কি শুরু করলে বলো তো? কালো হিট হাতে ছুটলে আমার ফোটানো নয়নতারা আর আকন্দগাছ মারতে? আমার সৃষ্টি বুঝি এতো সহজ মেরে ফেলা? হিট দিয়ে গাছ মারতে ছুটছো, কতোটা আকাট অশিক্ষিত বজ্জাত তুমি, তার প্রমাণ কি এভাবে না দিলেই নয়? তা, সেভাবে পারলে না বলে বাথরুম থেকে মিউরিয়্যাটিকের বোতল নিয়ে ছুটলে সেদিকে। হলো কি? হলো ছাই, এল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। তুমি সেই বোতল সমেত আবার ওই তোমার আস্তানায়। আস্তানাই বটে… সিঁড়ির তলায় তোমার সাধের কুকুরদের সাথে বাস। আচ্ছা, যে ডালমেশিয়ানটার নাম আমার নামে রেখেছিলে, সেটা আছে কেমন? শুনলাম সে আমার নাম অনুযায়ী সৌভাগ্য তোমাদের না এনে দিয়ে, নিজেকে বড়োই অপয়া প্রমাণ করেছে? ইশ, দেখেছো! তখনি বলেছিলাম, আমার নামে নাম রেখো না। স্বার্থে আমার যা কিছু ব্যবহার করবে, সব উলটো ফল দেবে বলেছিলাম তোমায় কতো বার!
আমি ডাইনি, আমি রাক্ষসী… আমি এই, ওই সেই… দেখো কেমন সোজা মেরুদণ্ড আমার। মাটির নিচে থেকে অস্ত্র চালাই। আমার অক্ষরকথার যে প্রাসাদ, সেখানে সিঁদ কাটতে চেষ্টা করে চলেছো ক্রমাগত। তোমার সিঁদকাঠির চলনেই তোমার সর্বনাশের কাব্য রচনা… লিখছো তুমি, শ্রুতিলেখন; আমি কেবল নিরীহ নির্লিপ্তিতে উচ্চারণ করছি সেসব।
টসটসে মাঝরাতের কোলে আরামে নিজেকে ঠাণ্ডা করে শান্ত হলাম। ঠাণ্ডা হবার মানে যেন কি? এ আর তোমাকে কি বোঝাবো, তুমি তো সর্বজ্ঞ। আহা, ডাকো ওই বিক্রমকে। ডেকে বলো দুশোটা টাকা যদি কোনোভাবে ভিক্ষেয় দিতে পারে, তোমরা নাকি বিগত তিন দিনের উপোসী! তোমার কুকুরে পিরিতের দোসর সাফ সাফ হাত তুলে সারেন্ডার? হাত তোলেনি, চার পায়ের কোনো একটা বোধহয় তুললো। পেছনের পা’ই হবে, তোমার মুখে কিছু তরল দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার ছবি দেখা যায়। কি যেন বলেছিলে ওই তাকে? আমার ঊরুসন্ধির নেশায় যেন না মারা পড়ে? তার কুৎসিত মন দেখিয়েছিল সে, তার স্ত্রীর শীতলতা নিয়ে আলোচনা করেছিলো, যদি এই আমি, এই স্বৈরিনী তাকে দাওয়াত দিই। তার এহেন কথার দায়ীও তুমি আমাকেই করেছিলে, মনে পড়ে শত্রুজিৎ? তার প্রতি আমার সহানুভূতিকে কদর্যতার মোড়কে মুড়িয়ে শাস্তি দিতে চাইলে তোমার পৌরুষ প্রয়োগে। ফল, আমার শ্যাম্পু করা চুলের গোড়ায় গোড়ায় টানলাগা যন্ত্রণা, আর কিছু কালচে লাল জমাট রক্তচিহ্ন আমার দুই বৃন্তে, নাভিতে, ঘাড় গলার সন্ধিস্থলে। এতো করলে, অথচ শাস্তির ফাইনাল স্টেপে গিয়ে নিজের শৈথিল্য ঢাকার চেষ্টায় মহান সাজলে। বললে, “যা মাগী, ক্ষমা করলাম।” ক্ষমা? কিসের ক্ষমা? তুমি কি তখনো তোমার পলাতক পৌরুষ বুঝতে পারোনি? বুঝবে কি করে, বেনুবল্লভ? তখনো তো অহল্যাকে চিনতেই পারোনি। ত্রিনেত্রার সেই অহল্যার মতো প্রভা আসবে কিভাবে? এ মিথ্যুক মেয়েছেলে। উল্লাস, জিৎ… চরম।
