মাংস বিক্রির স্বার্থে গবাদিপশুর কেনাবেচায় কেন্দ্রীয় সরকারের নিষেধাজ্ঞা আপাতত সারা ভারতেই স্থগিত থাকছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল মঙ্গলবার ওই নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জগদীশ সিং খেহর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ ওই নির্দেশ জারি করে বলেন, মাদ্রাজ হাইকোর্ট এ বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তা আপাতত সারা দেশে বলবৎ হবে।
সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, নানা মহলে আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে তারা আগের নির্দেশে পরিবর্তন আনছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট জানান, সেই পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আগের সরকারি নির্দেশ দেশের সর্বত্র স্থগিত থাকবে।
চলতি বছরের ২৩ মে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় গবাদিপশু কেনাবেচা নিয়ে ওই নিয়ম জারি করেছিল। তাতে বলা হয়, কসাইখানায় বিক্রি করার জন্য গরুর হাট থেকে গবাদিপশু কেনাবেচা চলবে না। এই সব হাটে-বাজারে গবাদিপশুর ক্রেতা ও বিক্রেতা দুই পক্ষকেই উপযুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। নির্দেশে এ কথাও বলা হয়েছিল, এই সব পশু-বাজারের অবস্থান রাজ্যের সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে হতে হবে। নির্দেশ জারির প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর সরকার আপত্তি জানায়। আপত্তি ওঠে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো থেকেও। কেন্দ্রীয় নির্দেশের বিরোধিতাকারী রাজ্যগুলোর যুক্তি, ওই নির্দেশ বহু মানুষের রুজিরোজগার যেমন বন্ধ করে দেবে, তেমনি বাধার সৃষ্টি করবে বহু মানুষের খাদ্যাভ্যাসে। তামিলনাড়ুতে মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। হাইকোর্ট চার সপ্তাহের জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশ গোটা রাজ্যে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।
এরই পাশাপাশি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। ২৩ মে হায়দরাবাদের আইনজীবী মহম্মদ আবদুল ফাহিম কুরেশি এই মামলা দায়ের করে বলেন, এই নির্দেশ ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থীই শুধু নয়, একতরফাও। সারা দেশে এই নির্দেশ এক প্রবল আর্থিক ও ধর্মীয় সংকটের সৃষ্টি করবে। যে ধর্মে পশু উৎসর্গ করার রেওয়াজ রয়েছে, সেই ধর্মাবলম্বীদের অধিকার খর্ব করা হবে। তা ছাড়া খর্ব হবে খাদ্যের অধিকারও।
জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখন্ড, হিমাচল প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে গরু, ষাঁড় ও মহিষ জবাই সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ ছাড়া গরু জবাই নিষিদ্ধ গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, বিহার, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও মণিপুরে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা ও মিজোরামে গরু-বলদ-মহিষ জবাই আইনত বৈধ। বহু রাজ্যে গরু নিষিদ্ধ হলেও তাতে বাছবিচারও রয়েছে। কোথাও বয়সের, কোথাও বা কর্মক্ষমতার। যেমন যে গরু যত দিন দুধ দিচ্ছে, তত দিন তা মাংসের জন্য জবাই করা যাবে না। বা যে বলদ যত দিন চাষের কাজে লাগছে, তা জবাই নিষিদ্ধ।
সুপ্রিম কোর্টের এই স্থগিতাদেশ দেশজুড়ে কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে ও অশান্তি কমাবে বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গোরক্ষার নামে অযথা অশান্তি হচ্ছে। প্রাণহানির একাধিক ঘটনাও ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রীর আবেদনেও কাজ হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৯:০০ ৪৭০ বার পঠিত