বঙ্গ-নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে আসার ‘আশা প্রকাশ করেছেন’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের কিং আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ দুই নেতার মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় হয় বলে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান।
সম্মেলন শেষে রাতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথোপকথন হয়েছে, শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। উনি (ট্রাম্প) আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।”
গত জানুয়ারিতে শপথ নেওয়ার পর এটাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এবারই প্রথম তার দেখা হল।
সৌদি বাদশাহর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মুসলিম প্রধান অর্ধশতাধিক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে ‘আরব ইসলামিক আমেরিকান সামিটে’ অংশ নেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনস্থলে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল-আজিজ আল সৌদ। পরে বাদশাহর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন হাসিনা। স্থানীয় সময় বিকেলে শুরু হয় সামিটের শীর্ষ বৈঠক।
উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা জোরদারের লক্ষ্যে আয়োজিত এই সম্মেলনে ইসলামী চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদারের আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ লড়াইকে ‘সভ্যতার সংঘাতের’ বদলে ‘শুভ ও অশুভের যুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য ছিল সবাই মিলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চিহ্নিত করা; মূলমন্ত্র ছিল ‘টুগেদার উই প্রিভেইল’।
“সবাই যদি আমরা সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, তাহলে এটা রোধ করা সম্ভব।”
সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম দেশগুলোর জোট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, “এই জোটের একটা মিলিটারি সাইড আছে, একটা পলিটিক্যাল সাইড আছে। আমরা প্রাইমারিলি পলিটিক্যাল সাইডে শতভাগ অংশ নিচ্ছি। সামরিক দিকে কোন পরিস্থিতিতে আমরা সৈন্য পাঠাব তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ব্যাখ্যা করেছেন।
“সেটা হল, দুই পবিত্র স্থান (মক্কা ও মদিনা) আক্রান্ত হলে তা রক্ষার জন্য আমরা সৈন্য পাঠাব।”
সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ বন্ধ করাসহ চার দফা প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সন্ত্রাসী বোঝাতে গিয়ে ইসলাম শব্দটি ব্যবহার করা যে উচিত নয়- সেই ঘোষণা দিতে সম্মেলনে উপস্থিত আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সন্ত্রাসীদের অর্থ-অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ দূর করার কথা বলেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
এছাড়া আলোচনা করে সবার জন্য লাভজনক একটি সমাধানে পৌঁছানোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরোধ দূর করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার কথা বলেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। সন্ত্রাস নির্মূলে শরণার্থী সঙ্কট যথাযথভাবে সামাল দেওয়ারও পরামর্শ দেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “সন্ত্রাস আক্রান্ত হয়ে পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও যে এক সময় শরণার্থী হিসেবে ছিলেন- তাও তিনি তুলে ধরেছেন।”
সম্মেলনের পর ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর কমব্যাটিং এক্সট্রিমিস্ট থট’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদআল-থানি, কুয়েতের আমির সাবাহ আল-আহমাদ আল-সাবাহ ও বাহরাইনের বাদশা হামাদ বিন ইস আল-খলীফাসহ মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম প্রধান দেশগুলোর নেতারা অংশ নেন এই সম্মেলনে।
সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে এই সম্মেলনে যোগ দেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক ও তথ্যমন্ত্রী আওয়াদ বিন-সালেহ-আল-আওয়াদ গত ৯ মে ঢাকায় এসে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে যান।
শনিবার স্থানীয় সময় রাত সোয়া ১১টার দিকে শেখ হাসিনা রিয়াদের কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সৌদি আরবের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন ফযসল আবু সাক এবং রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ তাকে অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী সোমবার সকালে মহানবী (সা.) এর রওজা জিয়ারত করতে মদিনায় যাবেন । একই দিন সন্ধ্যায় মদিনা থেকে ফিরে মক্কায় ওমরাহ পালন করবেন। সফর শেষে মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে তার।
বাংলাদেশ সময়: ১০:২৩:০২ ৫৪৪ বার পঠিত