টাওয়ার হ্যামলেটসের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় বহু জাতিসত্তার বাস।
বঙ্গ-নিউজ: ব্রিটেনকে নিজের আবাস হিসেবে গ্রহণ করেছেন যেসব বাংলাদেশী, তারা বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বাংলাদেশী কমিউনিটি।
দু’হাজার পনের সালের এক জরিপ অনুযায়ী এদেশে ছয় লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশী বসবাস করছেন।
এদের মধ্যে ৭০% বাস করেন বৃহত্তর লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়।
কিন্তু যেখানেই থাকুন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশীরা রাজনৈতিকভাবে খুবই সক্রিয়।
তবে ভোটের জন্য ‘ভিলেজ পলিটিক্স’-এর কায়দায় পারিবারিক যোগাযোগকে অসাধু উপায়ে ব্যবহারের অভিযোগও অতীতে বাংলাদেশী ভোটারদের বিরুদ্ধে উঠেছে।
তারপরও বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে ব্রিটেনের কিছু আসনে বাংলাদেশী ভোটারদের বড় ভূমিকা থাকবে।
টাওয়ার হ্যামলেটস, লন্ডন
পূর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে রয়েছে দুটি নির্বাচনী আসন। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো, এবং পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস।দুটি আসনকেই লেবার পার্টির নিরাপদ আসন বলে বিবেচনা করা হয়।
ঐতিহ্যগতভাবে ইমিগ্র্যান্ট এলাকা বলে পরিচিত টাওয়ার হ্যামলেটসে জনসংখ্যার অনুপাতে ৩২% বাংলাদেশী এবং ৩১% শ্বেতাঙ্গ।
ক্যানারি হোয়ার্ফে বিশ্বের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইয়োরোপীয় সদর দপ্তর থাকার পরও এখানে বেকারত্বের হার লন্ডনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
টাওয়ার হ্যামলেটসের বাংলাদেশী ভোটাররা ১৭টি ওয়ার্ডে ছড়িয়ে রয়েছেন।
বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৭৯,৫৮১।
এই আসন থেকে বর্তমান এমপি রুশনারা আলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রথম বাংলাদেশী-বংশোদ্ভূত সংসদ সদস্য।
তিনি এবারের নির্বাচনেও লড়ছেন।
পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসনের ভোটার সংখ্যা ৭৪,৯১৯।
এখানে বর্তমান লেবার পার্টির এমপি জিম ফিৎজপ্যাট্রিকও পুননির্বাচনের জন্য লড়ছেন।
বার্মিংহাম শহর।
বার্মিংহাম:মধ্য ইংল্যান্ডের একটি বড় শহর বার্মিংহামে ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ৩৮,০০০।এই শহরের ৪০টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশিরভাগ বাংলাদেশীর বাস মূলত অ্যাস্টন, লোজেলস অ্যান্ড ইস্ট হ্যান্ডসওয়ার্থ এবং স্পার্কব্রুক এলাকায়।এই এলাকাটিতে বহু জাতিসত্তার মানুষ বসবাস করেন।সংখ্যালঘুদের মধ্যে পাকিস্তানীদের সংখ্যা বেশি।
এখানকার বাংলাদেশীরা একসময় মেটাল কারখানা, মোটর গাড়ি কারখানার মত ভারী শিল্পে কাজ করতেন।
পরে এদের অনেকেই কেটারিং শিল্পে সরে আসেন।
বর্তমানে বৃহত্তর বার্মিংহামের ৫০০টি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের বেশিরভাগেরই মালিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশীরা।
এরা স্থানীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
বার্মিংহাম লেডিউড নির্বাচনী আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন বলে মনে করা হয়।
এই আসনের এমপি শাবানা মাহমুদও পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত।
এই আসনের অ্যাস্টন ওয়ার্ডে ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে ব্রিটিশ-বাংলাদেশীদের ওপর নির্ভর করতে হয়।
ব্রিক লেনের একটি ভোট কেন্দ্র। ছবিটি গত নির্বাচনের সময় তোলা।
ওল্ডহ্যাম: ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর ওল্ডহ্যাম।ব্রিটেনের সবচেয়ে পুরনো বাংলাদেশী কমিউনিটির একটির বাস এই শহরে।আঠারোশো শতকে এই অঞ্চলের বস্ত্রশিল্প বিশ্বসেরা হয়ে ওঠে।তখন প্রচুর মানুষ এখানকার সুতা এবং বস্ত্র কারখানায় কাজ করতে আসেন।কিন্তু ৭০-এর দশকে এই শিল্প ধসে পড়ে।
আজকের ওল্ডহ্যামবাসী বাংলাদেশী ভোটারদের অনেকের পূর্বপুরুষ এসব কারখানায় কাজ করেছেন।
এরপর ১৯৬০-এর দশকে মূলত সিলেটের বিশ্বনাথ এবং নবীগঞ্জ থেকে ইমিগ্র্যান্টরা এসে কোল্ডহার্স্ট ওয়ার্ডে বসবাস শুরু করেন।
ওয়েস্টউড এলাকার ছয়টি সড়ক একসময় ‘বাংলা পাড়া’ নামে পরিচিতি পায়।
এটি ওয়েস্ট ওল্ডহ্যাম অ্যান্ড রয়টন নির্বাচনী আসনের অংশ।
এই আসনটিকে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন বলেই বর্ণনা করা হয়।
লুটনইংল্যান্ডের পূর্ব দিকে বেডফোর্ডশায়ার অঞ্চলের প্রধান শহর লুটন।এখানে প্রায় ২৭০০০ ব্রিটিশ-বাংলাদেশীর বাস।লুটনে দুটি নির্বাচনী আসন রয়েছে - লুটন নর্থ এবং লুটন সাউথ।দুটিই বিরোধীদল লেবার পার্টির শক্ত ঘাঁটি।এর পেছনে একটা বড় কারণ হলো বাংলাদেশীসহ ইমিগ্র্যান্টদের একটা বড় অংশ এখানকার ভোটার।মূলত, ব্রিটেনে যে তিনটি শহরে শ্বেতাঙ্গরা সংখ্যালঘু, তার মধ্যে লুটন একটি।ফলে লুটন শহরের দুটি আসনে ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করে অশ্বেতাঙ্গ সংখ্যগরিষ্ঠ ভোটাররা।