ওমর সানিঃ-বঙ্গ-নিউজঃ গায়ক ইমরানের ক্যারিয়ারের শুরু একটি রিয়েলিটি শো থেকে। চ্যানেলের সেই রিয়েলিটি শো’তেই বেশ কিছু বিতর্কের বাহাস তৈরি হয়েছিল তাকে নিয়ে। অতঃপর বিটিভির এক অনুষ্ঠানে ইমরান দেশ বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সাথেই বেয়াদবি করে বসেন। তা নিয়ে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনও পত্রিকায় স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন। সে খবর ইত্তেফাকেও প্রকাশ হয়েছিল। এছাড়া আমেরিকা সফরে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের স্বাক্ষী হিসেবে যখন বাংলাদেশি কমিউনিটিকে লজ্জায় ফেলে দেয় ইমরান, তখনও তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। সর্বশেষ বর্তমানে নিজের মিউজিক ভিডিওতে নকল নিয়ে তর্ক উঠছে।
অথচ ক্যারিয়ারে একের পর এক সুর নকল কিংবা নিজের মিউজিক ভিডিও নকলের খবরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে ইমরান বলছেন, ‘এসব কিছু নয়। এর চেয়েও অনেক বড় নকল হয়েছে আর এরকম ভিডিও বানানো এখানে এই প্রথম নয়। অনেক কিছুই আছে যা হুবহু নকল করে বানানো হয়।’
অর্থাৎ অন্য বড় চুরির উদাহরণ দিয়ে নিজে বাঁচার চেষ্টা করছেন। সাম্প্রতিক মিউজিক ভিডিও নকলের বিতর্কে খোদ শিল্পীই সেটিকে আরো যুক্তিযুক্ত করানোর চেষ্টা করেন। আর এ ধরণের চর্চায় আমাদের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির প্রতি সাধারণ দর্শকদের যে সম্মান তা নিয়েও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন হত হচ্ছে অনেককেই।
সম্প্রতি এক আড্ডায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তরুণ কন্ঠশিল্পী বলেন, ‘আমি মিউজিক করি বলে বাড়িওয়ালা আমাকে আরেফিন রুমী, ইমরানকে নিয়ে জড়িয়ে নানান কথা বলে বাড়ি ভাড়া দেয়নি। সমাজে এই যদি হয় তাদের আত্মসম্মানের অবস্থান তাহলে আর কি প্রাপ্তি থাকে।’
সম্প্রতি বেলাল খান নিজের ক্যারিয়ারে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত হলেও এই তরুণ কন্ঠশিল্পীও তার সাম্প্রতিক মিউজিক ভিডিওতে যে ন্যাক্কারজনক অশ্লীলতা আর নকলবাজি দেখিয়েছেন তা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল সামাজিক ওয়েবসাইটে। তরুণ শিল্পীদের ভেতরে এই গুটিকতক শিল্পীরা ডোবাচ্ছেন গোটা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির ইমেজ। এটা অধিকাংশ সিনিয়র শিল্পীরা এ নিয়ে লজ্জা আর ঘৃণা প্রকাশ করেছেন।
আরেফিন রুমীর ব্যক্তিগত জীবনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে ঔদ্ধত্ত্ব আচরণ। দুরবীন ব্যান্ডের শহীদের হাত ধরে যে রুমী ইন্ডাস্ট্রিতে আসে পরে তার সাথেই নানামূখী প্রতারণা, একের পর এক নকল সুরের কাজ এসবের কারণে বাজার চলতি ইউটিউব হিট বাড়ছে হয়তো এসব দায়িত্বহীন গায়কদের, কিন্তু সঙ্গীতকে পেশা করে যে আত্মমর্যাদায় তরুণরা কথা বলতে পারতো একসময় সেই সম্মানের অবস্থান আজ ধুলোয় মিটিয়ে দিয়েছেন গুটিকতক শিল্পী।
আজ দেশের বাইরে গায়িকা পড়শী নিজের অডিয়েন্স মাতাতে না পেরে ‘লুঙ্গি ড্যান্স গাওয়া শুরু করেন, কাণ্ডজ্ঞ্যানবিবর্জিত হয়েই। তার ভিডিও সাধারণ দর্শকেরা আপলোড করে নিন্দা জানান। কতটা সম্মান তারা বয়ে নিয়ে আসেন বিদেশের মাটিতে !’
