বঙ্গ-নিউজঃ ‘প্রশাসন যে দামের কথা বলছে সেই দামে ভালো মানের মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয়। হয় ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে, না হলে মানুষকে বোল্ডার (ভারতীয় গরু) আর মহিষের মাংস খাওয়াতে হবে।’প্রশাসনের নির্ধারিত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে এমন মন্তব্য করেন রাজশাহী গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
রমজানকে সামনে রেখে ঢাকায় সিটি করপোরেশন দাম নির্ধারণ করে দিলেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে মাংসের দাম নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠকও হয়। কিন্তু বৈঠক থেকে দাম নির্ধারণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আগামী রোববারের মধ্যে দাম নির্ধারণে আশাবাদী জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের বিভিন্ন মাংসের দোকান ঘুরে দেখা যায়, মাংসের মানের ওপর নির্ভর করে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪৬০ থেকে ৪৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। বকরির (ছাগী) মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশি গরু বেশি দামে কিনতে হয় তাদের, কিন্তু মাংস অনেক কম হয়। ফলে দেশি গরুর মাংস ৪৮০ টাকার নিচে বিক্রি করা একেবারেই সম্ভব নয়। করলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। কিন্তু দামে কম হওয়ায় ভারতীয় গরুর মাংস ৪৫০,৪৬০, ৪৭০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হয়।
নগরের সাহেববাজারের খাসির মাংস ব্যবসায়ী ফুল মোহাম্মদ বলেন, ‘ছয় মাস আগেও আমরা এই দামেই মাংস বিক্রি করেছি। এখনো করছি। কিন্তু আগে যখন কম দাম ছিল তখন মানুষ বেশি মাংস কিনত। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি একেবারেই কম। এখনতো ভিআইপি ছাড়া খাসির মাংস কেউ কিনতেই চায় না।’
পাশের গরুর মাংস ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০০,২৫০ টাকায় যখন মাংস বিক্রি করতাম তখন লাভ অনেক বেশি হতো। মানুষ মাংস কিনতোও প্রচুর। কিন্তু এখন মানুষ গরুর মাংস কিনতে চায় না। বয়লার, লেয়ার মুরগি কিনে খায়। আগের আর সেই ব্যবসা নেই।’
গোশত ব্যবসায়ী সমিতির হিসাব মতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৩৫০ জন গোশত ব্যবসায়ী আছেন। যাদের মধ্যে ৩৩০ জন এই সমিতির সদস্য। যাদের কেউ গরুর মাংস, কেউ খাসির মাংস আবার কেউ দুটোই বিক্রি করে। কেউ কলিজা, পা, মাথার মাংস বিক্রি করে।
মাংসের বাজারের এমন অবস্থায় স্বস্তির ঢেকুর তুলতে পারছেন না ক্রেতারা। শুক্রবার রাতে সাহেববাজারে কথা হয় নগরের সিপাহীপাড়া এলাকার রাশেদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে দাম হয়েছে, বাজারে ঢুকে গরুর মাংস কেনার কথা ভাবাও যায় না। নিতান্ত বেকায়দায় না পড়লে গরুর মাংস কেনা হয় না।’ সঙ্গে সঙ্গে পাশে থেকে আরমান আলী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এত টাকা দিয়ে মাংস কিনেও তো স্বস্তি নেই। কেউ দাম বেশি নিচ্ছে, কেউ কম নিচ্ছে; কিন্তু কোন মাংসের কথা বলে কোন মাংস দিচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারি না। প্রশাসন দাম নির্ধারণ করে দিয়ে নিয়মিত মনিটরিং করলে আমাদের জন্য সুবিধা।’
রাজশাহী গোশত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে তাদের মিটিং হয়েছে। সেখানে তাদের বলা হয়, ঢাকায় ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত ৪৭৫ টাকায় মাংস বিক্রি করতে পারছে, তাহলে রাজশাহীতে তারা কেন ৫ টাকা বেশিতে বিক্রি করছে। জবাবে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, ঢাকায় দেশি গরুর মাংস ৪৭৫ টাকা এবং ভারতীয় গরুর মাংস ৪৫০ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু সেটা কেউ মানছে না সব মাংসই ৪৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভালো মাংস ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। তাই আমরা জেলা প্রশাসনকে বলেছি, আপনারা গরুর হাট মনিটরিং করেন। তারপর চিন্তা করেন কত টাকা দাম নির্ধারণ সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমরা তো একটা নির্দিষ্ট দামের মধ্যেই মাংস বিক্রি করছি। শনিবার আমাদের ব্যবসায়ীদের মিটিং আছে। জেলা প্রশাসনও হাট মনিটরিং করতে চেয়েছে। তারপর দেখা যাক কি হয়।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শরীফ আসিফ রহমান বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করেছি। কিন্তু তারা দাম নির্ধারণে রাজি হয়নি। শনিবার তারা নিজেরা সভা করে সিদ্ধান্ত জানাতে চেয়েছে। আগামী রোববার নির্ধারিত মূল্যের তালিকা দোকানগুলোতে টাঙিয়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:২৪:৩৯ ৩৬২ বার পঠিত