অভেদ আমার দেখানো আয়নায় নিজেকে সত্যিই কৃমি দেখছে… আরো উল্লাস! আমার অনিচ্ছায় আমার ওপর নিজের হতোদ্যম পৌরুষ ফলাবার শাস্তি এবার সারাজীবন পাবে সে।
পায়েপায়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে ওঠো এরপর, ভিক্ষে দেবে গো, ভিক্ষে? কতোদিন না খেয়ে আছি। ডাকলে, কাঁদলে, নাড়লে কড়া, তবু তাদের পেলে না সাড়া। নামো, নেমে এসো। মনে পড়ছে আমায় বড়ো, তাই না? বড়ো ভালো বাবু ছিলাম, এলেই দুকাপ চা পরিপাটি এগিয়ে দিতাম। তুমি তোমার বিড়ির শ্রাদ্ধ করতে এমনভাবে, যেন কোথাকার রাজামহারাজা অম্বুরীতামাক সেবন করছে। তখন তোমার বাঁকানো নাক, অন্ধকারের চোখ আর শেয়ালের মতো গঠন দেখলে আমার ঘৃণা হতো। কিন্তু, আমি তোমাকে পুষেছিলাম, হালাল করবো বলে। এগিয়ে দিতাম আমার তিল, খাঁজ আর সমস্ত ঘাম। নাভির নিচে থেকে যে রেখা নেমে যেতো আমার অতল রহস্যের ঝিলে, তোমাকে দেখতাম তার বশ হয়ে হাঁপাচ্ছো, লোভে লকলক করে উঠতো তোমার জিভ, ঝিকিয়ে উঠতে গিয়েও ঝিকিয়ে উঠতো না তোমার দাঁত। তোমার দাঁত নিজের কামড় বসাতো ঠিকই আমার স্বাদু মাংসে, কিন্তু তবু তোমার দাঁত ঝিকিয়ে ওঠেনি কখনো। আহ, কি করে ভুলবো, তোমার দাঁতে পানজর্দাগুটখার শিল্প! ঘৃণা কাকে বলে, তা সেই চরম সময়ে বুঝতাম, আর আমাকে তোমার চারপিশাচী ভোগের সময় তিলতিল করে কেড়ে নিতাম তাদের জীবনিশক্তি। অঘোরী রমনী আমি, আমাকে সম্ভোগ প্রক্রিয়া না জানলে, তুমি নয় আমি খাবো তোমাকে। জানতে দিইনি। আমাকে পাঠানো হয়েছে এবারও তোমার বিনাশসাধনের জন্য।
শয়তানগুরুর প্রিয়তমা সাধিকা, তোমার মা… তোমারও সাধনসঙ্গিনী, নাম শিবানী। উলঙ্গ শরীরে নিজের ঠোঁট তোমার সর্বাঙ্গে স্পর্শ করিয়ে প্রতিদিন নানা মন্ত্রে তোমার শরীর জারিত করে পাঠাতো আমার কাছে। পাঠাতো, হ্যাঁ, পাঠাতো। ওই শিবানীকে আপনি বলবো না। থুথু দিই তার অস্তিত্বেও। তুমি ঝর্ণার তলায় আমার সাথে লিপ্ত হতে, তোমার শরীর চুঁইয়ে নেমে আসতো মন্ত্রাভিষিক্ত জল। কৌশলে আমার ভেতর সমস্ত মন্ত্র প্রবেশ করাতে এভাবে। আর আমি, ভেতরে ভেতরে গলা ফাটিয়ে হাসতাম, আর বলতাম, “আয়! দিতে থাক! জেনে রাখ, আমি জীবন্ত কবরখানা। তোদের সব আমার ভেতর পুঁতে ফেল।”
আর কাকে কাকে ডাকলে, অল্প কিছু টাকা দিয়ে যেতে? আমি তোমায় পরিপাটি খেতে দিতাম, সরু চালের গরম ভাত, ডাল, সব্জী, মাছ, মাংস। সেসব আর জোটে না তোমার। এখন তুমি জিগোলো হতেও পারবে না। কিভাবে তৃপ্ত করবে তুমি চুড়ি পরা, নাকে নথ বাবুদের? সে শক্তি তো কবেই কেড়ে নিয়েছি তোমার। এখন তোমার চেনা সেই চিত্তানন্দ ডাক্তারও আর তোমার এমন হৃতপৌরুষ অবস্থা থেকে বার করতে পারবে না। এবার বুঝেছো, আমাকে তোমার বাকি শিকারদের সাথে এক করে কতো বড়ো কফিনে নিজেকে নিজেই বন্দী করেছো?
