ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে মরিয়া ট্রাম্প

Home Page » জাতীয় » ভাবমূর্তি উজ্জ্বলে মরিয়া ট্রাম্প
মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭



বঙ্গ-নিউজঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে গিয়ে বিশ্বের প্রধান তিন ধর্মের তীর্থস্থানেই শান্তির কথা বলেছেন তিনি। সৌদি আরব, ইসরায়েল থেকে রোমের ভ্যাটিকান সফর করে সংঘাতময় বিশ্বের কাছে শান্তি প্রতিষ্ঠার ডাক দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।উত্তপ্ত ওয়াশিংটন রেখে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এ বিদেশ সফর নিয়ে সরগরম মার্কিন মিডিয়া। হোয়াইট হাউসে একের পর ঘটনায় স্বদেশে নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। দেশে আসার পর কী পরিস্থিতিতে পড়বেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গত নির্বাচনের রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা, হোয়াইট হাউসের সাবেক কর্মকর্তার বিষয়ে তদন্ত, সাবেক গোয়েন্দাপ্রধানকে বরখাস্ত, গোয়েন্দাপ্রধানকে রাশিয়ার বিষয় নিয়ে তদন্ত এগিয়ে না নেওয়ার কথা বলা নিয়ে জটিলতা দূর হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এসব নিয়ে দেখভাল করার জন্য তাঁর নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। তাঁর প্রস্তাবিত বাজেটে আমেরিকার নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের কষ্ট বাড়াবে, এ নিয়ে চলছে তোলপাড়।

সংঘাতে জড়িত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেছেন, উভয় পক্ষ শান্তির জন্য প্রস্তুত। গত অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তি বিরাজ করছে, সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উভয় পক্ষ প্রস্তুত বলা হলেও বিষয়টি নিয়ে খোদ মার্কিন সংবাদমাধ্যমে কোনো উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টই ক্ষমতা গ্রহণের পর এমন উদ্যোগের কথা বলেছেন। বাস্তবে সংঘাত আরও বৃদ্ধি হয়েছে দিনের পর দিন। এ সংঘাতের পেছনে আমেরিকার কলকাঠি নাড়ার অভিযোগ উঠেছে বারবার।

নয় দিনে, পাঁচ দেশ সফরের শুরুতে সৌদি বাদশার কাছ থেকে নত মাথায় মালা নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তরবারি নিয়ে নেচেছেন। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে পাশে বসিয়ে সৌদি নেতারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর সৌদি সফর ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে। প্রচুর মার্কিন অস্ত্র সৌদি আরবে বিক্রি হবে। এ কারণে আমেরিকায় কর্মসংস্থান বাড়বে। সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে শান্তির আহ্বানও তিনি উচ্চারণ করেছেন। সৌদি রাজতন্ত্র আমেরিকাকে তোষামোদ করে আসছে আগে থেকেই। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তোষামোদ করে ক্ষমতায় থাকা, নিজেদের সম্পদ সুরক্ষিত করার জন্য কোনো মূল্যে সমঝোতা হয়েছে, তা কোনো পক্ষের প্রকাশ্য বক্তব্যেই উচ্চারিত হয়নি বলে মার্কিন মিডিয়াগুলো উল্লেখ করছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের কিছু দেশ সফরে তাঁর স্ত্রী, ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াকে নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। এ সফর চলাকালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রীর শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে রোমে। বিমান থেকে নামার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ার সময় দেখা গেল তিনি দ্রুত তাঁর বাম হাত দিয়ে মেলানিয়ার মাথার চুল একদিকে সরিয়ে দিচ্ছেন। একই ধরনের ঘটনা গত সোমবার তেল আবিবেও ঘটেছিল। সেখানে তিনি লালগালিচা অর্ভ্যথনাকালীন হাঁটার সময় তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে হাত ধরলেন এবং তাঁর কালো সানগ্লাস এগিয়ে গিয়ে মুছে দিয়েছিলেন। মেলানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিছু সংবাদমাধ্যমকে অতিরিক্ত রসদের জোগান দিয়েছেন।

