বাংলা কবিতার প্রধান প্রাণপুরুষ সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদের ৮২তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই এই দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইলের মোল্লা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার প্রকৃত নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ। তিন দশক ধরে তুমুল আলোচিত কবি আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার শহরমুখী প্রবণতার মধ্যেই ভাটি বাংলার জনজীবন, গ্রামীণ আবহ, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের জীবনপ্রবাহ এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহকে পরম আন্তরিকতার সঙ্গে তুলে এনেছেন তার কবিতায়। বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছেন নতুন আঙ্গিকে, চেতনায় ও বাক্?ভঙ্গির সমন্বয়ে। বাংলা কবিতায় লোকজ ও গ্রামীণ শব্দের বুননশিল্পী কবি আল মাহমুদ নির্মাণ করেছেন এক মহিমান্বিত ঐশ্বর্য্যের মিনার। তিনি বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে। কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার সাধনা হাই স্কুল ও পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৮ বছর বয়স থেকে প্রকাশিত হতে থাকে তার কবিতা। সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে তিনি ১৯৫৪ সালে ঢাকা আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত ও কবি সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল, কলকাতার নতুন সাহিত্য, চতুষ্কোণ, ময়ূখ, কৃত্তিবাস ও কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত বিখ্যাত ‘কবিতা’ পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে ঢাকা-কলকাতার পাঠকদের কাছে সুপরিচিত হয়ে ওঠে তার নাম। কবি আবদুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি ও দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় সম্পাদনা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কাফেলায় সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত ‘লোক লোকান্তর’, ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত ‘কালের কলস’ ও ‘সোনালি কাবিন’ কাব্যগ্রন্থ তাকে প্রতিষ্ঠিত করে বাংলা কবিতার প্রথম সারির একজন কবি হিসেবে। কবি হিসেবে খ্যাতিমান হলেও বাংলা গল্পের এক আশ্চর্য সাহসী রূপকার আল মাহমুদ। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি একজন কবি ও সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর সরকারবিরোধী দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এই পত্রিকায় সামসুদ্দিন পেয়ারা, মরহুম আসফ-উদ-দৌলা, ফজলুল বারী প্রমুখ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। গণকণ্ঠ পত্রিকা সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি এক বছর কারাভোগ করেন। পরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে শিল্পকলা একাডেমির গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের সহ-পরিচালক পদে নিয়োগ দেন। দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের পর পরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ সালে অবসর নেন। আল মাহমুদের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হচ্ছে- লোক লোকান্তর; কালের কলস; সোনালি কাবিন; মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো; আরব্য রজনীর রাজহাঁস; বখতিয়ারের ঘোড়া; অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না; দিনযাপন; দ্বিতীয় ভাঙ্গন; নদীর ভেতরের নদী; না কোনো শূন্যতা মানি না; ময়ুরীর মুখ; প্রেম প্রকৃতি দ্রোহ আর প্রার্থনা কবিতা এবং উড়াল কাব্য। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-পানকৌড়ির রক্ত; সৌরভের কাছে পরাজিত; গন্ধবণিক; আল মাহমুদের গল্প; গল্পসমগ্র; প্রেমের গল্প। এছাড়া উপন্যাস- কবি ও কোলাহল; কাবিলের বোন ও উপমহাদেশসহ প্রবন্ধ ও শিশুতোষ গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। বাংলা কবিতায় উজ্জ্বল অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। জন্মদিন উপলক্ষে কবির বাসভবনে (গোমতী আয়েশা ভিলা, ৮৮ বড় মগবাজার) বেলা ১২টায় জন্মদিন উদযাপন ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘কবি আল মাহমুদ-এর ৮২তম জন্ম উৎসব উদযাপন কমিটি’।