বঙ্গ-নিউজঃ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের নিকটে বহুল সমালোচিত ও বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণে ভারতের সাথে ১৬০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে ফেলেছে বাংলাদেশ। শিগগিরই এর নির্মাণকাজও শুরু হবে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে নয়াদিল্লিতে এই চুক্তিপত্র বিনিময় করে দুই দেশ। তবে এ ঋণচুক্তি সই বা চুক্তিপত্র বিনিময়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে না জানিয়ে অনেকটা গোপনে সম্পন্ন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এটি প্রধানমন্ত্রীর সফর-সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ছিল না বলেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। সফররত অবস্থায় দিল্লিতে সকল পক্ষ উপস্থিত ছিল বলেই সুবিধাজনক হওয়ায় উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে চুক্তিটি তখনই সই করা হয়।
মন্ত্রণালয় থেকে আরো জানা গেছে, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য এবং ভারতে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট (এক্সিম) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকিনহা পরস্পরের মধ্যে চুক্তিপত্র বিনিময় করেন।
বিআইএফপিসিএলের সঙ্গে প্রকল্পের ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিম ব্যাংকের সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তিপত্র ১০ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনিময় করা হয়। এ সময় সেখানে ভারতের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন সিআইআইয়ের চেয়ারম্যান আদি গোদরেজ, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ-সচিব ও বিআইএফপিসিএলের চেয়ারম্যান আহমেদ কায়কাউস এবং উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশেই সমান অংশীদার হলেও ঋণের সার্বভৌম নিশ্চয়তা (সভরেন্ট গ্যারান্টি) দিবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকার। চূড়ান্ত ঋণচুক্তি অনুযায়ী যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা এই প্রকল্পের সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশ ব্যবহার করলেও এর লাভ-লোকসানের দায় বিআইএফপিসিএল তথা দুই দেশ সমানভাবে বহন করবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কেন এককভাবে ঋণের সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সূত্র এ বিষয়ে জানায়, যেহেতু প্রকল্পটি বাংলাদেশে বাস্তবায়িত হচ্ছে সেহেতু সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশেরই।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণস্থল ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের কাছে হওয়ার জন্য এর পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) নিয়ে দেশি-বিদেশি কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছে। তারা এই কেন্দ্রটিকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ধ্বংসকারী হিসেবে অভিহিত করে এটি অন্য কোথাও স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছে। উল্লেখ্য কেন্দ্রটির নির্মাণস্থল সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তসীমা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে।
দুই দেশের এমন চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। তিনি গতকাল বলেন, এই প্রকল্পের পরিবেশগত সমীক্ষা ও প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে। সরকার বলছে, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা নিয়ে তা নিরসন করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের ক্ষতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। তাই এখনো তাঁরা চাইছেন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।
অপর দিকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটা সরকারের অবিশ্বাস্য ধরনের একগুঁয়েমি। সংবেদনহীনতা ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব বোঝার অক্ষমতা এর কারণ। এ জন্য নিঃসন্দেহে সরকার দেশে-বিদেশে নিন্দিত হবে।’ তিনি জানান, সুন্দরবন রক্ষায় তাঁদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তাঁরা তাঁদের ভূমিকা পালন করে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:২৪:৪৮ ৩৪৩ বার পঠিত