বঙ্গ-নিউজঃ সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠী নিহতের প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ-ভাংচুরের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ উপাচার্যের বাসভবন থেকে আন্দোলনকারী ৪২ শিক্ষার্থীকে আটক করেছে, যাদের মধ্যে ১০ জন ছাত্রী রয়েছে।
আগের দিন দুর্ঘটনায় দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় শনিবার দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পর রাতে উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার জানান।
তিনি বলেন, রোববার সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগ করতে হবে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও উপাচার্যের ভবনে ‘ভাংচুরের’ ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির বলেন, “আমরা জাহাঙ্গীরনগর থেকে প্রায় ৪২ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে এনেছি।”
শিক্ষার্থীদের আটকের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ইমরান নাদিম বলেন, বিকালে উপাচার্যের ‘নির্দেশে’ পুলিশ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে।
“আবার এই ভিসিই রাতে আমার ৪২-৪৫ জন ভাই-বোনকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। এটা কোনোমতেই অভিভাবকসুলভ আচরণ নয়।”
অবিলম্বে আটকদের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, “তাদের না ছাড়লে এই উপাচর্যের পতনের জন্য আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।”
শুক্রবার ভোরে সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান রানা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত।
এ ঘটনায় শুক্রবার দুপুরেই এক ঘণ্টার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এরপর নিহতদের লাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে না এনে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুষছে শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শনিবার দুপুরে কয়েকটি দাবি নিয়ে ফের মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা পৌনে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে তারা অবস্থান নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মহাসড়ক ছেড়ে দিতে কয়েক দফা বললেও তাতে কাজ হয়নি।
বিকালে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছুড়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
দুপুর ২টার দিকে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এসময় ‘আমার ভাইয়ের জানাজা, ক্যাম্পাসে কেন হল না’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ জানায় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি গেইটে পুলিশ চেক পোস্ট বসানো, জয় বাংলা (প্রান্তিক) গেইটে সাত দিনের মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শুরু, শনিবারের মধ্যেই পর্যাপ্ত স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, গতি সীমা নির্দিষ্ট করা, নিহত শিক্ষার্থীদের আত্মীয়দের যোগ্যতা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি প্রদান, নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি জানান।
উপাচার্য এসব দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তবে দিনের মধ্যেই স্পিডব্রেকার নির্মাণসহ দাবিগুলো পূরণের নিশ্চয়তা চেয়ে রাস্তা আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
পরে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে অবরোধকারীদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ।সে সময় সাতজন শিক্ষার্থীসহ অন্তত আটজন আহত হন। তাদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া অবরোধের মধ্যেই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন সাংবাদিক জানান।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের নেতৃত্বে কয়েকজন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মারধর করেন বলে জানান তারা।
পুলিশের হামলার পর রাস্তা ছেড়ে উপাচার্যের বাসভবনের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সে সময় সেখানে ভাংচুরও করা হয়।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলনরতদের মারধর করা ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারসহ তিন দফা দাবি জানিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। দাবি আদায়ে সন্ধ্যায় উপাচার্যকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন তারা।
ওই সময় শেষ হওয়ার পরও উপাচার্য বের না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন।
এর মধ্যেই উপাচার্য সিন্ডিকেট সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন।
সিন্ডিকেটের সভা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষকরা বের হয়ে এলে পুলিশ উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৩২:৩৭ ৩৯৭ বার পঠিত