বঙ্গ-নিউজ: ভারতের কোনও বিমানযাত্রী অভদ্রতা বা অসভ্যতা করলে এবার থেকে শাস্তির নির্দিষ্ট বিধান চালু করতে চলেছে দেশটির বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
প্রস্তাবিত এই শাস্তির বিধানটি আজ (শুক্রবার) প্রকাশ করা হয়েছে। কীধরণের অভদ্রতা অথবা অসভ্যতা বা মারামারি করলে কোনও যাত্রীকে কতদিন বিমানে চড়তে দেওয়া হবে না, সেটিও নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে।
বিমানযাত্রীদের একটি সংগঠন অবশ্য বলছে শাস্তির বিধানের সঙ্গেই প্রয়োজন যাত্রীদের শিক্ষিত করা কারণ বহু মানুষই হয়ত প্রথমবার বিমানে চড়ছেন - যারা না জেনেই অন্যায় করে ফেলতে পারেন।
কোন ধরণের অপরাধের জন্য কতদিন ‘নো-ফ্লাই লিস্টে’ কোনও ব্যক্তির নাম থাকবে, এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা আলোচনার জন্য আজ প্রকাশ করেছেন বিমান পরিবহন সচিব আর এন চৌবে।
তার কথায়, “নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী অভব্য আচরনের তিনটে শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম শ্রেনীতে থাকবে কটূক্তি বা খারাপ অঙ্গভঙ্গি, মদ্যপ অবস্থায় বিমানে ওঠা প্রভৃতি। এর জন্য দোষী হলে তিনমাসের জন্য কোনও বিমানে উঠতে দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় শ্রেণীর অপরাধের মধ্যে আছে যৌন হেনস্থা, শারীরিক আঘাত করা ইত্যাদি। এর জন্য ছমাস নো ফ্লাই লিস্টে নাম উঠবে।”
“তৃতীয় শ্রেণীভুক্ত আচরণের মধ্যে আছে জীবনহানির আশঙ্কা হয়, এরকম কোনও কাজ, হত্যার চেষ্টা বা বিমানের ক্ষতিসাধন, ককপিটে প্রবেশের চেষ্টা প্রভৃতি। এই পর্যায়ের অপরাধের জন্য ন্যূনতম ২ বছর বিমানে চড়তে দেওয়া হবে না,” বলছিলেন আর এন চৌবে।
একমাস ধরে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের মতামত নিয়ে চূড়ান্ত বিধি তৈরি হবে।
কালোতালিকাভুক্ত কোনও ব্যক্তি যাতে নাম ভাঁড়িয়েও শাস্তি চলাকালীন কোনও বিমানে টিকিট না কাটতে পারেন, তার জন্য টিকিট কাটার সময়েই আধার কার্ড বা পাসপোর্টের মতো কোনও পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করতে চলেছে বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
এই বিধানগুলি যাতে কোনও বিমান সংস্থা অপব্যবহার না করতে পারে, তার জন্যও একটি ব্যবস্থাপনা গড়ার প্রস্তাব থাকছে বলে জানিয়েছেন বিমান পরিবহন সচিব।
বিমানযাত্রীদের জাতীয় সংগঠন - এয়ার প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া এই বিধানগুলিকে স্বাগত জানিয়েও বলছে এখনও অনেক কিছু করা বাকি।
ওই সংগঠনটির রাষ্ট্রীয় চেয়ারম্যন ডি সুধাকর রেড্ডির কথায়, “এখনও অনেক কিছু করণীয় আছে। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল দুর্ব্যবহারের বিষয়ে যাত্রীদের শিক্ষিত করে তোলা। অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতোই ভারতেও কম খরচের বিমান পরিবহন বিস্তৃতি লাভ করেছে - বহু কম আয়ের মানুষও এখন বিমানপরিবহন ব্যবহার করতে পারেন। রোজই এমন বহু মানুষ আছেন যারা প্রথমবার বিমানে চড়ছেন, যারা হয়তো জানেনই না যে কোনটা করলে শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে।”
একটা লিখিত নির্দেশাবলী সব বিমানযাত্রীর হাতে ধরিয়ে দেওয়া প্রয়োজন এবং এই প্রক্রিয়াটা নিয়মিত চালানো উচিত বলে মন্তব্য এপিএআইয়ের প্রধান ডি সুধাকর রেড্ডির।
রবীন্দ্র গায়কোয়াড নামে শিবসেনার এক সংসদ সদস্য এয়ার ইন্ডিয়ার এক বয়স্ক কর্মীকে জুতোপেটা করার ঘটনার পর থেকেই বিমানযাত্রীদের অসভ্যতা বা অভব্যতা নিয়ে সরব হয়েছিল ভারতের বিমান সংস্থাগুলি।
মার্চ মাসের ওই ঘটনার পরে সংসদ সদস্যকে সব বিমান সংস্থাই নো ফ্লাই লিস্টে রেখে দিয়েছিল - অর্থাৎ তিনি কোনও বিমানেই চড়তে পারছিলেন না।
রাজনৈতিক নেতা - মন্ত্রীদের অনেক অনুরোধ উপরোধেও বিমানসংস্থাগুলি মি. গায়কোয়াডকে বিমানে চড়তে দেন নি।
তারপরেই আজ বিমানযাত্রীদের দুর্ব্যবহার রোধে নতুন ব্যবস্থা নিল অসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ।