বাইগার নদী কুল-কুল ছন্দে ঢেউ তুলে ছুটে চলেছে। শরতের নীলাকাশ। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার চারিদিকে সবুজ বৃক্ষ ও খাল-বিলে থৈ থৈ জলরাশি। দিগন্ত বিস্তৃত কাশফুল, শিউলিতলার নরম চাদর আর সাদা মেঘের ভেলা। এরকম একটি প্রাকৃতিক পরিবেশে, মায়ায় ভরা নিরিবিলি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এক দুখী রাজকন্যা জন্মগ্রহণ করেন; যাঁর নাম শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি দুখী রাজকন্যা কেন? আমরা জানি তিনি কোনো সামন্ত রাজার কন্যা নন? তবে আমাদের উপকথা-রূপকথার দুখী রাজকন্যার মতো তাঁর কোনো অর্জনই সহজে হাতের মুঠোয় আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হয়েও তাঁকে টিকে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। জাতির পিতাকে দীর্ঘ দিন যেমন রাজপথ ও জেলের সেলে বন্দি থেকে জনগণের জন্য অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছিল তেমনি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী শেখ হাসিনাকেও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের অধিকারবঞ্চিত মানুষের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনার ৩৭ তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১৭ মে।
১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলেন। এটি ছিল তাঁর পুনর্জন্ম। তাঁর পুনর্জন্মের পর বাংলাদেশ পুনরায় বাংলাদেশ হয়ে উঠেছিল। ৩৬ বছর পূর্বের সেই দিনটি এখনকার মতো ছিল না। সেদিন ছিল ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার এক অপরাহ্ণ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতার নির্মম হত্যাকা- বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনার পদস্পর্শে সেই জল্ল¬াদের দেশ পুনরায় সোনার বাংলা হয়ে ওঠার প্রত্যাশায় মুখরিত হয়েছিল। আজ তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি। তাঁর প্রত্যাবর্তন ছিল অতি সাধারণ, কারণ সেভাবেই তিনি দেশের জনগণের সামনে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। তিনি এক বৃহৎ শূন্যতার মাঝে এসে দাঁড়ালেন। এখানে তাঁর ঘর নেই; ঘরের আপনজনও কেউ নেই। তাই সারা দেশের মানুষ তাঁর আপন হয়ে উঠল। তিনি ফিরে আসার আগে ছয় বছর স্বৈর শাসকরা বোঝাতে চেয়েছিল তারাই জনগণের মুক্তিদাতা। কিন্তু সাধারণ মানুষ ক্ষণে ক্ষণে জেগে উঠছিল, বিচার দাবি করছিল জাতির পিতার হত্যাকা-ের। সেনা শাসকের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকায় জনগণের শাসনের দাবি নিয়ে রাজনীতির মাঠে রাতদিনের এক অক্লান্ত কর্মী হয়ে উঠলেন শেখ হাসিনা। তিনি নেতা কিন্তু তারও বেশি তিনি কর্মী। কারণ দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা তাঁর প্রাত্যহিক কর্মে পরিণত হলো। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় আবেগসিক্ত বর্ণনা আছে তাঁর নিজের লেখা গ্রন্থগুলোতে। কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, শেখ হাসিনা যখনই বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রেখেছিলেন তখনই বুঝে নিয়েছিলেন-‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু পথ।’ তাঁর ‘পথে পথে গ্রেনেড ছড়ানো’। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১৯৮১ সালের ১৭ মে) আগে ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজউইক পত্রিকায় বক্স আইটেমে তাঁর সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, জীবনের ঝুঁকি আছে এটা জেনেও তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চের সামরিক শাসন জারির দুইদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমি সামরিক শাসন মানি না, মানবো না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবোই করবো।’ তাই তো কবি ত্রিদিব দস্তিদার শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে লিখেছেন, ‘আপনিই তো বাংলাদেশ’।
২.
