লালমনিরহাটে ইট ভাটার কারনে কৃষি জমি নষ্টো কৃষকরা হতাস!

Home Page » বিবিধ » লালমনিরহাটে ইট ভাটার কারনে কৃষি জমি নষ্টো কৃষকরা হতাস!
বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৭



বঙ্গ নিউজঃ মোঃ শরিফুল ইসলাম। হাতীবান্ধা থানা প্রতিনিধি :লালমনিরহাটে ইট ভাটা গুলোতে কৃষি জমির উপরি ভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে প্রতি বছর শতশত একর কৃষি জমি তার নিজস্ব উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। দিন দিন কৃষি জমি কমে আসছে।
ইট ভাটায় পোড়ামাটির ই্ট তৈরী করতে ব্যবহার হচ্ছে টপ সয়েল। টপ সয়েল কৃষি জমির উপরের দেড় ফিট গভীর মাটিকে বলা হয়। নানা জৈবসার, লতাপাতা পঁচে টপ সয়েল তৈরী হয়। জমির উর্বর অংশ তৈরী হতে শতশত বছর প্রয়োজন হয়। কিন্তু মুহুর্তে এই মূল্যবান টপ সয়েল পুড়ে তৈরী হচ্ছে ইট।
এতে করে বছরে কয়েকশত একর কৃষি জমি তার উর্বরতা ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। টপ সয়েল তুলে নিলে সেই কৃষি জমিতে আগামী ৫০ বছরে কোন ফসল ফলেনা। এভাবে ইট ভাটার জন্য কৃষি উৎপাদন ব্যহ্নত হচ্ছে। পরিবেশ পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে।
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৯টি ইট ভাটা রয়েছে। এসব ইট ভাটায় প্রতিবছর ইট তৈরীর কাঁচা মাল হিসেবে কয়েক শত একর কৃষি জমির উপরি ভাগের উর্বর জমি বা টপ সয়েল প্রয়োজন হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এক বিঘা জমির টপ সয়েল দিয়ে এক লাখ ইট তৈরী হয়।
ইট ভাটার মালিক কৃষি জমির মালিককে এক বিঘা জমির টপ সয়েল ১০-১৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে থাকে। কৃষক নগদ অর্থ পেয়ে টপ সয়েল বিক্রয় করে দেয়। ইট ভাটার মালিকগন তাদের প্রশিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে কৃষি জমি হতে দেড় ফিট গভীর করে টপ সয়েল কোদাল দিয়ে তুলে নেয়। যেসব জমি হতে টপ সয়েল তুলে নেয়া হয়।
সেসব জমিতে ধান, ভুট্টা,গম, শাক সবজি কোন কিছু উৎপাদন হয় না প্রায় ৫০ বছর ধরে। মহিষ খোচা স্কুল এন্ড কলেজের কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক মোঃ আমির হোসেন জানান, ইট ভাটা তিন ভাগে সরাসরি কৃষি জমির ক্ষতি করে থাকে। ভাটা স্থাপিত এলাকার কৃষি জমিতে ইটভাটার ধোঁয়ার কারনে ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়। টপ সয়েল তুলে নেয়ায় কৃষি জমি চিরতরে উৎপাদন হ্রাস পায়।
ইট খোলায় ইট পোড়ানোর সময় মাটি পুড়ে যায় ও তাপমাত্রার কারনে আশে পাশের ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়।
ভাটা মালিকদের সুত্রে জানা গেছে একটি ইট তৈরীতে ১৫০ বর্গ ইঞ্চি উর্বর মাটির প্রয়োজন। এই হিসেবে এক কোটি ইট তৈরীতে ১৫০ কোটি বর্গ ইঞ্চি মাটি প্রয়োজন। যাহা কয়েক একর কৃষি জমি হতে সংগ্রহ করতে হয়। জেলায় ইট ভাটা গুলো স্থাপিত হয়েছে উর্বর কৃষি জমির উপর। যেসব জেলায় খুব সহজে মাটি পাওয়া যায়। সেখানে ইট ভাটা তৈরী হয়েছে।
কৃষি জমি রক্ষায় দ্রুত ইট ভাটা স্থাপনে নিয়ন্ত্রন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার কৃষি জমি রক্ষায় ঘর বাড়ি নির্মানে পূর্ব অনুমতির বিধান করে আইন করেছে। কিন্তু ইট ভাটা প্রতিবছর শতশত একর কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করছে, সেদিকে খেয়াল দিচ্ছেনা।
