“সুনসান ঢাকায়, স্বপ্নডানায়” (যেতে যেতে পথে- ৫৫)- ড. মনিরুস সালেহীন

Home Page » ফিচার » “সুনসান ঢাকায়, স্বপ্নডানায়” (যেতে যেতে পথে- ৫৫)- ড. মনিরুস সালেহীন
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুন ২০১৭



---
ইশ! ঢাকাটা যদি সব সময় এমন থাকতো! কী ছিম ছাম, যানজটহীন, ঝঞ্জাটহীন ঢাকা। বাসা থেকে অফিসের যে দূরত্ব স্বাভাবিক সময়ে এক ঘন্টায় পেরোলেই বর্তে যাই, গতকাল ও আজ তা পেরোলাম ২৫- ৩০ মিনিটে। গুলশান হাতিরজিল হয়ে গাড়ি যে কখন এসে মগবাজার রেলক্রসিং এর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি। চোখ ছিল নেটের পাতায়। চিটাগাং বা ময়মনসিংহ থেকে আসা, রেলক্রসিং দিয়ে ধাবমান ট্রেনটাকে মনে হচ্ছিল এক স্মার্ট প্রিয়দর্শিনী, যাকে দেখলে সসম্ভ্রম ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয় মন। মুহূর্তেই ভাবি, যার অমোঘ আকর্ষণে এই ছিমছাম ঢাকা, সে আমাদের দেশের বাড়ি, আমাদের গ্রাম, আমাদের জেলা শহর।

---
আমি জানি গ্রামগুলো এখন বর্ষার শাপলা ফোটা দিঘির মতো টই টুম্বুর। এখন মুখরিত গ্রামের বাজারের চা দোকানগুলো, নদীর পাড়ের বটতলা কিংবা শহর থেকে গ্রামে যাওয়া অনেকের বাড়ির আংগিনা বা বৈঠক ঘর। দু’য়েক দিন মধ্যেই এই ঢাকা শহর আবার ভরে উঠবে, ফিরে আসবে নৈমিত্তিক, চিরচেনা ছবি। আর ওদিকে, গ্রামে বাজবে বিষাদের রাগিণী। দেওরিতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে অশ্রুসজল বিদায় জানানো মায়ের ম্লান মুখের মতোই মলিন হয়ে যাবে গ্রামের মুখখানি।

---
তারপরও চলে আসবেন মানুষ, যারা গিয়েছে্ন তারা তো ফিরে আসবেনই। আসবেন নতুন অনেকেই। অষ্টাদশ শতকের ইংরেজ কবি অলিভার গোল্ডস্মিথ তাঁর দীর্ঘ কবিতা ‘ডেজার্টেড ভিলেজ’ এ যে গ্রামের ছবি এঁকেছেন আমাদের গ্রামের সাথে তার মিল নেই, সেটা ঠিক। আমাদের গ্রামগুলো পরিত্যাক্ত বা ডেজার্টেড হয়নি। আশার কথা, জনসংখ্যাধিক্যের কারণে হয়তো তা হবেও না কখনো। কিন্তু ইউরোপিয় শিল্প বিপ্লবের মদদে, বস্তুবাদী স্বপ্নের তাড়নায় মানুষের ছায়া সুনিবিড় গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হওয়া প্রবণতার যে কষ্টের কথা কবি বলেছেন, সেই একই কষ্ট কিন্তু আছে আমাদের এখানেও। তবে এখানে হয়তো কষ্টের চেয়ে বেশি আছে দ্বৈরথ, আছে টানাপোড়েন। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে শহরে থাকা আবার শেকড়ের টানে ক্ষণিকের জন্য ফিরে যাওয়া গ্রামে, ফিরে পাওয়া হারানো শৈশব- এই দ্বৈরথ।

---

কিন্তু, আক্ষরিক অর্থে পরিত্যাক্ত না হলেও ক্রমশ কী ক্ষীণতর হয়ে আসছে না গ্রামের সাথে আমাদের বন্ধন? প্রতি ঈদে এখনো শহর থেকে দেশের বাড়ির দিকে যে এক্সোডাস দেখি, আর কিছুদিন পর তা-ই হয়তো হবে প্রিয় রোমন্থনের আরেক বিষয়।
ঈদের ছুটিতে যে ঢাকাকে দেখি, এ রকম সুনসান ঢাকা চাওয়া বোধহয় এক ধরণের স্বার্থপর আকাঙ্খা ! তবে, আমার যদি যা ইচ্ছে তা-ই করার ক্ষমতা থাকতো (পড়ুন আলাদিনের চেরাগ থাকতো!), তাহলে আমি সবার জন্য উইন-উইন অবস্থা নিশ্চিত করে বলতাম, যে যেখানে আছেন সেখানেই থাকুক! স্বপ্নডানায় পাখা মেলে বলি, গ্রামে থাকা বন্ধুরা, আগামী ঈদে ঠিক হবে সফর বিনিময়- ঢাকা থেকে গফরগাঁয়ের পথের একশ’ কিলোমিটারের রাস্তা পেরোবো দেড় ঘন্টায়, কথা হবে চায়ের আড্ডায়, পুকুরপাড়ের জলপাই তলায় । কিংবা আপনারা তিস্তা, অগ্নিবীনা, মহুয়া বা হাওর এক্সপ্রেসে এক ঘন্টায় পৌছে যাবেন আমাদের কাছে, এক ঘন্টায় গাড়িতে করে ঘুরিয়ে দেখাবো আমাদের ঢাকা!
গ্রাম আর শহরকে বিনিসুতোর মালায় গাঁথা আলাদিনের দৈত্যের জন্য কি খুব কঠিন হবে?

---

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৩:৪০   ৭০১ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