বঙ্গ-নিউজ: অবশেষে সিরাজগঞ্জের চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট না দেবার অভিযোগে ও একটি খাস পুকুরকে কেন্দ্র করে তাড়াশে ৩টি পরিবারকে এক ঘরে করে রাখার বিষয়টি নিরসনের জন্য শালিস বৈঠক মাধ্যমে আপোষ রফা করা হয়েছে। এতে করে দীর্ঘ ১৩ মাস পর ওই ৩টি পরিবার অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পেল এবং মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষা পেলেন। শনিবার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মো. আব্দুল হকের উদ্যোগে তারটিয়া গ্রামবাসী ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিষয়টি নিরসনের জন্য সর্বশেষ সধু দাসের বাড়ির উঠানে প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী শালিস শেষ বিষয়টির নিস্পত্তি হয়।
এ সময় ওই শালিসে আরো উপস্থিত ছিলেন, অভিযুক্ত তালম ইউপি চেয়ারম্যান আব্বাছ-উজ-জামান, সমাজচ্যুত ৩ পরিবারের সকল সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত মুনসুর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল, জেলা পরিষদের সদস্য গজেন্দ্র নাথ, ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল শেখ, আব্দুল কুদ্দুস, ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক শালিসে আপোষ মিমাংসার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, শনিবারে শালিসে ৩টি পরিবারের সদস্যদের সমাজচ্যুত করার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে । পরে তিনি এক ঘরে রাখা ৩টি পরিবারের সদস্যদের সাথে দুপুরের খাবার খেয়ে তাদের কে গ্রামবাসীদের সাথে মিলিয়ে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসা ভারপ্রাপ্ত মো. মনসুর উদ্দিন জানান, আমরা প্রশাসনের প্রতিনিধি হিসেবে শালিসে উপস্থিত থেকে সমাজচ্যুত পরিবার ও ইউপি চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনেছি। এখানে কিছু সামাজিক সমস্যা ছিল যা নিরসন করে সমাজচ্যূত পরিবারগুলো অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত করতে পেরেছি। ভবিষৎ আবারও যদি কেউ এ ধরণের আচরণ করেন সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েক দফা সরেজমিন তদন্ত করেছিলাম। আজকে আমরা স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে শালিস বৈঠক করে বিষয়টির সমাধান করতে পেরেছি।
এ প্রসঙ্গে সমাজচ্যুত পরিবারের সদস্য সধু চন্দ্র দাস বলেন, দীর্ঘদিন সমাজের বাহিরে ছিলাম । কেউ আমাদের সাথে কথা বলতো না এমনকি কাজেও নিত না। এতে করে আমরা কষ্টে জীবন যাপন করেছি। আজকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সর্বোপরি সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের সমাজচ্যুত অবস্থা থেকে মুক্ত করেছেন আর এজন্য ৩টি পরিবারের সদস্যরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ থানার ওসি মনজুর রহমান বলেন, তারটিয়া গ্রামে শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি চুড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।
অবশ্য ইউপি চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা আব্বাছ-উজ-জাামান তার জড়িত থাকার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করেছেন। এ ব্যপারে শালিসের পর তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বিষয়টি মিমাংসা হওয়ায় একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি খুশি।
উল্লেখ্য, সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ভোট না দেবার অভিযোগে ও একটি খাস পুকুরকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের জের ধরে ৩টি হিন্দু পরিবারকে ১৩ মাস ধরে সমাজচ্যূত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। সমাজচ্যুত পরিবারের সদস্যদের দাবি, তালম ইউপি চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আব্বাছ-উজ-জামানকে ভোট না দেয়ায় তাদের ৩টি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলে তা নিরসনের জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরে শনিবার বিষয়টি মিমাংসা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৯:২২ ৬৬১ বার পঠিত