বঙ্গ নিউজঃ ফজলুল হক গাজীপুর প্রতিনিধি ॥
আইন অমান্য করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কৃষি জমির ওপর ও নদীর তীরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় মারাত্মকভাবে পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের সমস্যা বাড়ছে। এসব অবৈধ ইটভাটা স্থাপন বন্ধের দাবিতে রোববার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এসময় মুসলিম ও হিন্দু পরিবারের সহস্রাধিক লোকজন একটি র্যালী বের করে।উপজেলা কৃষি অফিস ও মানববন্ধন সূত্রে জানা গেছে, ইট প্রস্থত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ অমান্য করে কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতিপূর্বে ২৬টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। চলতি বছরই ১০টি ইটভাটা স্থাপনের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৫টির নির্মাণ কাজ সস্পূর্ণ হয়েছে। এ সকল ইটভাটা ফসলি জমি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদরাসা, বাড়ির সীমানা, নদীর তীর ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে। ভাটাগুলোতে ইট তৈরির প্রধান উপাদান মাটি আবাদি জমির উপরি অংশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। কৌশলে ফসলি জমির উর্বর মাটি নামমাত্র দামে কিনে কেটে নিচ্ছেন ইটভাটা মালিকরা। এ কারণে দিন দিন কৃষি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে, কৃষির উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে আবাদি জমির সঙ্কট। এছাড়া অধিকাংশ ইটভাটার সামনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির জ্বালানি কাঠ। নিষিদ্ধ হলেও ইটভাটায় অবাধেই এসব কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার বাতাসও দূষিত হয়ে পড়ছে। ফলে মানুষ চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এলাকার গাছপালা ও মরে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ইটভাটার বেশিরভাগ মালিকই প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন, পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যান, পরিবেশবাদী সংগঠন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ করেই এসব ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ফলে তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন না এলাকাবাসী। একদিকে ইটভাটাগুলোর চিমনি দিয়ে অনবরত নির্গত হচ্ছে দূষিত কালো ধোঁয়া। এ দূষিত কালো ধোঁয়ার প্রভাবে আবাদি জমির ফলন কমে যাচ্ছে, এছাড়া দেশীয় ফলের মুকুল ও গুটি ঝরে যাচ্ছে, গাছপালা গুলোতে আগের মত ফল ধরছেনা। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সকল বয়সি মানুষের সর্দি, কাশি, হাঁপানি, চোখ উঠাসহ নানা রোগ-ব্যাধি। অপরদিকে প্রায় প্রতিটি ইটখোলায় রয়েছে শিশু শ্রমিক। বয়স্কদের তুলনায় অর্ধেক মজুরিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে প্রায় একই কাজ করানোর জন্য ইটভাটায় শিশুশ্রম চলছে। বছর দুইয়েক আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় কালিয়াকৈর উপজেলায় দিন দিন ইটভাটা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরই দুই ফসলি কৃষি জমিতে ১০টি ইটভাটা স্থাপনের কাজ চলছে। এদের মধ্যে উল্টাপাড়া নামে এক গ্রামেই দুই ফসলি কৃষি জমিতে ৫টি ইটভাটা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজনের নেতৃত্বে জোরপূবক ওই এলাকার ইরি ধান ক্ষেতের উপর লাল নিশাণ লাগানো হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে রোববার দুপুরে উল্টাপাড়াসহ পাশের মহরাবহ, গোপিনপুর, মুদিপাড়া, শাহবাজপুর, বামনাবহ, জেলেহাটি ৯টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধীক লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এসময় তারা একটি র্যালী বের করে। র্যালিটি কালিয়াকৈর-ধামরাই, মহরাবহ বেনুপুর-আশাপুর সড়কসহ কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে। হয় ইটভাটা উচ্ছেদ করো, নইলে মানুষের করো অন্য ঠাঁই এই শেৱাগান নিয়ে মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট কলামিষ্ট ডা. জয়নাল আবেদীন, কালুচন্দ্র মন্ডল, রুমা বেগম, মরুনী চন্দ্র মন্ডল, নিরামন নেছা, শাহানাজ বেগম, গোলাপী বেগম, শহিনুল ইসলাম জানান, জমির মালিক কাউকে কিছু না জানিয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে ওই এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের জন্য ইরি ধান ক্ষেতের মধ্যে লাল নিশান লাগানো হয়েছে। কিন্তু এখানে ধান ও শরিষা বুনে সারা বছরের খাদ্য সংগ্রহ করে থাকি। এখানে ইটভাটা হলে আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান জানান, ২০১৩ আইন অনুযায়ী দুই ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ। তারপরও কিছু কিছু মহল আইন অমান্য করে দুই ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা করা হচ্ছে। কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে ও এলজিইডি সড়কের পাশে ইটভাটা করা যাবে না। কৃষি জমির উপর ইটভাটার বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৪:০৯ ৪৭৭ বার পঠিত