বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :লালমনিরহাটসহ বৃহত্তর রংপুরের অর্ধকোটিরও বেশি মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের দ্বার প্রান্তে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলা কালেক্টরেট মাঠে অনুষ্ঠিত লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ডাকা এক জনসভায় কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রায় একশ’ ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত এই সেতুটি রংপুর অঞ্চলের লাখো মানুষের আর্থ-সামাজিক ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও ভাগ্যোন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
স্বপ্ন পূরণের মধুর ক্ষণ গণনার শেষ মুহূর্তে তিস্তা নদীর পশ্চিম পাড়ের রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মানুষ এখন আনন্দে উদ্বেলিত।এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা।লালমনিরহাটের কাকিনা ও রংপুরের মহিপুরের মধ্যে সড়কপথে সরাসরি চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর মূল কাঠামোর অন্তত ৯৮ ভাগের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
বাকি ২ ভাগসহ অন্যান্য টুকিটাকি কাজ শেষ করে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সেতুটি তত্ত্বাবধানকারী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাছে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুড়ে দেখা গিয়েছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি ও নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের প্রতিনিধি সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করে।
৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৯ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থের এ সড়ক সেতুর দুপাশে রেলিংসহ ২ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের ফুটপাত রয়েছে।
সেতুটির উত্তর পাশে (কাকিনার দিকে) তিস্তা নদীর বাঁ তীরে ১ হাজার ৩০০ মিটার দীর্ঘ নদীশাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পাকা করা হয়েছে। অপরদিকে সেতুটির দক্ষিণ দিকে (মহিপুর অংশে) পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরোনো নদীশাসন কার্যক্রমের সিসি ব্লক রয়েছে। এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু চলাচলের জন্য উদ্বোধন করে দিলে লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চারটি যথাক্রমে আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার মানুষ যেকোনো সময় রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর রংপুরসহ যেকোনো স্থানে যাতায়াত করতে পারবে।
এতে তাদের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, সেতুটির মূল অবকাঠামোর ৯৮ ভাগ নির্মাণকাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সেতুটিতে লাইটপোস্ট স্থাপনসহ টুকিটাকি কাজ বাকি আছে। আগামী মাস খানেকের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, সেতুটির উজানে নদীর মাঝামাঝি বালুর যে নতুন চর দেখা দিয়েছে, তা অপসারণ করা হলে সেতুটির সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। কারণ, এই চর থাকলে নদীর স্বভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে দুই পাড়ে আঘাত করলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল) মকবুল হোসাইন মিয়া বলেন, সেতুটির বাকি ২ ভাগ কাজ শেষ করে জুন মাসের মধ্যে সেতুটি এলজিইডিকে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, এরপর সুবিধাজনক যেকোনো সময়ে এর উদ্বোধন হলে জনগণ চলাচলের দুর্ভোগ থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাবে।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা গ্রামের বাসিন্দারদের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বললে জানান, সেতুটি চালু হলে খুব সহজেই অল্প সময়ে তারা রংপুরে যেতে পারবেন। সেতুটি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া বুড়িমারী স্থলবন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনাকারী একাধিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এ বন্দরে পাঁচ শতাধিক ট্রাক পণ্য আনা-নেয়া করে। কিন্তু সেতু না থাকায় এসব ট্রাককে দীর্ঘপথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। সেতুটি চালু হলে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে রংপুর যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে।
এতে পণ্য পরিবহনে যেমন গতি আসবে, তেমনি খরচও কমে যাবে। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুরজ্জামান আহমেদ জানান,‘ কাকিনা-মহিপুর সড়ক সেতু লালমনিরহাট জেলাবাসীর স্বপ্ন পূরণের মাইল ফলক। এ নবনির্মিত সেতুটি উদ্বোধন করা হলে লালমনিরহাট জেলার মানুষের রাজধানী ঢাকার সাথে ২ ঘণ্টার দূরত্ব কমে যাবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৮:৩০ ২৯৮ বার পঠিত