অন্যদিকে মিউজিক ভিডিও কালচারে সম্প্রতি গায়িকা কনা ভারতীয় একটি গানের হুবহু নকলের পরও পত্রিকায় দুঃখ প্রকাশের বিপরীতে সেটিকে জাস্টিফাই করার জন্য ঔদ্ধত্বের মতো আচরণ করেন। সাংবাদিকদের তার প্রতিপক্ষ বলে জ্ঞান দেন। এই যখন ইন্ডাষ্ট্রির গায়ক-গায়িকাদের আচরণ, সঙ্গীত সমাজে যখন চোরের মা’দেরই বড় গলা- তখন পরবর্তী নতুনেরা যে সেই চৌর্যবৃত্তিকেই নিজের নিছক জনপ্রিয়তার অপকৌশল ভাববেন , এটাই তো স্বাভাবিক। তাই সঙ্গীতের অবক্ষয়ের শেকড়ে গুটিকতক কাণ্ডজ্ঞানহীন কন্ঠবিক্রেতা দায়ী।
ইন্ডাষ্ট্রিকে কলুষিত করছে আজ এসব শিল্পীরাই। অনেকেই মিউজিক ভিডিও মেকারদের ওপরে দোষ চাপিয়ে নিজেরে ভারমুক্ত করছেন। আদতে নির্মাতারা এই নকলবাজের জন্য অপরাধী হলেও মূল লগ্নিকারী বা পরিকল্পক তো শিল্পী নিজেই। ততাই একজন মেকার যখন শিল্পীকে বোঝান যে, অমুক গানটি নকল করলেই আপনি হিট। বাজারে আপনার লাখ লাখ ইউটিবি ভিউয়ার্স বাড়বে , তখন চুলোয় যায় গায়ক-গায়িকাদের নিজস্ব নৈতিকতা।
সর্বাধিক নকল ভিডিও নির্মাতা হিসেবে চন্দন চৌধুরী আজ রেকর্ডের খাতায় নাম লেখাতে চলেছেন। অথচ কেন শিল্পীরা তাকে দিয়ে সেটি করাচ্ছেন সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ। আর যে কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয় দিলে তার অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নৈতিকতার অবক্ষয় যে ঘটে থাকে, তা-ই দেখছে আজকের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। আর সেই অবক্ষয়ের ধারাবাহিক নাটকের বর্তমান নায়ক আজ ইমরান। সহশিল্পীরা পড়শী, বেলাল খান, আরেফিন রুমী কনাসহ আরো ক’জন।
গায়ক ইমরানের ব্যক্তিজীবনে নারীসঙ্গ থেকে শুরু করে বিশৃঙ্খলা বিতর্ক আর ঔদ্ধত্ব তাদের সঙ্গী। এই পর্যায়ে নিজের কোনো অন্যায়ের আত্মপক্ষ সমর্থণের ক্ষেত্রে ইমরান বললেন, শ্রোতারা নিচ্ছে কিনা সেটিই বড় কথা।’
অর্থাৎ শ্রোতারা তাকে নিয়ে নীল ছবি চাইলেও তিনি সেটি দেবেন !
এমন অবক্ষয়ের প্রতীক হিসেবে তথাকথিত জনপ্রিয় গায়করা পথ হাঁটার পরও একাধিক মিডিয়ার কল্যান অকল্যানর ফাঁক গলেই পার পেয়ে যায় তারা। আর ফেসবুক বা ইউটিউবে তো এখন ডলার খরচ করলেই নিজের হিট কেনা যায়। এই স্থুল প্রতিযোযোগিতার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর আজ তারা।
তাই অধিকাংশ সিনিয়র শিল্পীরা এসব বিতর্কের আলোচনায় লজ্জায় নিজেদের চোখ কান ঢাকেন। দেশের বাইরে বা ঢাকার বাইরে কোনো মফস্বলে আরেফিন রুমী উচ্ছৃঙ্খল জীবন, কনা, ইমরানদের এই বেয়াদবী আচরণ কিংবা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত কোনো গায়কের ভিডিও যখন এতটা অশ্লীল নোংরামিতে ছেঁয়ে যায় তখন তাদেরকেও সাধারণ বিবেকবান মানুষের নানান কথা শুনতে হয়। আজ ধারাবাহিকভাবে সেই অবক্ষয়ের পথেই এই মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রি।
যে কারণে আমরা আজ ভিনদেশী মিউজিক মুখী। কারণ যদি অডিও ভিডিও ওপার বা পাশ্চাত্য থেকেই নকল হতে থাকে ক্রমশ, তবে দর্শকেরা সেই আসলের দিকেই ছুটবেন এটাই তো স্বাভাবিক। একারনে আজ বড় বড় ইভেন্টে দেশী শিল্পীরা থাকেন ওয়ার্মআপ গায়ক হিসেবে। শমী কায়সারের মতো গুণী ব্যক্তিত্বরা বিশাল স্টেজে উঠে বলেন অরিজিৎ সিং এর কনসার্ট করা নাকি তার স্বপ্ন ছিল। লজ্জায় ডুবতে হয় সকলের এ ধরণের কমেন্টে! কারণ এই অরিজিতকে নকল করেই তো ইমরানের উত্থান। কিংবা আরেফিন রুমী গোত্রিয় শিল্পীদের। তাই তাদের নিয়ে কেনই বা স্বপ্নের পথে হাঁটবেন গুণী ব্যক্তিত্বরা? সেই প্রশ্নও তো থেকে যায় ?
প্রিয় পাঠক/দর্শক সর্বশেষ টিকেট কনসার্টে আরেফিন রুমী বা ইমরান কনাদের ১০০ টাকা টিকেটে কে দেখতে গিয়েছেন আপনি বলতে পারবেন? তার রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ জেমস, আইয়ুব বাচ্চু , মাইলস, আর্ক, মাকসুদসহ জনপ্রিয় শিল্পীদের ২ থেকে ৫ হাজার টাকার টিকেট কনসার্টও সফল হবার রেকর্ড আছে অগণিত।
অবক্ষয়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তাই এই দায়িত্বহীনদের প্রতিরোধ করাটাই এখন সবচেয়ে জরুরি, সবচেয়ে সময়োপযোগি কাজ। নয়তো অবক্ষয়ের যে কালশাপ হয়ে এরা ক্রমশ হানা দিচ্ছে তাতে- শিল্পী পরিচয়টা সম্মানের বিপরীতে সকলে ব্যবহার শুরু করবে, সেদিন খুব দূরে নয় ! নিউজ সুত্রঃ- ইত্তেফাক
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৭:১০ ৬০৭ বার পঠিত