বঙ্গ-নিউজ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৩৫টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী বলছেন, এর সবই জনগণের সামনে প্রকাশ করবে সরকার।
শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত সফরের সম্ভাব্য চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।
সফরে যে সব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে তার বেশিরভাগই বর্ডার হাট স্থাপন, তথ্য ও সম্প্রচার, বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্যাটেলাইট ও মহাকাশ গবেষণা, ভূ-তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ভারত কর্তৃক প্রদেয় লাইন অব গ্রিড (এলওসি), কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্পর্কিত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
৩৫ টির মধ্যে কতটি চুক্তি, কতটি সমঝোতা স্মারক সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রতিরক্ষা বিষয়ে কোনো চুক্তি হচ্ছে কি না- এ প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, “যখন হবে তখন দেখতে পাবেন, আমরা সবাইকে জানিয়ে দেব। এখানে গোপন-টোপন করার কিছু নেই।”
এই সফরে সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে। বিএনপি এই চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি করছে, সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব ‘বিকিয়ে’ দিতে চাইছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যেগুলো বলা হচ্ছে, আমাদের নিন্দুকরা যেগুলো বলছেন এগুলোর মধ্যে কিচ্ছু নেই, দেখতেই পাবেন যথাসময়ে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।”
প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চুক্তি না কি সমঝোতা স্মারক হবে- এ প্রশ্নেও তিনি বলেন, “হলেই বুঝতে পারবেন, সব তো দেখতেই পারবেন। কোনো কিছু গোপন করার কিছু নেই, এক্কেবারে সর্বসম্মূখে প্রকাশ করা হবে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী বিরল-রাধিকাপুর রুটে মালামাল পরিবহনকারী রেল চলাচল, খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
অভিন্ন পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনায় তিস্তা কতটুকু গুরুত্ব পাবে- এ জিজ্ঞাসায় মন্ত্রী বলেন “দুই দেশের সম্পর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, এর মধ্যে একটা হল এটা হল না, এতে কিছু যায় আসে না।
“এটা দেখতে হবে যে মূল ধারাটা কোথায় যাচ্ছে। আমার মনে হয় তার মধ্যে একটা হবে কি হবে না বা কি হবে এটা এখন আমরা কিছু বলতে চাই না।”
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি পাঁচ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে ভারত। ভারতকে কোনো সুবিধা দেওয়ার আগে এ্ চুক্তিটি আদায়ের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। পাশাপাশি সীমান্তে হত্যা বন্ধের পদক্ষেপও চাইছে তারা।
সীমান্ত হত্যা নিয়ে কোনো আলোচনা হবে কি না- এ প্রশ্নে মাহমুদ আলী বলেন, “অতি সম্প্রতি বৈঠক হয়ে গেল। আপনারা জানেন দুই পক্ষই খুব সিরিয়াসলি চেষ্টা করছে যাতে এটা (সীমান্ত হত্যা) একদম বন্ধ করা যায়, শেষ করা যায়। কাজেই এটা তো নতুন করে কিছু বলার নেই।”
এই সফরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের যেসব সেনা শহীদ হন, তাদের মরণোত্তর সম্মাননাও দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় সেনাসদস্যদের আত্মত্যাগকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবে।
দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভানেত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকটি হবে অতিথি ভবন হায়দ্রাবাদ হাউসে। বৈঠক শেষে দুই দেশ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করবে।
মাহমুদ আলী বলেন, বৈঠকে দুই দেশের পারস্পারিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন- দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, আন্তঃযোগাযোগ তথা কানেকটিভিটি, উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, পদ্মা (গঙ্গা) ব্যারেজ নির্মাণ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানবসম্পদ রোধ প্রভৃতি অধিক গুরুত্ব পাবে।
আগামী ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি বিজনেস ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলও তাতে অংশ নেবে।
মাহমুদ আলী বলেন, “বিনজেস ইভেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের চিত্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছে তুলে ধরা হবে। তেমনি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে।”
ভারত সফরে প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৪০ জন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকবেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সুসম্পর্ক বর্তমানে বিশেষ উচ্চতায় অবস্থান করছে মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক গভীরতর হওয়াসহ সার্বিকভাবে এই সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন উদ্যোগ গৃহীত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০:৪৮:২১ ৩১৭ বার পঠিত