তবে ইট ভাটার মালিক গণ চুক্তি দেখায় টপ সয়েল তুলে নিলে কোন অসুবিধা নেই। বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলি মাটি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ টপ সয়েল পুরণ হয়ে যায়। কিন্তু পরিবেশবাদীরা এই চুক্তি মানতে নারাজ। তারা দাবি করে। বৈষয়িক আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে জলবায়ুর বিরাট পরিবর্তন হয়েছে।
এখন এই দেশে বন্যা তেমন দেখা যায় না। ফলে পলি পড়ার কোন প্রশ্ন উঠেনা। তবে ইট ভাটা যদি নদী উপকূলে হয় তবে পলি দিয়ে টপ সয়েল পুরন হতে পারে। কিন্তু জেলায় বেশীর ভাগ ইটভাটা উচু জায়গায়। যেখানে বন্যার পানি কোন অবস্থাতে প্রবেশ করতে পারেনা।
ইট ভাটা স্থাপনে ২০১৩ সালের পরিবেশ নিয়ন্ত্রন আইন মানা হচ্ছে না।পরিবেশ নিয়ন্ত্রন আইনে উল্লেখ আছে এলজিইডি সড়কের আধা কিলোমিটার দূরে ভাটা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু জেলায় কোন ভাটা স্থাপনে এই আইন মানা হয়নি। লোকালয়ে, স্কুলের পাশে, পৌরসভা এলাকায় ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা যায়, ইট ভাটা গুলো নিয়ন্ত্রনে কোন ভুমিকা স্থানীয় প্রশাসন রাখতে পারছেনা। ইট ভাটা মালিকগণ প্রশাসনকে উচ্চ আদালতে মামলা রয়েছে তার কাগজপত্র দেখিয়ে বছরে পর বছর ভাটায় ইট তৈরী করে যাচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের সুত্রে জানা যায়, ইট ভাটার কারনে যে পরিমান কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়। ঘর বাড়ি নির্মানে সে পরিমান কৃষি জমি কমে না।
পরিবেশ আইনে উল্লেখ আছে ইট ভাটা স্থাপন হতে হবে নদী কূলবতী চরাঞ্চলে। জেলায় ইট ভাটা নির্মানে আইন মানা হয়নি। জেলায় ২৭টি ভাটায় পরিবেশ মন্ত্রানালয় পত্র দিয়েছে পরিবেশ সার্টিফিকেট দেখাতে কিন্তু দীর্ঘদিনেও ভাটা মালিক গণ পরিবেশ বিষয়ে সার্টিফিকেট দেখাতে পারেনি।
তারপরেও রহস্যজনক ভাবে ই্ট ভাটা গুলো চলছে। ইট ভাটা মালিকগণ সঠিকভাবে ট্যাক্স পরিশোধ করে না। নাম মাত্র ট্যাক্স পরিশোধ করে ভাটায় বছরের পর বছর ইট তৈরী করেই চলছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খান সম্প্রতি এক সেমিনারে বলেন, ইট ভাটা পরির্দশনে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। ই্ট ভাটার মালিকগন উচ্চ আদালতের কাগজ পত্র দেখায়। বিচার বিভাগকে সম্মান জানাতে গিয়ে ভাটা মালিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭:২১:৩১   ৪৫০ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিবিধ’র আরও খবর


ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, সরানো নিয়ে প্রশ্ন
১৮ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক
দেখা হবে কতো দিনে: রাধাবল্লভ রায়
মধ্যনগর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শেখ কামালের জন্মদিন পালন
দেশের ১৫ জেলায় ঝড়বৃষ্টির আভাস
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
ড. ইউনূসের মামলা বাতিল আবেদন শুনানি ১১ আগস্ট
সীমান্ত ভ্রমণের সাতটি দিন ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা ; পর্ব- ৩৪; স্বপন চক্রবর্তী
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার
ইসফাহান নেসফে জাহান

আর্কাইভ