ফয়সাল হাবিব সানি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি বঙ্গ-নিউজঃ : `এসো হে, বৈশাখ, এসো, এসো…’ কবিগুরুর এই চিরন্তন বাণীকে মন ও মননে ধারণ ও লালণ করে বর্ণাঢ্য অায়োজনে বৈশাখের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিলো গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্ররূপে পরিচিত বাংলা বিভাগ। বশেমুরবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগ যে প্রকৃত অর্থেই বাঙালিপনায় সিদ্ধহস্ত এই সত্যটিই যেনো সর্বসম্মুখে উন্মোচিত হলো অাবারও।
২০১৩ সালের ৩১ জানুয়ারি অানুষ্ঠানিকভাবে বশেমুরবিপ্রবিতে যাত্রা শুরু করে বাংলা বিভাগ। যাত্রালগ্ন থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব সহকারে পালণের মধ্য দিয়ে বশেমুরবিপ্রবিতে বাংলা বিভাগের পরিচিতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমান্বয়েই বাংলা বিভাগ পরিণত হতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের প্রিয় বিভাগরূপে। বিভাগের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের অান্তরিকতায় বশেমুরবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়াঙ্গনেও যথেষ্ট সুনাম কুড়াতে সমর্থ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা বিভাগ প্রতিবারের ন্যায় এবারও সেজেছে পহেলা বৈশাখের বর্ণিল সাজে।
টানা এক সপ্তাহ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঘর্মক্লান্ত অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে বাংলা বিভাগ পহেলা বৈশাখে তাদের বাঙালিপনারই আবার জানান দিলো পুরো বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস জুড়ে। মস্ত বড়ো ড্রাগন, হরেক রকম মাস্ক, বাহারি সব মুখোশে সজ্জিত পহেলা বৈশাখের অন্যরকম বাংলা বিভাগ ছিলো বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাঁড়ভাঙ্গা পরিশ্রমেরই ধন। তন্দ্রাহীন পরিশ্রমের ফসলস্বরূপ তারা অন্য এক উৎসবমুখর বাংলা বিভাগ অাবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে অার বাংলা বিভাগের এরকম কারুকার্য মুগ্ধতার চোখেই যেনো বারবার গ্রহণ করেছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনকের পুণ্যভূমি গোপালগঞ্জের মাটিতে প্রতিষ্ঠিতব্য ৫৫ একরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের দীপ্ত প্রভাতে সাড়ে ৯টার সময় এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। উক্ত শোভাযাত্রায় বাংলা বিভাগ ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগও প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে এ শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে গোপালগঞ্জ শহর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়। এ শোভাযাত্রায় বিভিন্ন বিভাগ অংশ নিলেও শোভাযাত্রাটিতে বাংলা বিভাগের সক্রিয় অংশগ্রহণই ছিলো সবচেয়ে ঈর্ষণীয়।
পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলা বিভাগের অায়োজনে নিজস্ব বিভাগে এক পান্তা উৎসবের অায়োজন করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একসাথে মিলে এ পান্তা ভোজনের অানন্দই ছিলো একেবারে অন্যরকম! এককথায়, বশেমুরবিপ্রবিতে বাংলা বিভাগের পহেলা বৈশাখ উদযাপন ছিলো ব্যাপক দৃষ্টিনন্দন ও অানন্দমুখর।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা বলেন, `পহেলা বৈশাখ উদযাপন অামরা প্রতিবছরই করে থাকি। তবে এবারের উদযাপনটা ছিলো একটু ব্যতিক্রম। অামরা অামাদের সাধ্যমতো পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সবরকম ব্যবস্থা করতে সমর্থ হয়েছি। এক্ষেত্রে অামার বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকামণ্ডলী ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নিরলস পরিশ্রমকে স্বাগত জানাচ্ছি। পহেলা বৈশাখ উদযাপন বিষয়ক প্রশাসনিক দায়িত্বে অামিও ছিলাম। পহেলা বৈশাখ উদযাপন বিষয়টি অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের অাওতাভুক্ত হয়ে থাকে। অামরা দেখি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগই পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, মাস্ক, মুখোশ তৈরির মধ্য দিয়ে এ দিনটিকে স্বাগত জানাচ্ছে। কিন্তু অামাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ নেই। অামরা বাংলা বিভাগই পহেলা বৈশাখ উদযপানের সকল কাজ প্রতিবছর করে থাকি। প্রতিবছরের মতো এবারও অামরা পহেলা বৈশাখ বরণ করে নিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিলাম। অার এবারের উদযাপনটা ছিলো একটু বেশিই জাঁকজমকপূর্ণ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্ররা এসে এবার অামাদেরকে নানাভাবে সহযেগিতা করেছে। তারা ছবি অাঁকিয়েছে, অামাদের কাজে উৎসাহ যুগিয়েছে ও দিবা-রাত্রি অামাদের সাথে অক্লান্ত পরিশ্রমের সঙ্গী হয়েছে। এক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের দুই মেধাবী ছাত্র মুরাদ এবং ইমোকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অামরা পহেলা বৈশাখে এবার `বৈশাখ মঙ্গল’ নামে একটা ম্যাগাজিনও প্রকাশ করেছি। অামি মনে করি, এ ম্যাগাজিনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভেতর সুপ্ত সাহিত্য প্রতিভা বিকাশের পথও অনেক বেশি সুগম হবে। এছাড়াও, এবারের পহেলা বৈশাখে অামাদের একটা গল্প ছিলো `স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস’। বিভিন্ন চিত্রাঙ্কনের মধ্য দিয়ে অামরা এ দিকটিও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি বলে অামি মনে করি। পহেলা বৈশাখের দিনটিতে অামাদের বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে। তারা বাহারি সাজে বিভিন্নরূপ ধারণ করেছে; কেউ সেজেছে কৃষক, কেউ কৃষাণী, কেউ পাহাড়ি মেয়ে, কেউ বর, কেউ কনে প্রভৃতি। সবকিছু মিলিয়ে বলব, বশেমুরবিপ্রবি’র বাংলা বিভাগ এগিয়ে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও অারও এগিয়ে যাবে।’
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মাধবী রায় বলেন, `প্রতিবারই অামাদের বিভাগ পহেলা বৈশাখ উদযাপন করে থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে এবারের পহেলা বৈশাখে যেনো অামরা অানন্দটা একটু বেশিই করেছি। খুব ভালো লাগছে নিজেকে বাংলা বিভাগের ছাত্রী ভেবে। পরের বছর হয়তো অামরা থাকব না, তবে অামাদের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা করছি।’
বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৭:১৮ ৬৬১ বার পঠিত