জবি প্রতিনিধিঃ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ১১তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীর লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেই বিভাগের এক শিক্ষকের ওপর দায় চাপিয়ে ফেসবুকে অপ-প্রচার চালাচ্ছে কিছু শিক্ষার্থী। ইন্ধন রয়েছে কিছু নীতিহীন শিক্ষকেরও। যদিও এ বিয়য়ে নিহত শিক্ষার্থী সোহানের পরিবার থেকে কোন অভিযোগ করা হয়নি বলে জানা গেছে। জানা যায়, অকালপ্রয়াত সোহান চার বছর ধরে ফুসফুসের দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার অ্যাজমা ছিলো এবং সম্প্রতি লিভারে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। বাংলা বিভাগের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ তম ব্যাচের ২য় বর্ষ ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাননীয় উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করেছেন। একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে ফলো করার কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন সম্পূর্ণ সেশনজট মুক্ত। রমজান মাসে প্রায় সব বিভাগে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এমনকি খোদ বাংলা বিভাগে চারটি সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা একই সাথে চলমান ছিল। ২৯ মে পরীক্ষা শুরুর আগে ১১ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পেছানোর কথা বললেও তারা কোনো আবেদন করেনি। মৌখিকভাবে বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতিকে জানালে তাঁরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেই পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। অকাল প্রয়াত সোহান মরণব্যাধি আক্রান্ত ছিল, সে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই নিয়মিত ক্লাশ ও মিডটার্ম পরীক্ষাতেও অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ২য় বর্ষ ১ম সেমিষ্টারেও সে ক্লাশ করতে পারেনি, মিডটার্ম পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সে আবেদন করলে বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্ট ৯জন কোর্স শিক্ষক মানবিক দিক বিবেচনা করে তার মিডটার্ম পরীক্ষা নেন। ফরম ফিল-আপের টাকা না থাকার কথা জানালে বিভাগের একজন শিক্ষক তার ফরম ফিল-আপের টাকা দেন। তার ক্লাশ উপস্থিতি ৬০% না থাকার কারণে ফরম ফিল-আপের জরিমানাও বিভাগীয় প্রধান মওকুফ করেন। তার মৃত্যুর খবর জানার পর বিভাগীয় প্রধান একাধিক শিক্ষককে দিয়ে হাসপাতালের বিল পরিশোধ করানো ও লাশ পরিবহণের জন্য একটি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন, বিল পরিশোধসহ ১৫০০০টাকা দেওয়া হয় বিভাগ থেকে। ১২ জুনের পরীক্ষার দিন ১১ তম ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি নাজমুল সকাল ৯টার দিকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তাকে মেস থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়, তাকে তার ৬জন সহপাঠী ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাজমুল দীর্ঘদিন ধরে টাইফয়েডে আক্রান্ত। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১১ ব্যাচের অপর শ্রেণি প্রতিনিধি তারিনসহ ৪৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা পেছানোর আবেদন বিভাগীয় প্রধান ও পরীক্ষা কমিটির সভাপতি বরাবর করলে সবার সম্মতিক্রমে ২১০৫ কোর্সের (৮ জুন) পরীক্ষা পেছানো হয়। ঘটনাকে ভিন্ন রঙ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মদদপুষ্ট কতিপয় হলুদ সাংবাদিক মনগড়া, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা খবর প্রচার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলা বিভাগের সঙ্গে ১১ তম ব্যাচের পরীক্ষা কমিটি এই মিথ্যা খবরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিগত দেড় বছর ধরে সোহানকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদানকারী বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক এই খবরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘সোহান বেঁচে থাকার সময় তার চিকিৎসার ভার কেউ নেয়নি, অথচ তার মৃত্যুর পর তার মৃত্যু নিয়ে কিছু মানুষ রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি দুঃখজনক। সেইসব বিকৃত মস্তিষ্ক শিক্ষার্থীর বোধোদয় হোক, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটুক। ‘ এ বিষয়ে জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী (১ম ব্যাচ, ২য় ব্যাচ ও ৭ম ব্যাচ) বাংলা বিভাগ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তারা এর আগেও ফেসবুকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান স্যারকে নিয়ে বিকৃত ও নোংরা প্রচারণা চালিয়েছে। ছাত্রলীগের নামে অপপ্রচার চালিয়েছে। উপরন্তু আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও নীল দলের নামে অপপ্রচার চালিয়েছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন শিক্ষক বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করার উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবিরপন্থী কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান করে নানাবিধ অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে ফেসবুকে প্রচারিত তথ্য-প্রমাণাদি তুলে ধরে, বিচারের আওতায় আনা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৫:০৬ ৮২৯ বার পঠিত