হয় বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে। সভা শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘মামলার বাদী রাষ্ট্র। এটি আমাদের পক্ষে প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়।’
উপাচার্য আরও বলেন, অনশন প্রত্যাহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে সিন্ডিকেট থেকে। এ বিষয় নিয়ে যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশোভন কথাবার্তা লিখছেন, তাঁদেরও সিন্ডিকেট থেকে সতর্ক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ‘প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক নজির আমিন জয় বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রশাসন তার ক্রোধকেই জিইয়ে রাখছে। প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তে পর আমাদের অনশন অব্যাহত থাকবে।’
মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত ব্যানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের অবস্থান আগের মতোই থাকবে। আগামীকাল দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা জানানো হবে।’
আজ বিকেলে শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, চারজন শিক্ষার্থী অনশনে রয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে অনশনে যোগ দেন আইন ও বিচার বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খান মুনতাসির আরমান। এর আগে গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত অনশনকারী শিক্ষার্থী ছিলেন তিনজন। তাঁরা হলেন ছাত্র ইউনয়নের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ও ইংরেজি বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সরদার জাহিদুল ইসলাম, একই বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিনা জামান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পূজা বিশ্বাস। এঁদের মধ্যে জাহিদুল ও পূজার নামে মামলা রয়েছে। অন্য দুজনের বিরুদ্ধে মামলা নেই।
জানতে চাইলে পূজা বলেন, ‘প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত থেকেই বোঝা যায় তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল। আমাদের অনশন অব্যাহত থাকবে।’
গত ২৬ মে ভোরে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। ওই দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ঘাতক চালকের শাস্তি এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে পরের দিন ২৭ মে বেলা পৌনে ১১টা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেলে পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই ৩১ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪০-৫০ জনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করে প্রশাসন। তখন থেকেই শিক্ষকদের একটি অংশ এবং শিক্ষার্থীরা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। এ ছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ ও প্রতিবাদের নাম জাহাঙ্গীরনগর এ দুটি ব্যানারে মৌন মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করে যাচ্ছেন তাঁরা।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৩:১৪ ২৮৪ বার পঠিত