বঙ্গ-নিউজঃ নিজের উদ্ভাবিত ‘আওয়াজ রিচার্জেবল সাউন্ড সিস্টেম’ সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানাচ্ছেন সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার। গত ২৬ এপ্রিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলোনিজের উদ্ভাবিত ‘আওয়াজ রিচার্জেবল সাউন্ড সিস্টেম’ সম্পর্কে দর্শনার্থীদের জানাচ্ছেন সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার। গত ২৬ এপ্রিল জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর থেকে ছবিটি তোলা l প্রথম আলো
কালো রঙের ছোট আকৃতির চারকোনা বাক্স। বাক্সের ভেতরে ব্যাটারি, দুটি সাউন্ডবক্স ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। বাক্সের সঙ্গে আছে মাইক্রোফোন। পাশে সৌরবিদ্যুৎ বা সোলার প্যানেল। সবকিছু মিলিয়ে ‘আওয়াজ রিচার্জেবল সাউন্ড সিস্টেম’। যার মূল কথা, এই সাউন্ড সিস্টেম চলে সৌরবিদ্যুতে। মূল বিশেষত্ব, এর ব্যাটারি কিছু চার্জ ধরে রাখে, যা দিয়ে আলোস্বল্পতার সময়েও চালানো যায় সাউন্ড সিস্টেম।
এর উদ্ভাবক চট্টগ্রামের সৈয়দ মুহাম্মদ মঈনুল আনোয়ার। তিনি বলেন, এটি কোনো মৌলিক আবিষ্কার নয়, কয়েকটি জিনিসকে সমন্বয় করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এখন অ্যাসেম্বলির সময় জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং শপথ পাঠ উৎসাহিত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাইক্রোফোন ও সাউন্ড সিস্টেম কিনেছে বা কিনছে। কিন্তু যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই অথবা অ্যাসেম্বলির সময় বিদ্যুৎ চলে গেলে এই সাউন্ড সিস্টেম আর ব্যবহার করা যায় না। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ করে চর ও হাওরাঞ্চলের বিদ্যালয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা মাথায় রেখে সৌরবিদ্যুচ্চালিত সাউন্ড সিস্টেম তৈরি করেছেন মঈনুল আনোয়ার।
ঢাকায় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ প্রদর্শনের জন্য এই উদ্ভাবনটিকে নির্বাচন করে। পরে ৪৩টি উদ্ভাবন থেকে যে পাঁচটিকে কর্তৃপক্ষ পুরস্কৃত করে এই সাউন্ড সিস্টেমটি তার মধ্যে অন্যতম।
পুরো সাউন্ড সিস্টেমটি বেশ হালকা। খোলা মাঠ, কমনরুম, ছোট মিলনায়তনে এটি ব্যবহার করা যায়। সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় দুর্যোগকালীন সময়ে সতর্কতা জারির ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার উপযোগী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল বেলায় অ্যাসেম্বলি হয় বলে তখন পর্যাপ্ত রোদ ও আলো থাকে। তাতে সহজেই এই সোলার সাউন্ড সিস্টেমটি ব্যবহার করা যায়।
মঈনুল আনোয়ার বলেন, গ্রামের অনেক বিদ্যালয়ে চীন থেকে আনা রিচার্জেবল সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। সেগুলোর ব্যাটারি বিদ্যুতের সাহায্যে চার্জ করতে হয় বলে যেখানে শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানে হাটবাজারে টাকা দিয়ে চার্জ করিয়ে আনতে হয়। এটা আরেক বিড়ম্বনা। তিনি বলেন, ‘আমার সাউন্ড সিস্টেমটিতে সৌরশক্তিতে চলে বলে বিদ্যালয়ের অ্যাসেম্বলি চলার সময় রোদে রেখে এটি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করা যায় এবং চার্জও ধরে রাখা যায়।
সাউন্ড সিস্টেমে ১ দশমিক ৩ অ্যাম্পিয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা দিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত সাউন্ড সিস্টেমটি ব্যবহার করা যায়।
একটি সম্পূর্ণ ‘আওয়াজ সাউন্ড সিস্টেম’ তৈরিতে খরচ পড়ে ৩ হাজার ২০০ টাকা। কেউ চাইলে সোলার প্যানেল ছাড়া শুধু সাউন্ডবক্স অংশটুকুও নিতে পারেন, তাতে খরচ আরও কম পড়বে। মঈনুল আনোয়ার জানান, ইতিমধ্যে ১৬০টি বিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান তাঁর কাছ থেকে এটি সাউন্ড সিস্টেম নিয়েছে। অচিরেই এটি বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করার ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
সুত্রঃ প্রথম আলো
বাংলাদেশ সময়: ৮:১৬:০৫ ৫১২ বার পঠিত