এদেশে শেখ হাসিনার পুনর্জন্মের দিন থেকেই রাজনীতির মঞ্চে দ্রুত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ ও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। সেদিন সেই স্লে¬াগান প্রকম্পিত হয়ে উঠল আকাশে-বাতাসে; রাজপথ জনগণের দখলে চলে গেল। সেনাশাসক জিয়া এতোদিন তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেই বছরই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জিয়ার অভিসন্ধি ভেস্তে যায়। সেদিনের ঢাকায় লক্ষ মানুষের বাঁধ ভাঙা স্রোত তাঁকে কেন্দ্র করে সমবেত হয়েছিল। তাদের কণ্ঠে ছিল বিচিত্র ধ্বনি ও প্রতিধ্বনি। ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ আরো ছিল- ‘শেখ হাসিনা আসছে, জিয়ার গদি কাঁপছে, গদি ধরে দিব টান জিয়া হবে খান খান।’ আবালবৃদ্ধ জনতা আবেগে অশ্রুসিক্ত হয়ে উচ্চারণ করেছিলেন- ‘মাগো তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব।’ সেদিনের প্রত্যয় শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারই বাস্তব করে তুলেছেন। জাতির পিতা হত্যাকা-ের কয়েকজন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাকি পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে এনে শীঘ্রই ফাঁসি দেয়া হবে বলে আমরা মনে করি। ১৭ মে সম্পর্কে দৈনিক বাংলা’র সংবাদ ছিল এরকম- ‘ঐদিন কালবোশেখির ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল।’ দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমান থেকে নেমেই তিনি দেশের মাটিতে চুমু খান। এ সময় বিপুল জনতার বিচিত্র স্লোগান মুখরিত করে তুলেছিল ঢাকার রাজপথ। যেন সূর্যোদয় হয়েছে, নতুন দিনের পথ চলা শুরু হলো। অশ্রুসজল সেই দিনের কথা আছে নানাজনের স্মৃতিচারণে। ঢাকা শহর তখন মিছিলের নগরী। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে বিকাল ৩.৩০ মিনিটের পর বিমানবন্দরের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি মাটি স্পর্শ করার আগেই হাজার হাজার উৎসাহী জনতা সকল নিয়ন্ত্রণের সীমা, নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ফেলে। নিরাপত্তা কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় অবশেষে তিনি নেমে আসেন; হাত নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু তাঁর অন্তরে ততক্ষণে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। বিকাল ৪.৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা একটি ট্রাকে ওঠেন। এ সময় বজ্র নিনাদে জনতার স্লোগান চলছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক যখন ফুলের মালা পরিয়ে অভিবাদন জানান তখন বাঁধ ভাঙা কান্নার জোয়ার এসে ভাসিয়ে দেয় শেখ হাসিনাকে; কেঁদে ওঠেন তিনি। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি কেবল পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সঙ্গেই তুলনীয়।
দুঃখী রাজকন্যার মতো হৃত রাজ্য, হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য শেখ হাসিনার জন্ম ও পুনর্জন্মের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল দেশ ও জনতার। পূর্বেই বলেছি তাঁর পুনর্জন্মের আগে নৈরাজ্যের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছিল মানুষ। পাকিস্তানি শাসক, দালাল-রাজাকার ও আন্তর্জাতিকভাবে কয়েকটি দেশের বাধা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এবং আপামর জনগণের অংশগ্রহণে ৯ মাসের মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করার প্রচেষ্টা সফল হতে দেয় নি খুনিরা। ফলে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পরবর্তী সামরিক শাসকদের অভ্যুত্থান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে। দেশ অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়। দেশের প্রতিকূল এক সময়ে জননেত্রীকে আমরা রাজনীতির মঞ্চে পেলাম। তিনি দায়িত্ব নিলেন এবং লাখো জনতার সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন-‘আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন। ভাই রাসেল আর কোন দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন। …বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’ গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশি-বিদেশী চক্রান্ত ও হাজারো প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি জনগণের পাশেই আছেন; ভবিষ্যতে থাকবেনও। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০০৭ সালের সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল পর্যন্ত একাধিক বার বন্দি অবস্থায় নিঃসঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে হয়েছে তাঁকে।
৩.
