বঙ্গ-নিউজঃ শরীয়তপুরে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে দুই হাত হারানো সিয়াম খানকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ওই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
ওই ঘটনা নিয়ে গত এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেসব প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিফাত মাহমুদ।
রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত সে সময় রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকার যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন ‘অবহেলা’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে না এবং সিয়াম খানের ওই পরিণতির জন্য বিবাদীদের দায়ী করে কেন ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।
রুল জারির পাশাপাশি অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড সাপ্লাই), জেনারেল ম্যানেজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, নড়িয়া সাব-জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক এবং শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেক্রেটারিকে ২৯ মে হাজির হতে নির্দেশ দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় ২৯ মে তারা আদালতে হাজির হন এবং সিয়াম খনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে বলে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতকে জানান। পরে ওই চারজনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালত ৪ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
সেই তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর শুনানি করে আদালত মঙ্গলবার ক্ষতিপূরণের রায় দেয়।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মাহবুব শফিক বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রায়ে আদালত পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে। রায়ের আদেশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এ টাকা দিতে হবে।”
সংবাদমাধ্যমে আসা খবরে জানা যায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী গ্রামের দরিদ্র জাহাজশ্রমিক ফারুক খানের ছেলে সিয়াম খান (১৭) নড়িয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ত। পড়াশোনার পাশাপাশি সে টিউশনি করে চলত।
গত ৫ এপ্রিল বিকালে ঝড়ে গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। সন্ধ্যায় বিঝারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য মজিবুর রহমান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলা কার্যালয়ে ফোন করে বিষয়টি জানান।
পরদিন সকালে ওই সঞ্চালন লাইন মেরামত করা হবে বলে সেদিন মজিবুরকে জানানো হয়। কিন্তু সঞ্চালন লাইন মেরামত না করেই পরদিন দুপুরে লাইনটি চালু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
ওই সময় সিয়াম তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে বিকট শব্দ হয়। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর অবনতি হলে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
সেখানে দুই দফা অস্ত্রোপচারের পরও সংক্রমণ দেখা দিলে ১২ এপ্রিল কবজির ওপর থেকে সিয়ামের বাঁ হাত এবং ১৬ এপ্রিল একই জায়গা থেকে ডান হাত কেটে ফেলতে হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন বলা হয়, গত ৫ এপ্রিল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অভিযোগ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যান মো. মিজানুর রহমান অভিযোগ পাওয়ার পর তা লিপিবদ্ধ করেননি। ফলে অভিযোগটি এবং ঝড়ে তার ছিঁড়ে পড়ে থাকার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি।
“দুর্ঘটনার পরের দিন ৬ এপ্রিল উপসি সেকশনের আওতাধীন পশ্চিম বিজারি গ্রামের ছেঁড়া তারের বিষয়টি দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইনম্যানরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মেরামত শেষে ওই সেকশন চালু করলে ওই ঘটনা নাও ঘটতে পারত।”
বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৩:২৭ ৩৭১ বার পঠিত