বঙ্গ-নিউজঃ আজ ১৬ মে। ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস। ভারতীয় পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৭৬ সালের এই দিনে রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে মারণবাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো মানুষের লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকে দিনটি ফারাক্কা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলোচনা সভা, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ওই দিন রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে লংমার্চ শুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ১০টায় রাজশাহী থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। হাতে ব্যানার আর ফেস্টুন নিয়ে অসংখ্য প্রতিবাদী মানুষের ঢল নামে রাজশাহীর রাজপথে। বেলা ২টায় হাজার হাজার মানুষের স্রোত গোদাগাড়ীর প্রেমতলী গ্রামে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে মধ্যাহ্ন বিরতির পর আবার যাত্রা শুরু হয়। সন্ধ্যা ৬টায় লংমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাতযাপনের জন্য সে দিনের মতো শেষ হয়। মাঠে রাতযাপন করে পরদিন সোমবার সকাল ৮টায় আবার যাত্রা শুরু হয় শিবগঞ্জের কানসাট অভিমুখে।
ভারতীয় সীমান্তের অদূরে কানসাটে পৌঁছানোর আগে মহানন্দা নদী পার হতে হয়। হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেন এই লংমার্চে। তারা নিজেরাই নৌকা দিয়ে কৃত্রিম সেতু তৈরি করে মহানন্দা নদী পার হন। কানসাট হাইস্কুল মাঠে পৌঁছানোর পর সমবেত জনতার উদ্দেশে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তার জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।
মওলানা ভাসানী ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তাদের জানা উচিৎ বাংলার মানুষ এক আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। কারও হুমকিকে পরোয়া করে না। তিনি বলেন, আজ রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কানসাটে যে ইতিহাস শুরু হয়েছে তা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করবে।’ মওলানা ভাসানী এখানেই লংমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে লংমার্চ সমাপ্ত হলেও সেদিন ভারতীয় সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছিল।
ভারতের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের বৃহৎ একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চল ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মায় আজ পানি নেই। ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অর্ধশত নদী বিলুপ্তির পথে। অন্য দিকে ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে স্থানভেদে ২৫ ফুট থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।
১৯৯৬ সালে ৩০ বছর মেয়াদী চুক্তি অনুযায়ী খরা মওসুমের জানুয়ারি মাস হতে মে মাসের মধ্যে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি দেবার কথা বাংলাদেশকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, ২০০১ সাল পর্যন্ত চুক্তি অনুযায়ী পানি মিলছে মাত্র ৩ বছর । পানি বিশ্লেষকরা বলেছেন, উজানে একাধিক বাঁধ দিয়ে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় ফারাক্কা পয়েন্টেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে । এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হয়ে যেতে পারে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে সোমবার বেলা ৩টায় ঢাকার কলাবাগানে ৩৭১ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন কার্যালয়ে ফারাক্কা লংমার্চ দিবস জাতীয়ভাবে পালনের দাবিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম-এল) একাংশের আহ্বায়ক কমরেড হুমায়ুন কবির, গণতান্ত্রিক কর্মী শিবিরের সদস্য সচিব প্রকৌশলী মোজাহারুল হক চৌধুরী শহীদ, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হারুন-অর-রশিদ খান, সিএলএনবির চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশীদ, গ্রীণবাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুলতানা বেগম, প্রতিবাদী তারুণ্যের আহ্বায়ক মো. মাসুদুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে গঙ্গা চুক্তি হলেও বাংলাদেশ পানি পাচ্ছে না। চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে ভারত। তিস্তা চুক্তিও হচ্ছে না। পানি বঞ্চনার শেষ হচ্ছে না। ১৬৭টি অভিন্ন নদীর ইতিহাসও মুছে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্ম জানবে না ১৬৭টি অভিন্ন নদীর কথা। এখন জীবন্ত ৫৭টি নদীর মধ্যে ৫৪টি নদীর পানি দিবালোকে লুট হচ্ছে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ নিরুপায় ভুক্তভোগী, দিল্লীতে দৌড়ঝাঁপ বন্ধ করে জাতিসংঘ সহ বিশ্ব ফোরামে পানির দাবি উপস্থাপন করা আবশ্যক। দিল্লীতে দৌড়ঝাঁপ অসারতায় পর্যবসিত হয়েছে। দ্বিপাক্ষিক আলোচনা নয় বহুপাক্ষিক চাপ প্রয়োগ করতে দ্বিধান্বিত হলে কোন দিন পানি আগ্রাসন বন্ধ হবে না। ফারাক্কা লংমার্চের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারলে কোনদিন আমরা মুক্তি পাব না।
এছাড়া ন্যাপ ভাসানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা, ভাষানী পরিষদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি পৃথক ভাবে আলোচনা সভা, মানববন্ধন, র্যা লিসহ নানা কর্মসূচি পালন করবে আজ।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫৬:৪৩ ৫৪৮ বার পঠিত