১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশ ও জনগণের কাছে প্রত্যাবর্তনের(জন্মান্তরের) মতো শেখ হাসিনার দ্বিতীয় প্রত্যাবর্তনও(তৃতীয় জন্ম) ছিল আমাদের জন্য মঙ্গলকর। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তাঁর দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। কিন্তু ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী তাঁকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে ৩৩১ দিন কারাগারে বন্দি করে রাখে। সেসময় গণমানুষ তাঁর অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তাঁর সাবজেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যুবরণ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। কারণ সে সময় আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সত্যকথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে এদেশকে নরকে পরিণত করেছিল। নেত্রীকে গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্ভীক; এখনো তেমনটাই আছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনোত্তর জোট সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন-ধর্ষণ তাঁকে কতটা ব্যথিত করেছিল তা এখনও বিভিন্ন সভা-সমাবেশের বক্তৃতায় শুনে থাকি আমরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে নতুন প্রজন্মকে যথার্থ ইতিহাসের পথ দেখিয়েছেন তিনি নিজেই।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর থেকে একাধিকবার শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৮৩ সালের ১৬ আগস্ট জননেত্রীর ওপর ঢাকায় গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর বাসভবন আক্রান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি- শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে একটি বিরাট মিছিল নগরীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে ৪০ জন নিহত হন। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ধানম-ি ৩২ নম্বরের বাসভবনে থাকাকালে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির ক্যাডাররা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়ে। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচনের সময় ধানম-িতে তাঁর ওপর বন্দুকধারীরা রাসেল স্কোয়ারে আক্রমণ চালায়। ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর- ট্রেনে ভ্রমণকালে ঈশ্বরদী ও নাটোরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা জননেত্রীর ওপর গুলিবর্ষণ করেছিল। এভাবেই দেশ-বিদেশে কখনো গোপনে কখনো বা প্রকাশ্যে চলেছে হত্যার ষড়যন্ত্র। ২০০০ সালের ২০ জুলাই পূর্ব নির্ধারিত জনসভাস্থল কোটালিপাড়া থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি বিস্ফোরকের বোমা উদ্ধার করা হয়। ২০০৪ সালের ৫ জুলাই তুরস্কে সফরের সময় জননেত্রীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ছিল ভয়াবহতম দিন। অজ¯্র গ্রেনেড নিক্ষেপের পরও নেতাকর্মীদের মানবঢালের বেষ্টনীর কারণে প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা। তবে নিহত হন অনেক আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী। এছাড়া অনলাইন, ব্লগ এবং ফেসবুকে জননেত্রীকে কটাক্ষ করে খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছে বারবার। হত্যার প্রচেষ্টা ও হুমকির মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে- এটা নিশ্চিত। তাই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে সকল অশুভ শক্তির মোকাবেলা করতে হবে। সামনে বাধা এলে তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবেলায় সচেষ্ট থাকতে হবে। ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে দেশের স্বাধীনতা ও স্বপ্নকে হত্যা করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা জীবিত রয়েছেন। তিনিই তাঁর পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা বসে নেই; ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাই সকলকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
৪.
মূলত ১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে রেখেছেন সাফল্যের সুদীর্ঘ স্বাক্ষর। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দশম জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেত্রী। তিনি তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনা ২০১০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর অনলাইন জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০ নারীর মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে ছিলেন। এ ছাড়া ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থানে, ফোর্বসের করা ২০১৬ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় ৩৬তম স্থানে আছেন তিনি। ২০১০ সালের ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসের শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা সিএনএন ক্ষমতাধর ৮ এশীয় নারীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে ছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা জয়ের জন্য তিনি সাউথ সাউথ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭০তম অধিবেশনে পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা, নারী অধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ধারাবাহিকতা রক্ষায় তিনি আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমাদৃত। আর বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে তিনি জনগণের কাছে আজ নন্দিত। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ সময়: ১০:৩১:২৬ ১৬৫৬ বার পঠিত