ক্যাথলিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে বলেছেন। ভ্যাটিকান সফরে গিয়ে গত বুধবার ট্রাম্প প্রথমবারের মতো পোপের সঙ্গে দেখা করেন। আধা ঘণ্টারও কম সময়ের এই সাক্ষাতে দুই নেতা হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। ট্রাম্প এ বৈঠককে ‘চমৎকার’ আখ্যা দিয়েছেন। আর ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ এই আলোচনাকে ‘আন্তরিকতাপূর্ণ’ বলেছে। দুই নেতাই গর্ভপাতের বিপক্ষে যৌথ অবস্থান জানিয়েছেন। এ ছাড়া তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ভ্যাটিকান এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে তুলে ধরলেও জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যান্য যেসব বিষয়ে দুই নেতার মতবিরোধ আছে, সেসব বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পোপ ফ্রান্সিস পরস্পরকে একাধিক উপহার দিয়েছেন।

ট্রাম্পের সফর উপলক্ষে রোম ও ভ্যাটিকানে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেই শ খানেক মানুষ রোমের একটি চত্বরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ করেন।

দুই দিনের সফরে ইসরায়েলে থাকাকালীন তিনি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ছাড়াও ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার জন্য পশ্চিম তীরে যান। তিনি ইসরায়েল কর্তৃক নির্মিত দেয়াল, পবিত্র গির্জার পবিত্র ভাস্কর্য, হিলটার কর্তৃক ইহুদিদের গণহত্যার শিকার ছয় লাখ ইহুদির স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে গমন করে তাদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। তিনি স্মৃতিসৌধকে ইসরায়েলি জনগণের ‘অজেয় চেতনা’র প্রতীক বলে অভিহিত করেন। সেখানে তিনি অনির্বাণ প্রদীপ পুনঃপ্রজ্বলিত করেন। ট্রাম্প ইসরায়েলের জাদুঘর পরিদর্শন এবং জেরুজালেম সফর করেন।

মধ্যপ্রাচ্যে চার দিনব্যাপী সফর শেষে ট্রাম্প ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করেন। ইসরায়েলে থাকাকালীন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টারে সোমবার রাতে বোমা হামলার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্দোষ শিশুদের হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করে সভ্য জাতিগুলোকে মানুষের জীবন রক্ষায় অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

পশ্চিম তীরে বসবাসকারীদের নেতা ওয়াদেদ রিভিভি আশা প্রকাশ করেন বেথেলহেমে ট্রাম্পের প্রদত্ত বিবৃতি ভিন্ন আছে। তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আমেরিকার দীর্ঘদিনের লক্ষ্য তিনি পরিত্যাগ করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের কোনো উল্লেখই করেননি, তিনি শুধু শান্তির কথা বলেছেন। তাঁর প্রত্যাশা, ট্রাম্প এ ব্যর্থ নীতি থেকে বের হয়ে টেকসই ও সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবেন।

দেশে ফেরার আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রাসেলস এবং সিসিলিতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ন্যাটো জোটের ঘোর সমালোচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইউরোপীয় নেতাদেরও তিনি এর আগে ছেড়ে কথা বলেননি। আন্তর্জাতিক বিষয়ে এসব জোটের দেশ আর বন্ধুরাষ্ট্র আমেরিকার ওপর দায়িত্ব চাপিয়েই শেষ, তাদের করণীয় সব করে না—এমন কথা তিনি বারবার বলেছিলেন। এবারের সফরের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সবার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির প্রয়াস নিয়েছেন। বন্ধুরাষ্ট্রের নেতাদের কাছে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধিতে এ সফর কাজে লাগবে বলে ট্রাম্প সমর্থকেরা মনে করেন।

আমেরিকা ফার্স্ট বা আমেরিকাই প্রথম বলে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান উপলব্ধি প্রকাশ্য হবে আগামী দিনগুলোতে। চলমান বিশ্বে আমেরিকা চাইলেও নিজেদের নিয়ে একা থাকতে পারবে না। বিশ্বের সব সমস্যা-সম্ভাবনার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে থাকা বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফরের নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে এ কথাই আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৪:৪১   ৪৬৯ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