যাদবগড়ের মক্ষীরানিও তোমার বুভুক্ষা মেটাবার রসদ দেয়নি। দেয়নি তোমার সেই পাতানো বোন। কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, জানো? এতো কষ্ট, যে বসে বসে আইসক্রীম খেতে হচ্ছে আমায়, বুকের জ্বলুনি কমাতে। ভাবছি, তোমার এহেন কষ্টে বিবাগী হয়ে চৈত্র সেলে গিয়ে বেশ কিছু অদরকারী জিনিস কিনে সঞ্চয় কমিয়ে ফেলি নিজের। গতকাল কেনা নতুন পর্দাগুলো ভাবছি জানলায় দরজায় পয়লা বৈশাখের আগেই লাগিয়ে ফেলি।
আসছে পাঁচই, তোমার আমার বাইশ মাস। বাইশে আছে দুটো দুই। দুই আর দুই চার। বার্ষিকীর মতো কি মাসিকী বলা যায়? যায় কিনা জানি না, শুভ বাইশতম মাসিকী বলতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। ইচ্ছে করলো, বলেই দিলাম। আসলে সেদিন আবার তোমার কাঠগড়ায় দাঁড়াবার দিন কিনা, তাই আমি আরো উল্লাসী।
তোমার অশোকনন্দিনী খিদেয় কাঁদছে। ভিক্ষে চাইছো আমার কাছে। কানে গরম শিশে ঢেলে দিচ্ছো তোমরা আমার। আমায় অন্নপূর্ণা নামে ডাকছো, বলছো, দুটো খেতে দে, কতোদিন খাইনি। আমার ওই ডাক পোষায় না। আমি মাগী ডাকেই সাড়া দিই। তোমরা আমায় জিজ্ঞেস করছো, আমি তো খুবই নরম, দয়ার শরীর… তবে কি করে এতো কঠিন হচ্ছি? আমার কাছে ভিক্ষেয় আমার সন্তানকে চাইছো। সে বয়ে নিয়ে যাবে সামান্য খাবার, সে বয়ে নিয়ে যাবে আমার সৌভাগ্য তোমাদের কাছে। ভুল করছো। আমার সন্তানকে তোমাদের আশেপাশেই রেখে দিয়েছি, তোমাদের শাস্তির রায় শুনিয়ে। জিজ্ঞেস করেছিলে একদিন ব্যঙ্গ করে, খিদে পেলে আজকাল কার পাশে শুই? খিদের কথা মেয়েমানুষের বলা বারণ, মানি না। খিদে পেলে সৎ ভাবে খাই। খাই নিজের অর্জিত খাবার, নিজের অধিকারের খাবার।
পবিত্র শ্মশানে বসে আছি দেখো। শক্তিরূপেন সংস্থিতা। যে গাছের ছায়ায় আছি, তার থেকে ঝরে পড়ে তারার মিঠে তেজ। আমি মাখি, এ আমার প্রাপ্য। আমার সাথে আমার গর্ভগৌরব। তোমাদের কালো প্রদীপ ঘিরে ধরতো যে লাল আর নীল গুঁড়ো, তারা সোনালি হয়ে গেছে কবেই।
করাতকলের প্রহর গোনার শ্বাস
ভেতর ভেতর পুড়ছে অমলতাস…
(21/03/2017)
বাংলাদেশ সময়: ০:৫৩:৫১ ৪৪৫ বার পঠিত