বঙ্গ-নিউজঃ মরদেহগুলোর ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক তিন শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করার কথা বললেও গৃহবধূ রেহেনা পারভীনের (৪০) মৃত্যুর কারণ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
এ ঘটনায় হওয়া মামলার অগ্রগতি নিয়েপুলিশও কোনো আশার খবর শোনাতে পারেনি।
তবে ঘটনার পেছনে আর্থিক অস্বচ্ছলতা, রেহেনার শ্বশুর বাড়িতে নানা বিষয়ে অশান্তিতে থাকা আর এক খণ্ড জমি নিয়ে বিরোধের কথা উঠে এসেছে তার বড় ভাই সামছুল আলমের জবানিতে। ঘটনাটি হত্যাকাণ্ডও হতে পারে বলে সন্দেহ তার।
গত শুক্রবার ভোররাতে পুলিশ তুরাগ থানা এলাকায় ইজতেমা মাঠের কাছের কামারপাড়ার কালিয়ারটেক এলাকার টিনশেড একটি বাসা থেকে রেহেনা পারভীন ও তার তিন সন্তানের লাশ উদ্ধার করে।
শান্তা (১৩), শেফা (৮) ও সাদ (১) নামের তিন সন্তানকে হত্যার পর রেহেনা আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।
ঘটনার পর থেকে অবশ্য রেহেনার পরিবার ঘটনাটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ সন্দেহ করে এর পেছনে শ্বশুরবাড়ির হাত থাকতে পারে দাবি করে।
ওই রাতেই সামছুল আলম তুরাগ থানায় যে হত্যা মামলা দায়ের করেন সেখানে রেহেনার স্বামী মোস্তফা কামাল ও তার বোন কুহিনূরের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে রয়েছে। মামলার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোস্তফাকে আটকও করা হয়।
মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে রোববার বিকালে তুরাগ থানার ওসি মাহবুবে খোদা বলেন, “এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।রেহেনার স্বামী ও ননদ কুহিনূরকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”
‘পারিবারিক অশান্তি’
সামছুল আলম জানান, বিয়ের পর তার বোন কখনই সুখের মুখ দেখেননি। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খারাপ-ভালো যাই থাকুক, শ্বশুর বাড়িতে ছিল নানা বিষয় নিয়ে অশান্তি।
“১৬ বছর আগে রেহেনার বিয়ে হয় মোস্তফা কামালের সঙ্গে। কামাল শিক্ষিত ছেলে। চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করত তখন। বেতন ভালো কিন্তু রেহেনার মনে সুখ নাই। আমরা কিছু জানতে চাইলে বলত সব ঠিক হয়ে যাবে।
“বোনের শাশুড়ি মাফিয়া বেগম ও তার (কামালের) বোনরা চাইত রেহেনা গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের উবারামপুরে থাকুক। চট্টগ্রামে বাসা নিয়ে থেকে টাকা পয়সা খরচ করার কী দরকার। শাশুড়ি ও ননদদের এ রকম বাঁকা চোখের চাহনি থেকে রক্ষা পেতে বোন আমার চাঁদপুরের গ্রামের বাড়িতেও ছিল তিন বছরের মতো। কিন্তু সেখানেও শান্তি ছিল না রেহেনার। কাজের মানুষের মতো দিনরাত খাটুনি আর খাটুনি।”
জমির বিরোধ
সামছুল আলম জানান, কামারপাড়ায় রেহেনার শ্বশুরের চার কাঠা জমি ছিল। আর্থিক সমস্যার কারণে ওই জমি চট্টগ্রামে থাকা কামালের আরেক বোন শামছুন্নাহারের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল।
“শামছুন্নাহারের নামে ওই জমির কাগজপত্র হলেও পরে কামাল তাকে জমি বিক্রির টাকা ফেরত দিয়ে দেয় এবং ওই জমিতে বিশটি ঘর তোলে। কিন্তু টাকা ফেরত নিয়েও ওই জমি আর তাদের নামে লেখে দেননি শামছুন্নাহার।”
তিনি জানান, কামাল চট্টগ্রামের চাকরি ছেড়ে এসে কামারপাড়ার চার কাঠার জায়গায় ২০টি টিনশেড ঘর তোলে ২০০৫ সালে। সেখানে তিনটি কক্ষে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করে কামাল। আর বাকি ঘরগুলো থেকে পাওয়া ভাড়া দিয়ে সংসার চালাতেন এবং মা ও ছোট ভাইবোনদের খরচ দিতেন।
কামাল একাই ওই বিশটি ঘরের ভাড়া উঠানোয় মা ও বোনদের চক্ষুশূল হন বলে দাবি করেন সামছুল।
দুই বছর আগে কামালের বোন কুহিনূর কামারপাড়ার এসে তিনটি ঘর দখল করে নেন এবং বাকি ঘরগুলো থেকে তার মা ভাড়া তোলা শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের বিরোধও শুরু হয় তখন থেকে।
বোন আর তার সন্তানদের মৃত্যুর দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন সামছুল আলম।
“এক- হয় ওই চার কাঠা জমি আত্মসাৎ করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, আর দুই- একজন মানুষ কত অত্যাচার অপমান সহ্য করবে। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার-অবজ্ঞা দেখে আসছে। তাই বাধ্য হয়ে সন্তানদের নিয়ে এভাবে আত্মহুতি দিয়েছে।”
ঘটনা যাই হোক এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।
রেহেনার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ‘কনফিউশন’
রেহেনা ও তার তিন সন্তানের ময়না তদন্ত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “তিন শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে আর রেহেনা পারভীনের বিষয় কনফিউশন আছে। তাই ভিসেরা পরীক্ষার জন্য দিয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষার প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪২:৩০ ৫৬৭ বার পঠিত