অনেকদিন ধরে চিন্তা করছি আমার প্রেরনার উৎস একজন মানুষের সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। কিন্তু লেখা হয়ে উঠছিল না। আজ বৃহস্পতিবার পেয়ে লিখে ফেললাম। অনেকে জানেন, তবুও আবার জানানো আপনাদের নতুন করে। একটু বড় লেখা হলেও আশা করি, পোস্টটা আপনাকে চরম ভাবে আলোড়িত করবে।Nicholas Vujicic বাংলায় উচ্চারন নিকোলাস ভয়্যাচিচ , সংক্ষেপে নিক নামেই সবাই চিনে।
আর দশটি মানুষের মতো স্বাভাবিক ভাবে ১৯৮২ সালে ৪ ডিসেম্বর অষ্ট্রেলিয়…ার ব্রিসবেনে জন্ম গ্রহন করেননি নিক। জন্মেছিলেন বিকলাঙ্গ হয়ে। আরও বিস্তারিত বলতে গেলে দুই হাত কিংবা শরীরের নিম্নাংশ কোনটাই ছিল না অলৌকিক জন্মের অধিকারী নিকের।
কাউকে ছুয়ে দেখার অনুভূতি কিংবা অন্য শিশুদের মতো হেঁটে- দৌড়ে চলার অনুভূতি কোনটারই সৌভাগ্য হয়নি নিকের। শৈশব থেকেই তাই সবার মাঝে থেকেও হয়ে পরেছিলেন আলাদা, যা তাকে চরম ভাবে হতাশ ও মনঃকষ্টের কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ৭ বছর বয়সে তার জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা ইলেক্ট্রনিক হাত এবং বাহুর ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে ঐ যন্ত্রটা ফেলে দিয়ে তার নিজের যা আছে তাই নিয়ে চলার দৃঢ সংকল্প করলেন।
হাত নেই, পা নেই, দুঃখও নেই। শুরু করলেন এক উচ্চাভিলাসী এক স্বপ্ন যাত্রার। “Life without limbs.”
সময়ের স্রোতে হারিয়েছে অনেকটা সময় আজ। যে মানুষটার সারা পৃথিবীর কাছে করুনা ছাড়া আর কিছুই প্রাপ্তি ছিল না, সেই মানুষটাই না কিনা আজ সারা পৃথিবীর স্বাভাবিক মানুষদের অনপ্রেরনার উৎস হয়ে উঠেছেন!!! সারা পৃথিবীর মানুষকে করুনা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। সত্যিই কি বিস্ময়কর, তাই না?? এবার আসুন তার উত্থানের কথা জানি।।
ছোট থেকেই তার মনে একটা কথা ঘুরপাক খেত। “আমার জন্ম হয়েছে বিকলঙ্গতা নিয়ে, পৃথিবী আমার কাছ থেকে তাহলে কি পাবে??” সেই থেক তার শুরু শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করার এক অসম যুদ্ধের। পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় ছিল তার হাতিয়ার। ক্লাস সেভেনে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হওয়া, স্টুডেন্ট কাউঞ্চিলের সাথে সামাজিক কাজ করা যেন তার এগিয়ে চলার শক্তিকেই বাড়িয়ে দিচ্ছিল দিন দিন।
মোমবাতির আলো যেমন চারদিকে ছড়িয়ে পরে তেমনি নিকের নাম ও ছড়িয়ে পড়তে লাগলো চারদিকে। একাউন্টিং এবং ফাইনান্সিয়াল প্লানিং এর উপর ডাবল স্নাতক অর্জন করেন।
এরমদ্ধে শুরু হয় তার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অধ্যায়। ১৯ বছর থেকে তিনি নানা বয়সী, নানা পেশার মানুষের শুনাতে থাকেন কিভাবে মনের জোরে পৃথিবীর সকল প্রতিকুলতা দূর করা যায় সেই গল্প। এভাবেই তিনি পৌঁছে যাচ্ছিলেন হৃদয়ের গভীরে। মানুষ তার কথা থেকে নতুন করে চলার প্রেরনা পেত, হতাশাগ্রস্ত মানুষেরা পেত আশার আলো, সব হারানো মানুষগুলো যেন খুঁজে পেতো আপন ঠিকানা।
এরপর প্রতিষ্ঠা করেন মোটিভেশনাল বক্তৃতা প্রতিষ্ঠান “Attitude Is Altitude”, যেখানে তার বক্তৃতা শুনে অষ্ট্রেলিয়ার তরুন প্রজন্ম ব্যাপক আলোড়িত হয়। তরুন সমাজকে ব্যাপকভাবে সামাজিক কাজে সংযুক্ত করার অনুপ্রেরণা দেওয়ায় ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার “Young Australian of the Year” এ ভূষিত হন নিক।
বক্তৃতা শুরুর পর কেটেছে আরও ১০টি বছর। এর মধ্যে কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছেছে নিকের জীবনের গল্প। ২০টির ও অধিক দেশে বক্তৃতা করেছেন। তার বক্তৃতা শুনার জন্য মানুষ লাইন দিয়ে টিকেট কাটে,কয়েক মাস আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখে।
তার বক্তৃতায় তিনি মানুষের মাঝে জীবনকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেন। নিক তার নিজের জীবনকে তুলে ধরে বলেন যে স্থির সংকল্পই আমাদের বৃহৎ স্বপ্ন পূরনের প্রধান চাবিকাঠি আর ব্যর্থতা হচ্ছে অভিজ্ঞতা, অন্যথায় ব্যর্থতার গ্লানি আমাদের পক্ষাঘাতগ্রস্থ করবে। রসিকতায় ভরা তার বক্তৃতা কিশোর, তরুন, যুবক, বৃদ্ধা সবাইকে করে আলোড়িত। মানুষগুলো যেখানে তার চলার পথের দিশা হারিয়ে ফেলে, ঠিক সেখান থেকেই যেন নিক তাদের ফিরিয়ে দেন আত্মবিশ্বাস।
নিকের দুটি কথা আমার খুব অসাধারণ লেগেছে। “আমি বেঁচে থাকতে ভালোবাসি, তাই আমি সুখী” “আমিই সবচেয়ে সুখী,কারন আমার থেকে স্বাস্থ্যবান আর কে আছে??” একবার এক অনুষ্ঠানে তাকে টেবিল ফেলে দেওয়া হলো নিচে। তারপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন, এবং বললেন, “আমারতো হাত-পা কিছুই নেই, তবুও দেখ আমি উঠতে পারছি। কিন্তু তোমাদেরতো হাত-পা সবই আছে তোমরা সবাই কি এভাবে জীবনে উঠে দাড়াতে পারো??”
সত্যিই অসাধারণ। যুগ যুগ ধরে নিকে’রা আমাদের প্রেরনার উৎস হয়ে থাক।
উনাকে নিয়ে একটা ভিডিও আছে। ইচ্ছে হলে দেখে নিতে পারেন- http://www.youtube.com/watch?v=0DxlJWJ_WfA&feature=player_embedded
-পেজ এডমিন ও ফ্যানদের প্রতি অনুরোধ, “প্লিজ কপি না করে শেয়ার করুন। এতো কষ্ট করে লেখার মূল্য দিন”। সবাইকে পোস্টটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:০৭:১৯ ৫৬০ বার পঠিত